বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশের পর বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাটা জবরদস্তিমূলক ও বেআইনি বলে মন্তব্য করেছেন । তিনি বলেছেন, যদিও দেশে এখন আওয়ামী আইন চলছে। এই আইনে অবৈধ ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত চর্চিত হিংসার স্ফুরণ ক্রমবর্ধমান মাত্রায় সংঘটিত হচ্ছে। এই আইনে আমরা দেখতে পাচ্ছি- বিরোধী দলের প্রতি ক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী যেন সবসময় ক্রোধের আগুনে দগ্ধ হচ্ছেন। বিরোধী মত এবং সরকার সমালোচকদের ওপর রাজদণ্ড নেমে আসে সবসময়। হুংকারের স্বরে জনগণের ওপর হুকুম জারি করা হয়। বাংলাদেশ এখন এমন একটি দেশ যেখানে কেবলমাত্র মৃত মানুষ ছাড়া কারো সত্য কথা বলার কোনো অধিকার নেই। তাই বর্তমান সরকার দেশে সত্যিকার অর্থে যে উন্নয়ন করেছে-তা হলো অশান্তি, হিংসা আর হানাহানি। তবে দুঃশাসনের অবসানে জনগণের কালজ্বয়ী প্রতিজ্ঞা কখনো নিষ্ফল হয় না। স্বৈরাচারীর মসনদ এখন উল্টে পড়ার অপেক্ষায়। সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশের পর বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাটা জবরদস্তিমূলক ও বেআইনি। গতকাল দলের নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ‘তুফান’দের নারকীয় উল্লাসে দেশ আজ ক্ষতবিক্ষত। এই তুফানরাই সারাদেশে মানুষের ঘরবাড়ি, জায়গা-জমি দখলের পাশাপাশি নারীদের সম্ভ্রম নিয়ে পৈশাচিক আনন্দে মেতে উঠেছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগসহ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে জনপদ থেকে জনপদ আজ রক্তে রঞ্জিত। তাদের আগ্রাসী চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, খুনখারাবিতে সারাদেশে আজ রক্তগঙ্গা বইছে। নারী ও শিশুরা এদের প্রধান টার্গেট। আদিম উল্লাসে এরা নারী-শিশু নির্যাতন করে এক বিকৃত সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, শুধু নারী-শিশুদের ওপর বর্বরোচিত নিপীড়নই নয়, তাদেরকে খুন করা হচ্ছে নৃশংসভাবে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ জন নারী ও শিশুর ওপর পৈশাচিক নির্যাতনের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের সোনার ছেলেদের বীভৎস উৎপীড়ন থেকে রেহাই পাচ্ছে না নববধূরাও। এমনকি শিশুর ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে ছুড়ে ফেলা হয়েছে বাথরুমে। চলন্ত বাস ও ট্রাকে কিশোরীকে হাত-পা বেঁধে পালাক্রমে শ্লীলতাহানী করা হয়েছে, আর্তনাদে আতঙ্কিত বিধবার মুখে পুরে দেয়া হয়েছে ধারালো ছুরি। অপরাধের ব্যতিক্রমী বীভৎস রূপ দিয়েছে আওয়ামী দুঃশাসনের সহচররা। রিজভী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে যে নির্দেশনা এসেছে তাতে এই তুফানদের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে ক্ষমতাসীনরা ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত, কিন্তু অবরুদ্ধ গণতন্ত্রে পীড়িত মানুষ বর্তমান ঘনতমাসাবৃত এই দুঃসময়ে আলোর ক্ষীণ রেখা দেখতে পাচ্ছে। এই রায়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, নির্বাচন, আইনের শাসন বাস্তবায়নসহ নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, বর্তমান সংসদ অকার্যকর, অবাধ দুর্নীতি, মানবাধিকার হুমকির মুখে আর প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আজকাল গুটিকয়েক লোকের একচেটিয়া ব্যবহারের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতা জোরালো করার এই আত্মঘাতী প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।
বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ছাড়া বিশ্বাসযোগ্য সংসদ প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। রিজভী বলেন, কোনো কোনো জায়গায় আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য সংগ্রহের ফরম বিতরণ করতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্যাপকভাবে বাধা দিচ্ছে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। কিন্তু কোনো বাধাই আটকাতে পারছেন না বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম। পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের বাধা উপেক্ষা পরে দেশজুড়ে পুরোদমে চলছে এ অভিযান। দলের এই কর্মসূচি ইতিমধ্যে মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ফরম পূরণে দলের সদস্য হতে তরুণ-তরুণী, কৃষক-শ্রমিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া নারীদের মধ্যে সদস্য হওয়ার আগ্রহ আরও বেশি। এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রায় ৪২ লাখের অধিক সদস্য সংগ্রহ ফরম বিক্রি হয়েছে- যা টার্গেটের প্রায় অর্ধেক। এ সময় তিনি জয়পুরহাট বিএনপি ও ফেনী জেলা ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাদের গ্রেপ্তার ও পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা বিএনপি অফিস সশস্ত্র হামলা চালিয়ে বন্ধ করে দেয়ার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031