বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কাঠামোতে ভয়াবহ সংকট বেরিয়ে এসেছে জাতীয় নির্বাচনের এক বছর আগে । যেটা দৃশ্যত অনেকটাই পাকিস্তানের মতো, যেখানে বিচার বিভাগ অযোগ্য ঘোষণা করেছে প্রধানমন্ত্রীকে।
পাকিস্তানের আদালতের রায়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন নওয়াজ শরীফ। এ বিষয়টি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা উল্লেখ করেছেন। ফলে তার ওই মন্তব্য বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে বিবাদকে আলোড়িত করেছে এবং তা প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগের কাছে বলশূন্য করা এক সংকেত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এমন পর্যবেক্ষণ এসেছে দেশের প্রথম একজন হিন্দু প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে দোষ ধরার ক্ষেত্রে দলীয় নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে নিবৃত থাকার কোনো আহ্বান আসেনি। ফলে ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের কারণে যে দেশটি জর্জরিত, সেখানে জাতিগত বিভেদ আরো তীক্ষ্ণ হয়েছে।
ক্ষুদ্রতরভাবে যদি দেখা হয় তাহলে, সংখ্যালঘু ফ্যাক্টর…
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ বারবার দাবি করে এরই মধ্যে পানি ঘোলা করে ফেলেছেন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা। দেখে মনে হচ্ছে, পাকিস্তানের মতোই ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে এ সংকট।
প্রধান বিচারপতির মন্তব্য (প্রধানমন্ত্রীর প্রতি একটি হুমকি?) একদিকে যেমন, বিচার বিভাগের মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি করেছে, তেমনি অন্যদিকে নির্বাহী বিভাগ ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যেও একই অবস্থা দেখা দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আর এক বছরেরও কম সময় বাকি। এ সময়ে এ ঘটনায় অবশ্যই সরকারের শাসনের গুণগতমানের ওপর প্রভাব ফেলবে। যদিও তা এখনও নষ্ট হয়ে যায়নি। এখন এই অবস্থায় যা অনুমান করা যায়, তা শুধু হতে পারে, হয়তো প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করছেন, না হয় তাকে বাধ্যতামূলক (ফোর্সড) ছুটিতে পাঠানো হতে পারে। মোটামুটি সার কথা হলো- বিচারপতি সিনহার উদ্দেশ্য হলো আদালতের কর্তৃত্ব শক্তিশালী করা।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা পার্লামেন্টকে দিয়ে করা সংবিধানের সংশোধনী সম্প্রতি বাতিল করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ। সেখান থেকেই এ ঘটনার উদ্ভব। ওই সংশোধনী বাতিলের নির্দেশের ফলে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফাটল ধরাবেই।
রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে গেছে এই রায়- এমনটা চিহ্নিত করা হয়েছে পর্যবেক্ষণে। এ জন্যই আওয়ামী শিবিরে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বিচার বিভাগকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনার বার্তা হলো- পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা মোটেও সহ্য করা হবে না।
এক্ষেত্রে ফ্যাক্ট হলো, প্রধান বিচারপতির নিন্দা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। নিঃসন্দেহে এটা সর্বশেষ রায় দিতে বিচার বিভাগকে প্রলুব্ধ করেছে। ফলে ম্যাসেজ হিসেবে পাকিস্তানের আদালতের রায়কে শক্ত রেফারেন্স হিসেবে আনা হয়েছে। সেই ম্যাসেজটা হলো, যদি একটি দেশের বিচার বিভাগ একজন প্রধানমন্ত্রীকে উৎখাত করতে পারে তাহলে তা অন্য একটি দেশেও তা ঘটতে পারে।
অ্যাটর্নি জেনারেলকে পরামর্শ দিতে গিয়ে বিচারপতি সিনহা বলেছেন, ‘বিচার বিভাগ অনেক অনেক ধৈর্য ধরেছে। আমি যা বলতে চাইছি তা হলো, আমাদেরকে আরো পরিপক্ব হতে হবে’।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031