জাতীয়তা: রোহিঙ্গা। রুবিয়া খাতুন। নারী। বয়স ৬০। বাবার নাম: নাগু। মায়ের নাম: সুফিয়া খাতুন। জন্মতারিখ: অজানা। জন্মস্থান: মিয়ানমার। দেশ: মিয়ানমার।

এমন সব তথ্য দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে গতকাল সোমবার রাতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হলেন রোহিঙ্গা নারী রুবিয়া খাতুন। সহিংসতার মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পরীক্ষামূলকভাবে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন গতকাল শুরু হয়েছে। রাত পৌনে নয়টায় রুবিয়া প্রথম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হন।

আজ মঙ্গলবার সকালে এই বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান বলেন, ‘গতকাল পরীক্ষামূলকভাবে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন শুরুর হওয়ার পর ২০ জন রোহিঙ্গার নিবন্ধন করা হয়। এর মধ্যে আটজনকে আমরা পরিচয়পত্র তুলে দিয়েছি।’

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে সহিংস দমন-নিপীড়ন শুরু হয়। সহিংসতার মুখে আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে ছুটে আসছে রোহিঙ্গারা।

আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তাকারী সংগঠনগুলোর জোট ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, রাখাইন থেকে এবারের সহিংসতায় ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে।

চলতি দফায় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসার পর সরকার বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের পরিকল্পনা নেয়। রোহিঙ্গাদের এই বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান বলেন, ‘ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের কাজ করছে। এতে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি।’

রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য তিন ধরনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি সূত্র জানায়। প্রক্রিয়া অনুযায়ী, প্রথমে রোহিঙ্গাদের ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এতে থাকছে নাম, বাবা-মার নাম, দেশ, ধর্ম, লিঙ্গসংক্রান্ত তথ্য। এরপর তাদের ছবি তোলা হচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে আঙুলের ছাপ।

টাইগার আইটির উপমহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) রাজীব চৌধুরী বলেন, ‘গৃহহারা, নিঃস্ব রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার পাশাপাশি মিয়ানমারের নাগরিক এসব ব্যক্তির নিবন্ধনের বিষয়ে সরকারের জরুরি আহ্বানে আমরা সাড়া দিয়েছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা সফটওয়্যার তৈরি করে কাজ শুরু করেছি।’

রাজীব চৌধুরী জানান, জার্মানিতে যেভাবে সিরিয়ার কয়েক লাখ শরণার্থীকে নিবন্ধন করা হয়েছে, এখানে রোহিঙ্গা নিবন্ধনের ক্ষেত্রে তারা সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন।

সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের ফলে এবার আসা তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা সম্পর্কে তথ্য সরকারের কাছে থাকবে। পাশাপাশি নিবন্ধনের পর রোহিঙ্গাদের যে কার্ড দেওয়া হবে, তা রেশন, খাবার, স্বাস্থ্যসুবিধা, শীতবস্ত্রসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কাজে লাগবে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর যে প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন করে, রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সেই প্রক্রিয়ার অনেক কিছুই মেনে চলা হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

টাইগার আইটির সফটওয়্যার মডিউলের প্রধান আল মামুন চৌধুরী বলেন, এখানে রোহিঙ্গাদের ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়ার পাশাপাশি তাদের ১০ আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে। ছবি তোলা হচ্ছে ক্যানন ৭০০ ডি ক্যামেরায়। এ ছাড়া তাদের চোখের মনির ছবিও নেওয়া হবে।

কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের পাশাপাশি অন্যান্য স্থানে আরও ১৫ থেকে ২০টি কেন্দ্র খুলে এখন থেকে প্রতিদিন বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের কার্যক্রম চলবে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩৫০ জন রোহিঙ্গার নিবন্ধন করা হতে পারে বলে জানান তিনি।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান বলেন, ‘নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। তবে আমরা সফলভাবে এটা শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।’

ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন সংস্থার ভাষ্য, বাংলাদেশে ১৯৭৮ সালে প্রথম রোহিঙ্গারা আসতে শুরু করে। ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। পরে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তির পর রোহিঙ্গাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চলে যায়। ১৯৯২ সাল থেকেই কুতুপালং ও নয়াপাড়ায় দুটি আশ্রয় শিবির খোলা হয়। সেখানে ৩০ হাজারের বেশি নিবন্ধিত রোহিঙ্গা আছে। এসব নিবন্ধিত রোহিঙ্গার পাশাপাশি দেশে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা আছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়। গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়ন শুরু হয়। ওই দফায় ৯২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। আর এখন সেখানে নতুন করে সহিংসতা চলছে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031