জাতীয় সংসদ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন এবং তাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো বন্ধে মিয়ানমারকে চাপ দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গতকাল সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে। মিয়ানমার সরকারকে পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সংসদ সদস্যরা বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থানকে দুর্বলতা ভাবা ঠিক হবে না। বাংলাদেশ যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে। পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ জবাব দিতে জানে। আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপিরা রোহিঙ্গা নির্যাতনকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিচার দাবি করেছেন। সরকারকে এ ইস্যুতে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেন এমপিরা। এছাড়া, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত আনান কমিশনের রিপোর্টের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নেরও দাবি জানানো হয়। এজন্য মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল গঠনের দাবি জানানো হয়।
গতকাল সোমবার রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপিরা এসব দাবি জানান। আলোচনা শেষে এ বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাস হয়। এ প্রসঙ্গে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া মানবজমিনকে বলেন, ওই রেজ্যুলেশন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের দেয়া হবে। আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই বাংলাদেশ এ পদক্ষেপ নিয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বাংলাদেশে এখন প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে প্রায় কয়েক লাখ লোক আশ্রয় নিয়েছে। তারা আসতে বাধ্য হয়েছে। তাদের ওপর যে নির্যাতনের চিত্র দেখলাম তার নিন্দা করার ভাষা আমার জানা নেই। রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের নাগরিক এটি সবারই জানা। এদের মতো আরো অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি আছে মিয়ানমারে। তাদের সমান অধিকার ছিল। ১৯৭৪ সালে বার্মার সামরিক জান্তা এই অধিকার কেড়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। ’৭৮ সালে রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করা শুরু হয়। ২০১৫ সালে এসে রোহিঙ্গাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। একটি জাতির প্রতি মিয়ানমার সরকার কেন এমন আচরণ করছে তা সত্যিই আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, আমি যতবার মিয়ানমার গিয়েছি, তাদের অনুরোধ করেছি, রোহিঙ্গারা আপনাদেরই নাগরিক। তাদের ফিরিয়ে নিন। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। কিন্তু ফিরিয়ে নেয়াতো দূরের কথা এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক রোহিঙ্গা তাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে বলেন, তাদের ওপর নির্যাতনের দৃশ্য দেখে এদেশে আসতে আমরা নিষেধ করবো কিভাবে? আমরাও তো রিফিউজি ছিলাম। কাজেই রিফিউজি হয়ে থাকা কতটা অবমাননাকর তা আমরা ভালো বুঝি। আমরা চাই তারা যেন নিজের দেশে ফিরে যায়।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতে চাই। মিয়ানমার সরকারকে বলবো, যারা তাদের নাগরিক তাদের হঠাৎ নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার ফলাফল কি দাঁড়াতে পারে তা কি তারা টের পাচ্ছে। আমরা চাই তারা যেন তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়।
আলোচনায় আরো অংশ নেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, আবদুল মতিন খসরু, ড. মো. হাছান মাহমুদ, এটিএম আবদুল ওয়াহ্হাব, সাইমুম সরোয়ার কমল ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মো. ফখরুল ইমাম, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল ও বেগম শিরীন আক্তার এবং তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেন, যেভাবে স্রোতের মতো রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে এটাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে একটি বড় ধরনের ইস্যু। যেহেতু অতীতে অনেকবার এ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা হয়েছে। আমি মনে করি এ প্রেক্ষাপটে একটি স্থায়ী সমাধান দরকার। আর স্থায়ী সমাধানের জন্য সময়েরও প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ উনি ইতিমধ্যে যে সব পদক্ষেপ নিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে তাদেরকে একটি জায়গায় রাখার কিন্তু মনে হচ্ছে এ বিষয়ে আরো নজর দেয়া উচিত। আমি মনে করি নির্যাতিত রোহিঙ্গারা আমাদের মেহমান। যত দিন তারা আমাদের দেশে থাকবে ততদিন তাদেরকে মেহমান হিসেবে দেখতে হবে। তার মানে এই নয়, এটা সমাধান হলো। তাদেরকে ফিরে যেতে হবে। অবশ্যই ইতিমধ্যে কিছু উদ্যোগ সরকার নিয়েছে তারপরও আমি বলবো এ সমাধানকল্পে অনেকগুলো পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এ সমাধানের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে কিছু প্রস্তাব দিতে চাই। নির্যাতিত নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের একটি জায়গায় রাখা এবং তারা যেন তাদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা সেবা সঠিকভাবে পায়। পাশাপাশি যারা নির্ধারিত জায়গা থেকে ছড়িয়ে পড়েছে তাদের ফিরিয়ে এনে একটি পরিচয়পত্র তৈরি করা। তাদেরকে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে যারা সাহায্য করতে চায়। এছাড়া দেশীয়, আন্তর্জাতিকভাবে সহযোগিতা করবে তা সমন্বয় করে একটি মাধ্যমে বিতরণ করা উচিত। যাতে করে কোনো কুচক্রী মহল ত্রাণের সাহায্যের নামে রোহিঙ্গাদের বিপদগামী করে না তোলে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। এ সুযোগ দেয়া উচিত হবে না। এটি আমাদের দেশের সমস্যা। জাতীয় সমস্যা। সবাইকে নিয়েই এ সমস্যা সমাধান করতে হবে। আমি আহ্বান জানাবো দলমত নির্বিশেষে দেশের স্বার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এ সংকট মোকাবিলা করবেন। আমাদের দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় এবং তারা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি সবসময় সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে। মিয়ানমারের সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো আমরা এখনই আপনাদের সহযোগিতা করতে চাই। আমরা এখনও নীরব আছি তার মানে এই নয় যে, আমরা ভয় পেয়েছি। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। তিনি বলেন, শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সুচি থাকবে কিভাবে এত অশান্তি তৈরি করতে পারেন তা ভেবে অবাক হই। ভারত ও চীনকে এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী সতর্কভাবে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এ নিয়ে আমরা চতুর্মুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। প্রথমত কূটনৈতিকদের বিষয়টি নিয়ে ব্রিফিং করা হয়েছে। তাদেরকে আমাদের দাবির কথা জানিয়েছি। প্রস্তাব উত্থাপন করে ডা. দীপু মনি বলেন, জাতিসংঘ মিয়ানমারের হত্যাকাণ্ডকে জাতিগত হত্যাকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করেছে। বিষয়টি বর্ণবাদের সঙ্গে তুলনা করেছে তারা। এর আগে ২০১৩ সালে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত জাতি বলে ঘোষণা করে। যারা রোহিঙ্গাদের এই মানবিক সংকট নিয়ে কথা বলেছেন তারা সবাই বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের এ নিয়ে দেয়া রিপোর্ট বাস্তবায়ন করতে হবে, রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমিতে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। সকল নৃশংসতা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক মহল যেনো মিয়ানমারকে চাপ দেয় সে আহ্বান জানাচ্ছি। রোহিঙ্গাদের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার আমাদের ব্যথিত করে, ক্ষুব্ধ করে। আমরা অং সান সুচির ওপর আস্থা রাখতে চাই, তার যে দায়িত্ব সে বিষয়ে তিনি যেনো সচেতন হন। বিশ্ব বিবেক আজ এগিয়ে আসুক, তাদের অধিকার আদায়ে তাদের পাশে দাঁড়াক। কক্সবাজারের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, জাতিসংঘ বলেছে, প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে এসেছে। আমাদের হিসাব মতে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে। নাফ নদ আজ রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এ করুণ চিত্র চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। মিয়ানমারে হাজার হাজার নারীকে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। বিশ্ব বিবেক আজ চুপ করে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অং সান সুচির নোবেল পুরস্কার ধরে রাখার অধিকার নেই। সেই পুরস্কার আজ শেখ হাসিনাকে দেয়া দরকার। এই গণহত্যার দায়ে মিয়ানমার সরকারের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করি। মিয়ানমারের সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে আজ বিচারের মুখোমুখি করতে চাই। তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী প্রস্তাবের ওপর পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিএনপি আজ এত উত্তেজিত কেন? বিএনপি রোহিঙ্গাদের জায়গা দেয়নি। জায়গা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আজ শুধু বিশ্ব নেত্রী নন তিনি মানবতার নেত্রী। আগামীতে যদি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দিতে হয় তাহলে শেখ হাসিনাকে যেনো দেয়া হয়। সমগ্র বাংলাদেশ আজ এ ইস্যুতে উদ্বেলিত ও উত্তেজিত।
জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, গণতন্ত্রের জন্য একজনকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে, বিশ্ব দেখেছে শান্তির কি বারোটা বাজিয়েছেন। আরেক নেত্রী ৫ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন। আমি নিজে হলেও সে আশ্রয় দিতাম না। সারা বিশ্বের অষ্টম জনগোষ্ঠীর সংসদ থেকে বিশ্বকে জানাতে চাই, মুসলমান হিসেবে কিন্তু রোহিঙ্গাদের জায়গা দেইনি। মানুষ হিসেবে জায়গা দিয়েছি তারা ভিন্ন জাতি। জাতিগোষ্ঠী হিসেবেও তাদের কিন্তু জায়গা দেইনি। অং সান সুচিসহ মিয়ানমার মিথ্যাচার করছে, তারা মিথ্যাবাদী জাতি। আজ বিশ্ব যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না দিতে পারে তাহলে একদিন না একদিন আপনাদের দেশেও এটা হতে পারে। এর আগেও বিশ্ব এ ধরনের ঘটনার সমাধান দিয়েছে। সে উদাহরণ রয়েছে। বিশ্বকে বলতে চাই, রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারে সেইফ জোন তৈরি করা হোক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার সর্বোচ্চ করেছে যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আশ্রয় ও খাদ্য দেয়ার ক্ষমতা আছে ততক্ষণ দেয়া হবে। কূটনীতিকদের কাছে প্রত্যাশা, বাংলাদেশকে বিপদমুক্ত রাখুন। সেখানকার সেনাবাহিনী কি ধরনের অপারেশন চালাচ্ছে যে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবেশী দেশে ঢুকে পড়ছে। সে বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ থেকে কিছু জানতে পারিনি। আজ হোক কাল হোক আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি মিয়ানমারের বিপক্ষে যাবে। তিনি বলেন, আমরা গাঙ দিয়ে ভেসে আসিনি। