বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে সুপ্রিম কোর্টের জন্য আলাদা সচিবালয় করবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত নিম্ন আদালতের সমস্ত নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের ওপর অর্পিত হবে না ততদিন সম্পূর্ণভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব হবে না। এখনো নিম্ন আদালতের বিচারকরা আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকেন। আমরা মনে করি, বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় প্রয়োজন। সেটা হলেই বিচার বিভাগ সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন হবে। আইন মন্ত্রণালয় বা প্রশাসন বা সরকারের ওপরে আমাদের বিচার বিভাগকে আর নির্ভরশীল হতে হবে না। আমরা ক্ষমতায় গেলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে সুরক্ষা করার জন্য সংসদের মাধ্যমে আইন করে সুপ্রিম কোর্টের জন্য আলাদা একটা সেক্রেটারিয়েট প্রতিষ্ঠা করবো। জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন আয়োজিত ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরো সুরক্ষিত হবে। দেশের মানুষ এখন প্রত্যাশা করে তারা আইনের শাসন দেখবে। সুপ্রিম কোর্ট একটা ব্রাইভরেন্ট, একটা ফাংশনাল, একটা অ্যাফেক্টিভ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করবেন- এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। সাবেক এ আইনমন্ত্রী বলেন, বিচারবিভাগ পৃথক্‌করণ করা হলেও সত্যিকার অর্থে এখনো পৃথক্‌করণ করা সম্ভব হয়নি। আগে আমলাদের মধ্যে প্রশাসন থেকে যারা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করতেন, তাদের চাইতে এখন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা অনেক নিম্নস্তরের পরিচয় দেন। সরকার ও রাজনৈতিক প্রভাবে তারা (জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) বিচারের ক্ষেত্রে একেবারেই নমনীয় হয়ে যান। সেজন্য মাঝেমধ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন- বিচার বিভাগ প্রশাসনের কাছে জিম্মি, মাঝে মাঝে তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেন। এই ক্ষোভের পেছনে সবচেয়ে বেশি কাজ করে বিবেক। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ’৭২ সালের সংবিধানের কথা বলতে ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতার লজ্জা হওয়া উচিত। কারণ সেই সেই সংবিধানকে আপনারাই তো খণ্ড-বিখণ্ড করেছেন। ডিফাই করেছেন, ডিফেইজ করেছেন, ট্রাংকেট করেছেন। আপনারা কোন্‌ মুখে ‘৭২ সালের সংবিধানের কথা বলেন? তিনি বলেন, আপনারা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন। ’৭২ সালের সংবিধানকে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে আপনারা কী করেছিলেন? ভুলে গেছেন। সেখানে লিখেছিলেন- কোনো ইমপিচমেন্টও হবে না, কোনো সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল না, প্রেসিডেন্ট একাই যেকোনো বিচারপতিকে অপসারণ করে দিতে পারবেন। তারাই এখন বলেন- আমাদের ’৭২ সালের সংবিধান লঙ্ঘন করে এই রায় দেয়া হয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ’৭২ সালের সংবিধান একেবারে আগের মতো রয়েছিল এবং সেটি বজায় রাখা হয়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে এই রায় দেয়াটা ঠিক হয়নি। যেসব জ্ঞানপাপী, বাস্তববিবর্জিত ব্যক্তি এসব কথা বলেন তাদের ভালো করে জানা উচিত, ’৭২ সংবিধান আর নেই, ছিল না। যারা রচনা করেছিলেন তারাই এই সংবিধানকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেশে সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে আপনারা এই সংবিধান সংশোধন করেছিলেন। মওদুদ আহমদ আরো বলেন, কাদের হাতে আমরা বিচারকদের অপসারণের দায়িত্ব দিতে চাই? এই সংসদ? যারা অধিকাংশই নির্বাচিত নন। আমাদের দেশে গণতন্ত্র এখনো ম্যাচুরিটি অর্জন করতে পারেনি। ইট ইজ এ ইমম্যাচুর ডিমোক্রেসি। তিনি বলেন, সরকার চেয়েছিলো ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগকে করায়ত্ব ও নতজানু করবে। যাতে করে উচ্চ আদালতও নিম্নতম আদালতের মতো তাদের ভয় পায়, কথা শুনে। যেন তারা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো রায় না দেয়। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুুর রহমান মান্না বলেন, সরকার বলেছে- ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মধ্য দিয়ে আমরা প্রমাণ করলাম দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে। তাহলে আবার পুরো রায় দেখে আপিল করবেন কিনা সে অপেক্ষা করছেন কেন। আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল বললেন, এই রায়ে আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছি। পুরো দেশ আনন্দিত হয়েছে আর উনি হতাশ হয়েছেন কেন? তার মানে জ্বালা সইতে পারছেন না। এই জ্বালা শেষ পর্যন্ত কোথায় যাবে সেটা অন্য কথা। মান্না বলেন, ষোড়শ সংশোধনী যতটুকু জাজমেন্ট হয়েছে সেটা দিয়ে সরাসরি এই পার্লামেন্টের ওপর চপোটাঘাত করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এটা করেছে বলে তাদের ধন্যবাদ দিতে হবে। চেষ্টা করতে হবে যাতে এই প্রক্রিয়াটা অব্যাহত থাকে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি পথনির্দেশনা। এই রায়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। আমি বলবো, অনতিবিলম্বে বিচারক নিয়োগের একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। আমি দাবি করবো, এই নীতিমালা প্রণয়নের আগে যেন কোনো বিচারক নিয়োগ দেয়া না হয়। সংগঠনের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বক্তব্য দেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031