বনানী এলাকায় স্টিলের রেলিং বা বেড়া দেয়া হয়েছে ফুটপাতে পথচারীদেরকে চলাতে বাধ্য করতে। অথচ এই বেড়াই পথচারীদেরকে ফুটপাতের বদলে ঝুঁকি নিয়ে মূল সড়ক ধরে চলতে বাধ্য করছে।
পুলিশ বলছে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজের উদাহরণ এটি। রাস্তায় মানুষের চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ছাড়ার গাড়ির গতি যাচ্ছে কমে। পাশাপাশি যান চলাচলে শৃঙ্খলা রাখাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিমানবন্দর মোড় হয়ে মহাখালীর দিকে আসা গাড়িগুলো যেসব মোড়ে যাত্রী উঠানামা করে তার মধ্যে অন্যতম বনানীর কাকলী মোড়। বিপুল সংখ্যক যাত্রী এই মোড়ে বাস থেকে উঠানামা করে।

কাকলী মোড়ে বরাবর সিগন্যালে বিপুল সংখ্যক গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে বলে যাত্রীরা মোড়ের আগেই বাস থেকে নেমে হেঁটে চলেন। কিন্তু তারা সড়ক থেকে ফুটপাতে উঠার সুযোগই পান না। কারণ ফুটপাতে বেড়ার ফাঁকে পথচারী উঠানামার কোনো কোনো ব্যবস্থাই রাখা হয়নি।
এই মোড়ে সিগন্যাল ছেড়ে দেয়ার পর গাড়িগুলো দ্রুতগতিতে চলতে শুরু করে আর এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে চলতে বাধ্য হয় পথচারীরা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

কেউ যদি সেখানে উঠতে চান তাহলে গিয়ে উঠতে হবে কাকলী মোড় থেকে অন্তত ২০০ মিটার দূরের হামিদুল্লাহ খান সড়কের মোড় থেকে। আবার কাকলী মোড়ে গিয়েও তিনি নামতে পারবেন না। কারণ, এই মোড়ের বদলে বেড়াটি গিয়ে নামানো হয়েছে গুলশান-২ এর দিকে এগিয়ে গিয়ে অনেকটা সামনে।
কাকলী মোড় পেরিয়ে চেয়ারম্যান বাড়ির দিকের সড়কেও একই অবস্থা করেছে সিটি করপোরেশন। সেখানেও মানুষের উঠানামার কোনো উপায় রাখা হয়নি। ফলে বাস থেকে নেমে সড়কে হেঁটেই চলছে পথচারীরা। আর ফুটপাত পড়ে থাকছে ফাঁকা।

এই সড়কের বাঁ পাশ দিয়ে চলাচল করা মোটরবাইক ও সিএনজি অটোরিকশা চালকরা প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাত ছেড়ে সড়কের উপর দিয়ে চলাচল করা পথচারীদের উপর গাড়ি উঠিয়ে দিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও ছোট বাচ্চাদের। অনেকেই আবার সময় বাঁচাতে রেলিং টপকে পার হচ্ছেন। এতে করে এই সড়কে নিত্যদিন বিশেষ করে মোটর সাইকেল চালকদের সঙ্গে পথচারীদের বাদানুবাদের ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন পথচারীরা।
কাকলী সিগনালের মোড়ে চশমা বেচাকেনা করেন সাইফুল ইসলাম। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন মাস আগে সড়কের ধারের ফুটপাতে সিটি করপোরেশন নিরাপত্তার জন্য রেলিং দেয়। কিন্তু রেলিং দেওয়ার সময় সড়ক থেকে ফুটপাতে উঠা-নামার জন্য কোন স্থানেই ফাঁকা জায়গা রাখা হয়নি। ফলে পথচারীদের অনেক দূর ঘুরে যেতে হয় বলে সময় বাঁচাতে প্রধান সড়কের উপর দিয়েই চলাচল করতে হয়।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী পারভেজ হোসেন বলেন, ‘ফুটপাতে রেলিং দেওয়ার আগেই ভালো ছিল। তখন সবাই ফুটপাত দিয়েই চলাচল করত। কিন্তু সিটি করপোরেশন অপরিকল্পিতভাবে রেলিং দিয়ে সাধারণ পথচারীদের উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি করেছে।’
বনানী-কাকলী মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পথচারী চলাচল নিরাপদ করতে আমরা ওভারব্রিজ ব্যবহার, ফুটপাত ব্যবহারসহ নানা বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতনতার চেষ্টা করছি। কিন্তু অপরিকল্পিত ফুটপাত রেলিংয়ের ফলে আমাদের সেসব সচেতনতামূলক কাজগুলো ভেস্তে যাচ্ছে।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সিটি করপোরেশন যে পরিকল্পনা নিয়ে ফুটপাতে রেলিং বসিয়েছে সেটি কার্যকর কোন ভূমিকা রাখছে না। বরং আমাদের কাজের চাপ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আগে সাধারণ মানুষ ফুটপাত ব্যবহার করলেও এখন ফুটপাত ছেড়ে প্রধান সড়ক দিয়েই চলাচল করছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মঞ্জুর ই মওলা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এমনটা হওয়ার কথা না। ফুটপাতে বেড়া দিলেও পথচারীরা যেন উঠানামা করতে পারে, সে জন্য জায়গা রাখা হয়। এই সমস্যাটা কোথায় হয়েছে সেটা আমরা জানতে চাইবো।’
এই কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে আরও কথা বলতে করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
