বিচারক জগদিপ সিং দুই ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত, স্বঘোষিত ধর্মগুরু রাম রহিম সিংকে ২০ বছরের জেল দিয়েছেন। দুটি ধর্ষণ মামলার প্রত্যেকটির জন্য ১০ বছর করে মোট ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তাকে। পাশাপাশি প্রত্যেক মামলার জন্য ১৫ লাখ রুপি করে মোট ৩০ লাখ রুপি জরিমানা করা হয়েছে। রোহটাকে জেলের ভেতরেই অস্থায়ীভাবে বসানো আদালতে তিনি এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আদালত কক্ষে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাম রহিম। করুণা প্রার্থনা করেন। জবাবে জানানো হয়, কোনো ছাড় দেয়া হবে না। ওদিকে রায়ের খবরে তার ডেরা এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল রায় ঘোষণার আগে রোহটাক জেলের চারপাশে মোতায়েন করা হয় কয়েক হাজার সেনা সদস্য ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য। জেলখানার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি কোনো বেসামরিক ব্যক্তিকে। শহরে বড় কোনো সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সব ধরনের মোবাইল ও ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়। বন্ধ রয়েছে হরিয়ানার সব স্কুল, কলেজ। পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে রাম রহিম ডেরার সিনিয়র সদস্যদের আটক রাখা হয়। ওদিকে রোহটাক পুলিশ সতর্কতা জারি করে। তারা কোনো বিশৃঙ্খলা দেখলেই গুলি চালাবে বলে জানিয়ে দেয়। রায় ঘোষণার আগে বিচারক জগদিপ সিংকে একটি হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয় হরিয়ানার রোহটাকে অবস্থিত কারাগারে। ওই কারাগারকে আগে থেকেই ৭ স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনিতে ঢেকে ফেলা হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে আদালত বসে জেলখানার ভেতরেই। রোহটাক কার্যত অচল হয়ে পড়ে। তিন দিন আগে রাম রহিমকে ধর্ষণে অভিযুক্ত করাকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৮ জন। অনলাইন এনডিটিভি, টাইমস নাউ, টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সিবিআইয়ের স্পেশাল কোর্টের বিচারক জগদিপ সিং শুক্রবার রাম রহিমকে অভিযুক্ত করার পর তাকে আটকে রাখা হয় জেলে। সেই জেলের আশপাশের সব সড়ক বন্ধ ছিল গতকাল। মোতায়েন করা হয়েছে আধাসামরিক বাহিনীর কমপক্ষে তিন হাজার সদস্য। রোহটাকের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) অতুল কুমার সাংবাদিকদের বলেছেন, কাউকে বিশৃঙ্খলা বা বিঘ্ন ঘটানোর মতো অবস্থায় দেখা গেলে তাকে সতর্ক করা হবে প্রথমে। যদি তাতে নিবৃত না হয় সে, তাহলে গুলি করা হবে। শুক্রবার রাম রহিমকে ধর্ষণে অভিযুক্ত করার পর তার হাজার হাজার সমর্থক, ভক্ত রাজপথে দাঙ্গা সৃষ্টি করে। তারা বাসে, গাড়িতে আগুন দিয়ে উল্লাস করে। সম্পত্তি ভাঙচুর করে। মিডিয়া, সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। এতে কয়েক কোটি রুপির ক্ষতি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে হরিয়ানায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯ শতাধিক মানুষকে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার হাইকোর্ট আগেই নির্দেশ দিয়েছে, সহিংসতার কারণে বিচারক জগদিপকে আকাশপথে নিয়ে যেতে হবে জেলের ভেতরে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে। ওদিকে রাম রহিমের ডেরায় অবস্থান নেয় প্রায় ৩০ হাজার ভক্ত। তাদের সিরসা শহরের ওই ডেরা থেকে রোববার বের করে দেয়া হয়েছে। এক হাজার একরের বেশি জায়গায় প্রতিষ্ঠিত এই ডেরা। এতে প্রবেশপথগুলোতে শত শত সেনা ও দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হরিয়ানার সব স্কুল কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। পাঞ্জাবেও কিছু স্কুল কলেজ বন্ধ রয়েছে। ওদিকে গাজিয়াবাদ ও নয়ডাতে বন্ধ রয়েছে সব স্কুল। হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে ১৩০টিরও বেশি ডেরা ক্যাম্পাসে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কিছু অস্ত্র। রয়েছে লাঠি, লোহার রড, বোমা তৈরির সরঞ্জাম। সিরসা ক্যাম্পাসের কাছেই একটি গাড়িতে পাওয়া গেছে দুটি একে-৪৭ রাইফেল ও একটি পিস্তল। দাঙ্গাকারীদের সতর্ক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছেন, যারাই আইন নিজের হাতে তুলে নেবে, সহিংসতা ছড়িয়ে দেবে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে না। তা তিনি যে-ই হোন না কেন।
| M | T | W | T | F | S | S |
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 |
| 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 |
| 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 |
| 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 |
| 29 | 30 | 31 | ||||
