আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাজনৈতিক চরম হতাশা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিবৃতি দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, ‘হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ধারক-বাহক ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক বিএনপি নেত্রীর বিবৃতি তাদের দীর্ঘ রাজনৈতিক হতাশার চরম বহিঃপ্রকাশ।’

শনিবার বিকালে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

বৃহস্পতিবার রাতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হন খুলনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফুলতলা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠু। এর প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের হত্যা করে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা কব্জায় রাখাই আওয়ামী রাজনীতির সংস্কৃতি। এজন্য সরকার বিএনপির বলিষ্ঠ নেতাকর্মীদের বেছে বেছে হত্যার মিশন নিয়ে কাজ করছে।’

খালেদার বিবৃতির প্রতিবাদে পাল্টা বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) দলের নেতা-কর্মীদের রক্তের ওপর ভর করে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী জঙ্গি ও যুদ্ধাপরাধীদের সাথে নিয়ে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। কিন্তু বাংলার মানুষ তার এই দিবাস্বপ্ন কখনোই সফল হতে দেবে না।’

বিএনপি নেত্রীর দেয়া বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র ও বন্দুকের নলের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। এদেশের মানুষ এখনো সামরিক স্বৈরশাসক জিয়া ও বিএনপির দুঃশাসনের কথা ভুলে যায়নি, গণতন্ত্রের নামে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বেগম জিয়ার পুত্র তারেক জিয়ার প্রতিষ্ঠিত হাওয়া ভবনের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব শাহ এএমএস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, মমতাজ উদ্দিন, মঞ্জুরুল ইমাম, সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বালু, অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীসহ ২১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা, খুন ও ধর্ষণের ভয়াল স্মৃতি এখনো গণতন্ত্রকামী মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতাদের হত্যার চেষ্টায় সেদিন আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা ও অসংখ্য নেতা-কর্মীকে পঙ্গু করে মানবতাকে যারা কলঙ্কিত করেছিল তাদের মুখে গণতন্ত্র, সুশাসন সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছু নয়।’

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী তার বিবৃতিতে দলীয় নেতাকর্মীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ‘উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে’ চাপাতে চেয়েছেন। বিএনপির গত আট বছরে কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বিএনপি নেত্রী দেশবাসী ও দলের নেতা-কর্মীদের জন্য কিছুই করেননি। রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে তিনি দেশব্যাপী যে ভয়াবহ খুন, অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছেন তা মূলত নিজের ও পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি ধামাচাপা দিয়ে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করেছেন। তাই সাধারণ মানুষ তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি।’

বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী তাদের ক্ষমতায় থাকাকালে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদের বীজ বপন করে তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে দেশের ৬৩টি জেলায় একই সময়ে পাঁচ শতাধিক সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জঙ্গিবাদের যে বিষফোঁড়া তৈরি করেছিল, জাতিকে এখনো তার খেসারত দিতে হচ্ছে। এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তির পৃষ্ঠপোষকরা এখনো পর্দার অন্তরালে থেকে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত। শেখ হাসিনার সরকার যখন সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে জঙ্গি নির্মুলের অভিযান চালায় তখন বেগম জিয়া এই সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী জঙ্গি সন্ত্রাসীদের জন্য মায়াকান্না করে তাদের রক্ষার চেষ্টা করেন। যার কারণে কানাডার আদালত ইতিমধ্যেই দুবার বিএনপিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে রায় দিয়েছে।’

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়েও যিনি কালো টাকা সাদা করেন, দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে বারবার সময় চেয়ে কালক্ষেপণের কৌশল নেন তার মুখে সুশাসন ও নীতির কথা এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে না।’

বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না, আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল। তাই জাতির পিতার হত্যার বিচার যেমন প্রচলিত আইনে হয়েছে, তেমনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সম্পন্ন হচ্ছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, খুন হত্যা করে পার পাবার দিন শেষ। বিচারহীনতার সেই যুগ আর নেই।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আদালতে রায়ে ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি নেত্রীকে বলবো, ধৈর্য ধরুন, ইতিবাচক রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসুন। নিজেদের অপকর্মের জন্য বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চান। নতুবা এই অপরাজনীতির কারণে আপনাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব আরও সঙ্কুচিত হবে।’

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031