রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন । রোহিঙ্গাদেরকে তাদের গ্রামত্যাগ করতে বাধ্য করার পর অগ্নিসংযোগের এমন ঘটনা রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর জাতিগত নির্মূলের অভিযানে মূল ভ’মিকা পালন করে। শুক্রবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তাদের এক প্রতিবেদনে এমন কথা বলা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নতুন কয়েকটি স্যাটেলাইট-ইমেজারি ও সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেছে। ওই তথ্য অনুযায়ী, ২৫শে আগস্ট থেকে ১৪ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যের ৬২ টি গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। উচ্চ রেজ্যুলেশনের স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায় যে এর মধ্যে ৩৫ টি গ্রামে বিভিন্ন ভবন ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি ২৬ টি গ্রামে প্রায়-বর্তমান সময়ে পরিবেশগত স্যাটেলাইট সেন্সর ব্যবহার করে দেখা গেছে যে সেগুলোতে এখনও আগুন জ্বলছে। মানবাধিকার সংস্থাটির এশিয়া শাখার ডেপুটি পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, স্যাটেলাইট ইমেজারিতে যা দেখা গেছে তার সঙ্গে আমাদের মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের মিল রয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের গ্রাম পুরিয়ে দিতে সরাসরি জড়িত। তিনি বলেন, জাতিসংঘ ও এর সদস্য দেশগুলোর উচিৎ জরুরী ভিত্তিতে এসব অত্যাচার থামাতে ও মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্ব বের করে দেওয়া ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ টি গ্রামের মধ্যে ৬টি গ্রামে ঘটা ভবনের ক্ষতির পরিমাণের বিশদ বিশ্লেষণ করেছে। আর প্রত্যেক ক্ষেত্রেই একেবারে স¤পূর্ণ ধংস চিহ্নিত করেছে। সব মিলিয়ে ৬ টি গ্রামে মোট ভবন ধ্বংস হয়েছে ৯৪৮ টি।
১৩ই সেপ্টেম্বরের সকালে তারিখ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশ থেকে দেখতে পায় যে, মুংদাওতে সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা গ্রাম তায়ুং পিয়ো লেত ইয়ার থেকে ঘন কালো ধোয়া উড়ছে। একটি পাহাড় থেকে ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে যে, গ্রামগুলোতে অনেকগুলো ভবন আগুনে জ্বলছে ও ভবনগুলো থেকে কয়েক মিটার দূরেই দাঁড়িয়ে আছে দুটি বড় কালো রঙের ট্রাক। এই গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা গ্রামবাসীরা জানান যে, এই ট্রাক দুটি মূলত সামরিক বাহিনীর ট্রাক। পাহাড় থেকে গ্রামের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা তিন গ্রামবাসী বলেন যে, ওই ধোয়াগুলো আগুনে জ্বলতে থাকা ভবন থেকে উড়ছে। তায়ুং পিয়ো লেত ইয়ার থেকে পালিয়ে আসা গ্রামবাসীদের একজন হচ্ছেন ফাতিমা (৫০)। তিনি হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, গ্রাম থেকে ধোয়া উঠতে দেখার পর তিনি তার বাড়িতেও আগুন লেগেছে কি না নিশ্চিত করতে একটি পাহাড়ে চড়েন। পাহাড়ের চূড়ায় পৌছার পর তিনি দেখতে পান, কালো ধোঁয়া তার বাড়িটিকে গ্রাস করে ফেলেছে। আশপাশের বাড়িগুলোতেও আগুন জ্বলছে। তিনি জানান, ৩১শে আগস্ট গ্রামটিতে সামরিক বাহিনীর সদস্যভর্তি ট্রাক এসে পৌঁছায়। তিনি সেদিনই সেখান থেকে পালান। সেনারা ট্রাক থেকে লাফ দিয়ে নামে, অস্ত্রসহ। তিনি ভয় পেয়ে যান। আর এরপরই তিনি বাংলাদেশ সীমান্তের উদ্দেশ্যে পালান। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীকে দেখার পর আমরা শুধু গ্রাম থকে পালালাম- শত শত মানুষ। শুধু আমাদের সন্তানদের নিয়ে এসেছি। প্রায় একই রকমের বর্ণনা দিয়েছে অপর এক শরণার্থী মোহাম্মদ সাহেদ ও তার ছেলে মোহাম্মদ শুফি।
এ সপ্তাহের শুরুতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তায়ুং পিয়ো লেত ইয়ারে সামরিক বাহিনীর একটি দলকে সক্রিয় থাকতে দেখেছে। রোহিঙ্গা শরনার্থীরাও এমন একটি ৪০ সদস্যের একটি মিলিটারি পেট্রোল দেখার কথা বলেছে। দলটি প্রায় প্রতিদিনই গ্রামটিতে অভিযান চালাতো। সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকজন মানুষ জানিয়েছে যে, তায়ুং পিয়ো লেত ইয়ারের ২০০ মিটারের মধ্যে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি পোস্ট রয়েছে। আর ৩১ শে আগস্টের পর থেকে সেনাবাহিনী গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি দখল করা শুরু করেছে ও ওই পোস্ট ব্যবহার করেছে। ১১ই ও ১৩ই সেপ্টেম্বরে মুংদাও পৌরসভায় কয়েকটি নতুন আগুন জ্বলার ঘটনা সনাক্ত করে স্যাটেলাইট।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031