রাজধানী ডুবিয়ে দিতে এখন আর দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টির দরকার হচ্ছে না। ঘণ্টা দুয়েকের বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে পথঘাট। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার তিন ঘণ্টায় যে বৃষ্টি হয়েছে সেটি আবার এক যুগের রেকর্ড। ফল স্বরূপ রাজধানীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকাগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন আবাসিক এলাকাতেও উঠে যায় পানি।

গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিতে বিশেষ করে মতিঝিল, গুলিস্তান, পুরানা পল্টন, নয়াপল্টন, সবিচালয়, গ্রিনরোড, মিরপুর, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হচ্ছে জলজট। এই তালিকায় এবার যোগ হলো ভিআইপি রোড। এই সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য কমই দেখেছে রাজধানীবাসী। কিন্তু আজ সড়কের ফার্মগেট থেমে কারওয়ানবাজার পর্যন্ত এলাকার প্রধান সড়কেও উঠে যায় হাঁটু সমান পানি। সোনারগাঁও হোটেলের সামনের সড়কে পানি উঠে যায় আরও বেশি, সেখানে জল জমে যায় কোমড় সমান।

বেলা ১২টার পর থেকে ঝুম বৃষ্টি নামে রাজধানীতে। বৃষ্টি হয় বিকাল তিনটা পর্যন্ত। এই তিন ঘণ্টায় যত বৃষ্টি হয়েছে, সেটি গত ১১ বছরে কোনো দেখা যায়নি। এই তিন ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে মোট ১২১ মিলিমিটার। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আনোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমসকে জানান, এর আগে ২০০৪ সালের ৬ আগস্ট বৃষ্টি হয়েছিল ১৩৪ মিলিমিটার।

 

প্রতি ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে রাজধানীর নিষ্কাষণ ব্যবস্থা তা মানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু প্রায় তিন গুণ বৃষ্টি হলে যা হওয়ার কথা তাই হয়েছে। পানি নিষ্কাষণের দায়িত্বে থাকা অন্যতম সংস্থা ঢাকা ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ের সামনেও জমে যায় পানি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ঠাট্টা, তামাশা।

বৃষ্টিতে পানি উঠে পড়েছে নগরীর একটি বড় অংশেই। আর এ কারনে বিকাল পাঁচটায় অফিস শেষে বাড়ির পথে নেমেই নগরবাসী পড়ে অথৈ সাগরে। কারওয়ানবাজারে অফিস শাসসুল আলমে। বাসা তার বাসাবোতে। অফিস ছুটি হওয়ার দুই ঘণ্টা পরও তিনি বাসার উদ্দেশ রওয়ানাই হতে পারেননি। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে অনেক ভোগান্তি হয়েছে আমাদের। এখন ধরা যায় বৃষ্টি একটি আতঙ্কের নাম।’

ভিআইপি রোডে পানি জমে থাকা অবস্থায় দুই পাশেই তৈরি যায় দীর্ঘ যানজটের। আবার মোড়ে মোড়ে শত শত মানুষ অপেক্ষা করতে থাকে যানবাহনের।

 

মতিঝিল, বঙ্গভবনের পেছনের এলাকা, পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড, জয়নাগ রোড, মগবাজার, শান্তিনগর, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, রামপুরা ও মিরপুরসহ নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে পানি করছে থৈ থৈ। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর অবধি।

জলজট আর যানজট আসে পাশাপাশি। এবারও হয়েছে তাই। সাতরাস্তা থেকে নাবিস্কো মোড় রাস্তার এক অংশ পানির নিচে তলিয়ে থাকা অবস্থায় যানজট দেখে অনেককে জুতা হাতে নিয়ে, হেঁটে যেতে দেখা যায়। অনেকে আবার রাস্তায় অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষণিকা বাসে চলাচল করা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, কার্জন হল থেকে আমাদের বাস দুইটার দিকে ছেড়ে আসে। শাহবাগ পাড় হতেই প্রায় ১ ঘণ্টা লেগে যায়। শাহবাগ-ফার্মগেটে রোডে তীব্র যানজট থাকায় আমাদের বাসটি সে পথে না গিয়ে কাকলাইল-সাত রাস্তা হয়ে মহাখালীর দিকে আসে। প্রতিটি পথেই তীব্র জটে পরতে আমাদের।

মিরপুর থেকে কারওয়ানবাজার যাবেন টিপু মিয়া। ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একঘন্টা ধইরা মিরপুরেই বইয়া আছি। কখন যে কামে যামু আর কখন যে বাইত যামু আল্লাপাক জানে। এই ঢাকা এহন আর ঐ ঢাকা নাই। ঢাকা বদলাইয়া গেসে। অহন থেইকা গাড়ি বাদ দিয়া নৌকা দিয়া যাইতে আইতে হইবো।’

এই পরিস্থিতিতে ডিআইডি রোড, মিরপুর ১০ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ চলায় সেখানে ভোগান্তি আরও চরমে। রাস্তা কেটে রাখায় দুর্বিষহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেখানে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031