৫ ঘন্টার ব্যাবধানে ফের ৩ লাখ ৪০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। যার মুল্য ১০ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। নাফ নদীতে রাতে সীমান্তরক্ষী বিজিবি জওয়ানরা অভিযান চালিয়ে একের পর এক ইয়াবার চালান ও পাচারকারীকে আটক করছে। ৩১ জুলাই ভোর রাত ২ টার দিকে হ্নীলা ইউনিয়নের মোচনী ছুরি খালের উত্তর পাশের নাফ নদীর কেওড়া বন থেকে ইয়াবাগুলো উদ্ধার এবং একটি নৌকা জব্দ করে। এসময় পাচারকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করতে পারেনি বিজিবি টহলদল।

এদিকে অপর একটি অভিযানে রবিবার দিবাগত রাত ৯ টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যং পাড়াস্থ নাফ নদীর কিনারা থেকে ২২ হাজার ৪৮৬ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় তিন মায়ানমার পাচারকারীকে আটক করেছে এবং একটি নৌকা জব্দ করা হয়েছে। ধৃতরা হচ্ছে মায়ানমারের মংডু থানার নাইটর ডিল গ্রামের মোঃ ইউনুছ আলীর পুত্র মোঃ আবু ফয়াজ (৪০), মোঃ আব্দুর রশিদের পুত্র মোঃ শফিক (২০) ও নোয়াপাড়া গ্রামের মোঃ ফজল আহম্মেদের পুত্র মোঃ রফিক (২৫)।

অপরদিকে মায়ানমার থেকে প্রতিদিন সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বানের স্রোতের মতো ঢুকছে ইয়াবা। তবে বেশীর ভাগ ইয়াবা আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করছে বলে সুত্রে জানা গেছে।

এসব ইয়াবা সড়কপথে বিভিন্ন কায়দায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে পাচারকারীরা।

এমনকি রোগী বহনের এ্যামবুলেন্স করে গত শনিবার রাতে ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে উখিয়ায় আটক হয়েছে পাচারকারীরা। ধৃতরা হচ্ছে টেকনাফের মোছনী নয়াপাড়া ক্যাম্পের আর টিএম ইন্টারন্যাশনাল অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও নয়াপাড়া গ্রামের মৃত আবুল হোসনের ছেলে বাদশাহ মিয়া (৩৫) ও চট্রগাম জেলার সাতকানিয়া থানার মধ্যম মাদ্রাসা গ্রামের হাজী কালু মিয়ার ছেলে মাহমুদুল হক রানা (৩২)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানায়, মোছনী গ্রামে পিতা-পুত্রের ইয়াবা পাচার সিন্ডিকেট রয়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনী তৎপর হওয়ায় গত দুয়েক সপ্তাহে ওই সিন্ডিকেটের কয়েক লাখ ইয়াবা ইতিমধ্যে আটক হয়েছে।

ওই সিন্ডিকেটের অন্যতম হচ্ছে ধৃত অ্যাম্বুলেন্সের চালক বাদশা মিয়া। এছাড়াও গত ১৮ জুলাই সিন্ডিকেটের দুই মায়ানমার নাগরিককে ইয়াবাসহ আটক করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ অপর পাচারকারীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। উক্ত ইয়াবাগুলো মোছনী গ্রামের জামাল হোছনের বলে জানিয়েছে ওই এলাকার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জহুর আলম। তিনি জানান, গত ১৮ জুলাই মিয়ানমার থেকে ইয়াবার একটি বড় চালান নাফ নদ হয়ে মোচনী এলাকা দিয়ে প্রবেশকালে বিজিবি টহলদল ধাওয়া করে। এসময় ইয়াবাসহ মিয়ানমারের দুই নাগরিককে আটক করতে সক্ষম হলেও অপর কয়েকজন পাচারকারী বেশ কিছু ইয়াবার পুটলা নিয়ে পালিয়ে মোচনী এলাকার জকির আহমদের পুত্র জামাল হোছনের কাছে নিয়ে আসে। কিন্তু ওরা জামালের বাড়ী না চিনে আমার বাড়ীতে এসে বাড়ীর জানালা থেকে ইয়াবাগুলো ঢুকিয়ে দিয়ে সটকে পড়ে। এর কিছুক্ষন পর ইয়াবার মুল মালিক জামাল উদ্দিন সাঙ্গপাঙ্গসহ এসে ইয়াবাগুলো নিয়ে যায়। এর দুয়েকদিন পর ওই ইয়াবা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমার সাথে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং আমার উপর হামলা চালায়।

এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফের মোছনী নয়াপাড়া ক্যাম্পের আর টিএম ইন্টারন্যাশনাল অ্যাম্বুলেন্স করে জামাল হোছনের ইয়াবা পাচার করতো চালক বাদশা মিয়া। অবশেষে গত শনিবার ইয়াবাসহ বাদশা মিয়াকে আটক করে এবং অ্যাম্বুলেন্সটি জব্দ করে। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী রাঘববোয়ালদের নাম জানা যাবে বলেও জানান তারা।

উক্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জামাল হোছনের পিতা জকির আহমদ জানান, উল্লেখিত ইয়াবা সিন্ডিকেট ও ইয়াবার বিষয়ে বিন্দু পরিমান আমার জানা নেই এবং আমার পরিবারের কোন সদস্য ইয়াবা ব্যবসা ও পাচারের সাথে জড়িত নই। যে ঘটনাটি নিয়ে মারামারি হয়েছে তা একটি পারিবারিক সংঘঠিত ঘটনা। মুলত এলাকার কিছু কুচক্রীমহল আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমি ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

এব্যাপারে ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এস, এম আরিফুল ইসলাম জানান, ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী ও পাচারকারী যেই হোক, তাদের রেহাই নেই। বিজিবি জওয়ানরা সীমান্তে সদা তৎপর রয়েছে। ইয়াবাসহ যে কোন চোরাচালান কঠোর ভাবে দমন করা হবে। এক্ষেত্রে তিনি স্থানীয়সহ সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031