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। পরিস্থিতি হলে বাংলাদেশ জবাব দিতে জানে।
আওয়ামী লীগের ড. হাছান মাহমুদ রোহিঙ্গাদের ওপর চলা নানা অত্যাচারের তথ্য তুলে ধরে বলেন, সেখানে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। আজ রোহিঙ্গাদের বলা হচ্ছে বাঙালি সন্ত্রাসী। ২০১৫ সাল পর্যন্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্য মিয়ানমারের পার্লামেন্টে ছিল। তাহলে তারা কিভাবে বাঙালি হলো। বর্তমান সরকার আজ লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকায় বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, সমগ্র পৃথিবী রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। সেখানে বিএনপি প্রশংসা করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সরকারের সঠিক ভূমিকার কারণে আন্তর্জাতিক মহল এ ইস্যুতে নড়েচড়ে বসেছে। মুখ খুলতে শুরু করেছে। তাই এ ইস্যুতে বিএনপির মায়া কান্নার কিছু নেই। আনান কমিশনের রিপোর্টের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা দরকার। আবার নোবেল কমিটিকে বলবো যদি শান্তিতে কেউ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর যদি হত্যাযজ্ঞ চালায় তাহলে কিভাবে তার নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেয়া যায় তা ভেবে দেখা দরকার।
জাসদের বেগম শিরিন আক্তার বলেন রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন চলছে তা গণহত্যার শামিল। এতে সারা বিশ্বের বিবেক নাড়া দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। গত দিনগুলোতে আসা প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গার লালন পালন করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী আরো তিন লাখ মানুষ এসেছে। এতে বাংলাদেশ যে ভূমিকা পালন করেছে তা প্রশংসা পেয়েছে। ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, রাখাইন এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য একটি নিরাপদ জোন স্থাপনের প্রস্তাব করতে পারি। মিয়ানমার এ পর্যন্ত ২৬ বার সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের জবাব চাওয়া উচিত। এর আগে মিয়ানমার সরকারের ওপর জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের জোরালো কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়ে নোটিশ দেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। নোটিশের প্রস্তাবে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অব্যাহত নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ, নিজ বাসভূম থেকে বিতাড়ন করে বাংলাদেশে পুশইন করা থেকে বিরত থাকা এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে নাগরিকত্বের অধিকার দিয়ে নিরাপদে বসবাসের ব্যবস্থা গ্রহণে মিয়ানমার সরকারের ওপর জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের জোরালো কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানানো হউক। নোটিশে মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলা হয়, সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অব্যাহত নির্যাতন-নিপীড়ন চরম আকার ধারণ করায় সেখানকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লাখ লাখ লোক ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয় নিয়েছে। সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্টে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নিষ্ঠুর নির্মমতার শিকার কেউ অর্ধমৃত, কেউ গুলিবিদ্ধ, কেউবা আবার ক্ষত-বিক্ষত হাত-পা নিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু কোনোমতে জীবন নিয়ে ঢলের মতো প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এতে আরো বলা হয়, নাফ নদে ভাসছে সারি সারি রোহিঙ্গার লাশ। নিজ ভূমি থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগত ভাবে নির্মূলের লক্ষ্যে চালানো অব্যাহত নৃশংসতায় গর্ভবতী মা-বোন, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, কোনো বৃদ্ধ এমনকি দুগ্ধপোষ্য শিশুকে রেহাই দিচ্ছে না এসব বাহিনী। তাদেরকে আখ্যায়িত করা হচ্ছে ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ হিসেবে। বাঙালি অজুহাতে এদের কেবল বিতাড়িত করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না তারা, রোহিঙ্গাদের প্রতিটি বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে যাতে তারা আর কখনোই নিজ ভূমিতে ফিরতে না পারে। নোটিশে বলা হয়, মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দুর্দশাগ্রস্ত এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।
