বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের প্রতি আবার সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, এখনও সময় আছে। আসুন আলোচনা করুন, কথা বলুন। বাংলাদেশের মানুষ এখন একটা নির্বাচন চায়। মানুষের প্রত্যাশা সেই নির্বাচনটা হোক একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক- এটাই আমরা চাই। সেভাবে ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় ঠিকই পালাবার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল-এর উদ্যোগে ‘আর্থিক সহায়তা প্রদান’ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। মির্জা আলমগীর বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সেজন্য আমাদের তরফে একটি সহায়ক সরকারের কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারকে বলব, আসুন কথা বলুন। কী ভাবে সেই সরকার গঠন করা যেতে পারে। কীভাবে আমরা আগামী নির্বাচনটা সকলে অংশগ্রহন করে জনগনের ভোটের অধিকারকে নিশ্চিত করতে পারি। জনগণ যাকে চাইবেন, তারাই সরকার গঠন করবেন-এটাতে আসুন। মির্জা আলমগীর বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান হলে দেশের, জনগনের, সবার মঙ্গল হবে। আওয়ামী লীগ যে ভয় পেয়েছে পরাজিত হলে পালাবার পথ খুঁজে পাবে না। এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারি বাংলাদেশের জনগন আপনাদের সব কিছু দেখবে এবং দেশে শান্তি বিরাজ করার পরিবেশ তারা সৃষ্টি করবে। অন্যথায় ঠিকই পালাবার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না। খালেদা জিয়াকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে সমালোচনা করে ক্ষমতাসীনদের আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখতে বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া পালিয়ে গেছেন দেশ থেকে- এটা কোন আহম্মকও বিশ্বাস করবে না। আমরা বলতে চাই, এ সমস্ত কথা বলে, মিথ্যা প্রচারণা করে আর দেশের ক্ষতি করবেন না। আজকে যারা এই ধরণের কথা বলছেন। তাদের নিয়ে আমরা ইউটিউবে বিভিন্নরকম ছবি দেখতে পাই। আমি সত্য-মিথ্যা বলতে পারবো না। কিন্তু দেখা যায় তারা কি ধরনের বিবৃতি দিচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। আমরা শুনেছি, জেলে যারা ছিলেন ওই সময়ে, তারা কান ধরে উঠ-বস করে বলেছিলেন আর কোনদিন রাজনীতি করবো না। সুতরাং এই ধরণের কথা বলার আগে প্রত্যেকের উচিৎ আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখা। মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা ওবায়দুল কাদেরকে একজন সজ্জ্বন রাজনীতিবিদ মনে করি। সম্ভবত তিনি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। সাহিত্য ও নাট্যচর্চায় তার বিশেষ পারদর্শীতা ছিলো। আমি সেই কারণে তার মধ্যে একটা পরিশালিত যে সংস্কৃতি সেটার প্রতিফলন দেখার প্রত্যাশী ছিলাম। কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে উনি এমন ভাষায় কথা বলছেন যে ভাষায় তার কাছ থেকে কথা শুনিনি। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ওয়ান ইলেভেনের সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে খালেদা জিয়ার আপোষহীন ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্যে যদি কারও সত্যি বেশি অবদান থাকে তিনি খালেদা জিয়া। তিনি বন্দুকের নল নিয়ে ক্ষমতায় আসেননি, তিনি সোনার চামচ মুখে নিয়েও ক্ষমতায় আসেননি। রাজপথে ছাত্র-জনগনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে তিনি এসেছেন। অনুষ্ঠানে বিরোধী আন্দোলনের সময়ে ক্ষমতাসীন দলের হামলায় নিহত রংপুর যুবদলের নেতা মোশারফ হোসেন পদ্ম, খুলনার নজরুল ইসলাম, ছাত্রদলের পঙ্গু নেতা ময়মনসিংহের মেহেদি হাসান, পাবনার ছাত্রদলের মাসুদ বিল্লাহ ও সিলেটের মো. বদরুল আলমের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক অনুদান দেয়া হয়। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে গঠিত জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল এ পর্যন্ত বিগত আন্দোলনে ‘নিখোঁজ’ ও ‘খুন’ হওয়া ৮৭ পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের সদস্য জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের সভাপতিত্বে ও ফেরদৌস মুন্নার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, ইতালী বিএনপির মান্নান হীরা, হেল্প সেলের সদস্য ও ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান চৌধুরী পাপ্পু, মাকসুদ আহমেদ খান রুবেল, ছাত্রদলের পঙ্গু নেতা বদরুল আলম ও মাসুম বিল্লাহ বক্তব্য দেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031