মুরগির মাংস তো এত নরম তুলতুলে নয়।নরম তুলতুলে খেতে মজা চিকেন বল, চিকেন নাগেটস, চিকেন সসেজ। কিন্তু এসব চিকেন বল, চিকেন নাগেটস ও চিকেন সসেজ কি দিয়ে তৈরী একটুও কি ভেবেছেন। কেনই বা এত নরম তুলতুলে মনে প্রশ্ন জেগেছে কখনো।

চিকেন নাগেটস ও চিকেন সসেজ আসলে মুরগির মাংস নয়, মুরগির নাড়িভুঁড়ি দিয়ে তৈরী হচ্ছে । যা সহজেই মিলছে চট্টগ্রাম শহরের সড়ক ও অলিগলির মোড়ে গড়ে উঠা ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে। বেচাবিক্রিও বেশ ভাল। কারন দাম কম।

চিকেনের নামে তৈরী এসব খাবার বেশি খাচ্ছেন উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণিরা। বিশেষ করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা। অবশ্যই মুরগির মাংসের কিমা দিয়ে তৈরি ভেবেই এসব খাচ্ছেন তারা।

কিন্তু বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, সুপারশপে ভাজা বা প্যাকেটজাত এসব চিকেন বল, চিকেন নাগেটস ও চিকেন সসেজ তৈরী হচ্ছে মুরগির নাড়িভুঁড়ি দিয়ে।এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক জুবায়ের আহমদ জানান, রমজান মাসের শেষের দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার, জামালখান, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, মুরাদপুর, কাজীর দেউরি, আন্দরকিল্লাসহ বিভিন্ন সড়কের মোড়ে বেশ কয়েকটি ফাস্টফুডের দোকানে অভিযান চালানো হয়। এতে চিকেনে বল, চিকেন নাগেটস ও চিকেন সসেজসহ বেশ কয়েকটি খাবার পণ্য মুরগির নাড়িভুঁড়ি দিয়ে তৈরীর প্রমাণ পাওয়া যায়। আর এসব পণ্য বিক্রীর দায়ে বিক্রেতাদের জরিমানা ও সতর্ক করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফাস্টফুডের কর্মীরা চিকেন বল, সসেজ আর চিকেন নাগেটসে মুরগির নাড়িভ‚ড়ি বেøন্ড করে মিশিয়ে দেয়। এর জন্যেই চিকেন বল ও সসেজের ভেতরটা মাংসের তুলনায় বেশি নরম থাকে। আর চিকেন নাগেটসে মচমচে ভাবটা আনতে নাকি মুরগির নাড়িভ‚ড়ি বেøন্ড করে মিশিয়ে ভাজা হয়।

মুরগির মাংসের কথা বলে ভোক্তাদের নাড়িভুঁড়ির কিমার খাবার খাওয়ানো হচ্ছে-এ প্রসঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, এ ধরণের কিছু যদি হয়ে থাকে, তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এই কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, কেউ যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমাদের কাছে করেন। তাহলে আমরা দ্রæত ব্যবস্থা নেব। খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়ে কাজ করছি।

এদিকে চিকেন বল, নাগেটস আর সসেজে নাড়িভুঁড়ির কিমা ব্যবহার করা হয়- এ তথ্য জানতে পেরে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন সচেতন মহল। মুরগির নাড়িভুঁড়ি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেছেন।

তারই ভিত্তিতে এ বিষয়ে কথা হয় পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খুরশিদ জাহানের সঙ্গে। তিনি বলেন, খাবার হিসেবে গরুর নাড়িভুঁড়ি আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়। এটা খাওয়ার আগে কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রান্না করা হয়। এর ফলে তা জীবাণুমুক্ত হয়। কিন্তু মুরগির নাড়িভুঁড়ি যদি ভালো ভাবে সেদ্ধ না করে। জীবাণমুক্ত না হয়। প্রসেসিংয়ে কোনো ফাঁকি থাকে, তাহলে শরীরের জন্য তা ক্ষতিকর হবে।

শারীরিক ক্ষতি না হলেও মানসিকভাবে অনেকের কাছেই মুরগির নাড়িভুঁড়ি গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। তাই মুরগির আইটেমে মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়িসহ কোন কোন অংশ ব্যবহার করা হয়েছে, সেই স¤পর্কে জনসাধারণকে ¯পষ্ট ধারণা দিতে হবে। প্যাকেটজাত খাবারে এটা সহজেই করা সম্ভব। আবার ফাস্টফুডের দোকান ও রেস্তোরাঁগুলোয় এ ধরনের তথ্য ভোক্তার সামনে তুলে ধরতে হবে। তথ্য আড়ালে রেখে বা গোপন করে কোনো কিছু খাওয়ানোর প্রবণতা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন ড. খুরশিদ জাহান।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031