মানবাধিকার বাস্তবায়ন মানবকল্যাণের প্রথম সোপান। এটি মানুষের সুস্থ – সুন্দর জীবনের অধিকারী হয়ে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠা করে। আজকাল আমাদের দেশের গ্রামগঞ্জেও মানবাধিকার নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা ও সচেতন মানুষের মধ্যে চর্চা শুরু হয়েছে। এটি অত্যন্ত ভালো লক্ষণ। ক্ষুধা, দারিদ্র, অপুষ্টি, বাক-স্বাধীনতা লঙ্ঘন, সন্ত্রাস, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন, শ্রম-শোষণ, নারী ও শিশু পাচার ইত্যাকার বিষয়সমূহ যা মানুষের জীবনকে বিপণœ করে, সবই মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। তাই জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রের লক্ষ্যই থাকে জনগণের সুখ শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নেরও বিকাশের পথ করে দেয়া।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-সম্প্রদায় কিংবা ধনী-নিধন পরিচয় নিয়ে জন্মগ্রহণে কারো হাত নেই। তা সত্ত্বেও দেশে দেশে এসব ক্ষেত্রে অধিকার উপভোগ ও বিকাশের সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তিতে বৈষম্য ঘটতে দেখা যায়। প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানুষের এমন অবমূল্যায়ন হবার কথা নয়। অধিকারহীনতা ও বঞ্চনার শিকার হবার কথা নয়। বাংলাদেশের সংবিধানে জাতিসংঘ স্বীকৃত মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার ৩০টি ধারাই মৌলিক অধিকার রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি ধারা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত। আর, অপর ৬টি ধারা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত।
যে সমাজে অপরাধ ও মানবতাবিরোধী অন্যায় কর্মকা- চলে তাকে বন্ধ করতে জনমত সৃষ্টি করে জনগণকে অবস্থান গ্রহণ করতে হবে, সত্যিকারভাবে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে। বর্তমানে নারী, শিশু আর অধিকারহারা মানুষের প্রতি সমাজের বিভিন্ন স্তরে সমর্থন সহানুভূতি বাড়ছে। মানবাধিকার বাস্তবায়নে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদিরও নিশ্চয়তা বিধানে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসবের প্রতিষ্ঠা হলে দেশে মানবাধিকারের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটবে।
মানবাধিকার ধারণার প্রাচীনতম পরিচয় পাওয়া যায় খৃস্টপূর্ব দুই হাজার বছরেরও আগের আদিতম আইন সংকলন, ব্যবিলনের রাজা হাম্বুরাবির নিয়মাবলীতে। খৃস্টীয় ৭ম শতকের মদিনায় বহুধর্মভিত্তিক সমাজ পরিবেশে হযরত মুহাম্মদ (স.) প্রণীত ‘মদিনা সনদে’ও সেখানকার সকল নাগরিকের মানবাধিকারের স্বীকৃতি মেলে। পরবর্তীতে মানবাধিকারের ধারণায় বিকাশ দেখা যায় রুশো, হুগো, জন লক, কার্ল মার্কস প্রমুখের রচনায়। অবশ্য, ১২১৫ সালে ইংল্যা-ে প্রণীত ম্যাগনাকার্টাকেই মানবাধিকার প্রথম চার্টার বলে ধরা হয়। পরবর্তীতে, ১৭৭৬ সালের আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র, ১৭৮৯ সালের ফরাসী বিপ্লবের মানবাধিকার সনদ ডিক্লারেশন অব দি রাইটস অব ম্যান এন্ড সিটিজেন, ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের বাণী ইত্যাদিকে চিহ্নিত করা হয়েছে মানবাধিকার আন্দোলনের ক্রম-উত্তরণের এক একটি মাইলফলক রূপে।
সকল কল্যাণ রাষ্ট্রে সমাজের বা রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রতিটি মানুষের রয়েছে জীবনের নিরাপত্তার কর্মের ও উপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভের অধিকার, শিক্ষা ও বাক-স্বাধীনতার চর্চা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণের অধিকার। উল্লেখ্য, মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশের আজকের প্রচেষ্টাই হলো মানুষের মানুষ মর্যাদা সমুন্নত রাখা।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031