সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে উঠা দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান বন্ধে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে চিঠি দেয়ার সমালোচনা করেছেন। এ ধরনের চিঠি দিলে আদালতের ওপর আস্থা রাখা যায় না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধান বিচারপতি এই কথা বলেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে রায় নিয়ে তিনি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস দেয় দুদক। তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে।

বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে চলতি বছরের ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। এর জবাবে গত ২৮ এপ্রিল আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দুদকে পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বিচারপতি জয়নুল আবেদীন দীর্ঘকাল বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি অনেক মামলার রায় প্রদান করেন। অনেক ফৌজদারি মামলায় তার প্রদত্ত রায়ে অনেক আসামির ফাঁসিও কার্যকর করা হয়েছে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের দেয়া রায় সবার ওপর বাধ্যকর। এমন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালতের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে দুদক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তার দেয়া রায়সমূহ প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং জনমনে বিভ্রান্তির উদ্রেক ঘটবে। সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোন রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে না।’

তবে সুপ্রিম কোর্ট এই চিঠি দিলেও ওই বিচারকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান থেমে থাকেনি। আর দুদকের চাহিদা অনুযায়ী ওই বিচারকের বিষয়ে নথিপত্রও পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক জয়নুল আবেদীন সুপ্রিম কোর্ট থেকে আগাম জামিনও নিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে দুদককে দেয়া ওই চিঠির সমালোচনা করে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, ‘যেখানে দুদককে চিঠি দিয়ে সাবেক বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়, সেখানে তাদের ওপর নির্ভর করবো কীভাবে?’।

সংবাদ সম্মেলনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলায় আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণেরও তীব্র সমালোচনা করেন খায়রুল হক। বলেন, এই পর্যবেক্ষণে অপ্রাসঙ্গিক নানা বিষয়বস্তু এসেছে।

বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে নিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু আদালত সেটা অবৈধ ঘোষণার পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন হলো।

জিয়াউর রহমানের সেনা শাসনামলে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে বিচারক অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনারও সমালোচনা করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031