এক টুকরো খালি জায়গা কয়েকটি রাস্তার মাঝখানে । যার মাঝখানে একটি বৃওকার বাগান। বিনোদনের কোনো উপকরণ নেই। ফুলের গাছ নেই। পরিবার নিয়ে ঘোরার পরিবেশ নেই। ব্যস্ত ঢাকার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান শহীদ আনোয়ারা পার্কের। শহীদ আনোয়ারা নামের এই পার্কটি ফার্মগেট পার্ক নামেই বেশি পরিচিত।

ক্লান্ত পথিকের আশ্রয় ও বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে এই পার্ক। কিন্তু আশ্রয়-বিনোদন দূরে থাক, খানিকটা দাঁড়ানোই যেন দায়। চারপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে আঁখ ও বাদামের খোসা। মানববর্জ্যও কম নেই। একটু দাঁড়ালেই দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। এই হচ্ছে ফার্মগেট-সংলগ্ন পার্কটির বর্তমান চিত্র। সেখানে গেলে মনেই হবে না এটি একটি পার্ক। বরং তা যেন ভবঘুরে আর বাউণ্ডুলেদের আড্ডা দেওয়ার স্থান।

মানুষের মল-মূত্রে আনোয়ারা পার্কটি রূপান্তরিত হয়েছে মলমূত্র ত্যাগের স্থানে। মল-মূত্রের গন্ধে আশপাশ দিয়ে চলাফেরাও কঠিন হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে পার্কটিতে প্রবেশ করতেই প্রসাব ও ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ নাকে আসে। দুর্গন্ধ এত বেশি যে, পার্কের পাশের ফুটপাত দিয়ে মুখে কাপড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন পথচারীরা। দিনের বেলায়ই অনেক মানুষকে পার্কের ভেতরে ও বাইরে প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদন করতে দেখা যায়। অথচ পার্কের গা ঘেষেই রয়েছে সিটি করপোরেশনের অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট।

পার্কটিতে প্রবেশের জন্য প্রধানত ফটক আছে তিনটি। কিন্তু এ ফটকগুলো ব্যবহার না করে অন্য জায়গা দিয়েও পার্কটিতে লোকজন সহজে ঢুকতে পারছেন। লোহার বেড়া ভেঙে এমন অবস্থা হয়েছে যে পুরো পার্কই যেন এখন প্রবেশপথ।

ছিন্নমূল কয়েকটি পরিবার পার্ক ঘিরে গড়ে তুলেছে বসতি। তাঁদের শুকোতে দেওয়া কাপড় দুলছে পার্কের দেয়ালে ও গাছে। তাঁদের কেউ রান্না করছেন। আবার কেউ কেউ বসে গল্প করছেন। পার্কে বসতি গড়ে তোলা সখিনা বেগম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বাবারে এহানে আছি কয়েক বছর হইছে। দেশের বাড়িতে কিছুই নাই। সব হারাইয়া খাবারের সন্ধানে এইহানে আইয়া উঠছি। তয় মাঝে মাঝে পুলিশ খেদাইয়া দেয়। আমরা কই জামু কন?’

এই পার্কে বসতি গড়ে তোলা সখিনা বেগম ও আরও কয়েকজন ছিন্নমূল মানুষের ভাষ্যমতে, এই পার্কে প্রায় ৫০ জনের মতো মানুষ বসবাস করেন।

পার্ক ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন দোকান। দোকানগুলোর সরঞ্জাম রাখার জায়গাও এ পার্ক। পার্কে বসার দুই একটা ছাড়া সবগুলো বেঞ্চই ভাঙা। পার্কটির ভাঙা বেঞ্চে বসেই আড্ডা দিচ্ছিলেন তেজগাঁও কলেজের দুই শিক্ষার্থী। তাদের সাথে কথা হলে তাঁরা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পার্কটি দেখার কেউ নেই। আপনি খুঁজে দেখেন তো একটা নিরাপত্তাকর্মী পান কি না, সিউর পাবেন না। এই পার্কের যা তা অবস্থা। ময়লা আবর্জনা ছাড়া কিছুই নেই। এটাকে পার্ক বলা যায় না।’

সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ আর উদাসীনতার অভাবে পার্কটি বেহাল বলে মনে করেন এই দুই শিক্ষার্থী।

এলাকাবাসীর তথ্য অনুযায়ী, দিনভর খোলামেলাভাবেই চলে মদ-গাঁজা আর ইয়াবা সেবনের আড্ডা। আর রাতের বেলায় এসবের সাথে যোগ হয় যৌন ব্যবসা। পুলিশ সব জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না অভিযোগ স্থানীয়দের।

পার্কে ঘুরতে আসা ও পথিক যেন রোদ-বৃষ্টিতে আশ্রয় নিতে পারেন সেজন্য সিমেন্টের তৈরি তিনটি ছাতা থাকলেও নিচে বসার স্থানগুলো উপড়ে ফেলা হয়েছে। রাতের বেলায় মানুষকে নিরাপত্তা দেবে সেই লাইটগুলো দীর্ঘ দিন থেকে অকেজো হয়ে আছে।

ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা আকিল হোসাইন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বাসার পাশে একটা পার্ক, অথচ পরিবার নিয়ে যে একটু সময় কাটাবো সেই পরিবেশ নেই। পজিটিভ কিছু পাবেন না এই পার্কে। গাঁজা, ইয়াবা, যৌন ব্যবসা, ময়লা-আবর্জনা, নেশাখোরদের আস্তানা এটা। একসময় সকালে ব্যায়াম করতাম এই পার্কে, এখন সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ সকাল-বিকাল ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা হয় দলে দলে।’

পার্কের ঠিক মাঝখানে এক-তৃতীয়াংশ জায়গাজুড়ে কারা যেন ফুটবল খেলার মাঠ বানিয়ে রেখেছে। সেখানে ঘাসের লেশমাত্র নেই। আর পার্কজুড়েই চলে ক্রিকেট আর ক্রিকেট। দলে দলে চলে শর্টপিচ আর লংপিচ বন্দনা।

অনেক চেষ্টা করেও নিরপত্তাকর্মীকে পাওয়া যায়নি। তবে পার্কে বাদাম ও চা বিক্রেতা আজিজ ও খলিল জানান, পার্ক দেখার জন্য একজন নিরাপত্তাকর্মী আছেন।

পার্কের এই শোচনীয় অবস্থার কথা জানতে চাইলে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই পার্কের অবস্থা আসলেই খুব খারাপ। এই পার্কের অবস্থার কথা আমরাও জানি। ঢাকার সবগুলো পার্কের উন্নয়ন করা হবে। উন্নয়ন আওতার মধ্যে এটিও রয়েছে।’

কবে কাজ শুরু হবে জানতে চাইলে এই গণপূর্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘কবে কাজ শুরু হবে এটা এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। তবে এটা ঠিক যে এটার কাজ শুরু হবে।’

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031