রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে একটি টাকাও নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কোনো ব্যাংক হিসাবও নেই। অথচ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। কিন্তু টাকার অভাবে দাপ্তরিক কাজকর্মে কোনো গতি আসছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি বরাদ্দ না পেলে পিছিয়ে পড়বে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবায়ন।

চলতি বছর থেকেই রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই উত্তরাঞ্চলের সব সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি টাকাও বরাদ্দ পায়নি এই বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সচিব একরামুল হককে ডেপুটেশনে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে একটি টাকাও নেই। এমনকি নেই কোনো ব্যাংক হিসাবও। অর্থ বরাদ্দ পেলে তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ব্যাংকে হিসাব খুলবেন।

একরামুল হক জানান, টাকার অভাবে দাপ্তরিক কাজ তেমন এগোচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘এখন একটা কলম কিংবা কিছু কাগজের দরকার পড়লেও মেডিকেল কলেজ থেকে নিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কেনার সামর্থ্য না থাকায় কম্পিউটার দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর আসবাবপত্র দিয়েছে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট।

রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহীতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন। পরে ২০১৬ সালে সংসদে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস হয়। পরে এর গেজেটও প্রকাশিত হয়। এরপর চলতি বছরের ১০ এপ্রিল নিয়োগ দেয়া হয় উপাচার্য। গত ৩০ এপ্রিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন মাসুম হাবিব।

তবে এখন পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী কোনো ভবন নেই। সম্প্রতি রাজশাহীর নার্সিং কন্টিনিউইং সেন্টারের দ্বিতীয় তলার ১১টি কক্ষে এর অস্থায়ী অফিস খোলা হয়েছে। তবে সেগুলো এখনও ব্যবহারের অনুপযোগী। সেগুলো সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। আর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জায়গা পছন্দ করা হয়েছে নগরীর বড়বনগ্রাম মৌজায়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রায় ৮৩ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটকে করা হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ অফিস। সম্প্রতি উপাচার্য নিয়োগের পর রামেকের সচিবসহ চার কর্মকর্তা-কর্মচারিকে ডেপুটেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে গতি আনতে প্রয়োজন আরও জনবল। কিন্তু টাকার অভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু করা যাচ্ছে না।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সচিব একরামুল হক বলেন, ইতোমধ্যে তারা রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পাঁচ কোটি টাকার চাহিদা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে। সেখান থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকার জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে সরকারের কাছে। কিন্তু এখনও মেলেনি কোনো টাকা।

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাসুম হাবিব হজ পালনে গেছেন সৌদি আরব। তার দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইসমাইল খান। তবে তিনি রাজশাহী আসেন না। তাই এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

তবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ নওশাদ আলী বলেছেন, ‘মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাইলে দ্রুত অর্থেরও বরাদ্দ করা দরকার।’

নওশাদ আলী বলেন, ‘মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থায় আরও উন্নতি হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেই থাকবে একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এখন যেসব রোগী ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়, সেসব রোগী তখন পাঠানো হবে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে স্বল্প খরচে উন্নত চিকিৎসা পাবেন রোগীরা।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরও আগের মতোই এমবিবিএস চিকিৎসক তৈরি করবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ। আর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন, সার্জারি, বেসিক সায়েন্স, প্যারা ক্লিনিক্যাল সায়েন্স, ডেন্টাল, নার্সিং, বায়ো টেকনোলজি, বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল টেকনোলজি ও প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের মাধ্যমে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও গবেষণার ব্যবস্থা থাকবে।

সেইসঙ্গে দক্ষ নার্স তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি নার্সিং ইনস্টিটিউটও স্থাপন করা হবে। তবে নগরীর বড়বনগ্রাম মৌজায় পছন্দ করা জমিতে নিজস্ব ক্যাম্পাস ও হাসপাতাল তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এসবের কিছুই হবে না। ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার পরও ধীরে ধীরে সব অনুষদ চালু করতে সময় লাগবে বেশ কিছু দিন। পর্যায়ক্রমে সবকিছু চালু করতে প্রয়োজন সরকারি অর্থের বরাদ্দ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031