নির্বাচন কমিশন (ইসি)কে আরো শক্তিশালী ও দক্ষ করার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য । একই সঙ্গে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে রাজনৈতিক দল ও সরকারের আন্তরিকতা, সদিচ্ছাও প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এমন মত দেন। আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের কো-অর্ডিনেটর দিলীপ সরকার। লিখিত বক্তব্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকার সঠিকতা নিশ্চিতকরণ, সীমানা পুনঃনির্ধারণ, ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণ ও নির্বাচনী ব্যয় হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণের ওপর আলোকপাত করা হয়।
সুজন সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেই হবে না, তা হতে হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি করণীয় ও ভূমিকা নির্বাচন কমিশনের। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি চায় তাহলেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। ইসি গঠনে আইনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উল্লেখ করে এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, বিচারকদের অপসারণ নিয়ে এত কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ইসি গঠনে সংবিধানে যে আইন করার বিধান রয়েছে এটি কেউ বলে না। শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা সুস্পষ্ট যে, নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে এবং সরকারকেও এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে হবে। আর নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো দরকার। তিনি বলেন, সঠিক ভোটার তালিকা, সীমানা পুনঃনির্ধারণ, ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণ এবং প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণ- এ বিষয়গুলো যদি সঠিক না হয় তাহলে চাইলেও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলে মনোনয়ন বাণিজ্য এখন তৃণমূলে পৌঁছেছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে রাজনৈতিক সমঝোতার ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশন একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারেরও সদিচ্ছা থাকা উচিত। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ৩ হাজারের বেশি জনবল দিয়েও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হচ্ছে না, এটি দুঃখজনক। আলী ইমাম মজুমদার বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারিনি। এজন্য আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে, যেটি আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচনে দেখিনি। ইসিকে আরো শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয় তাহলে সেটি হবে দুঃখজনক।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নির্বাচন পরিচালনায় অংশ নেয়া ৬ লাখ সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারীদের আন্তরিকতা, নির্বাচনে যথাযথ নিরাপত্তা এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য আইন তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি- যেটি এখন সুবিধাভোগীদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে- এটির পরিবর্তন করতে হবে। না হলে যত ভালো নির্বাচন কমিশনই হোক না কেন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রথমেই প্রয়োজন নিরাপত্তা। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু সেখানে ৩৩০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে নিরাপত্তা খাতে। এতেই বোঝা যায় নিরাপত্তার অবস্থাটা কি। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করি গত নির্বাচনে কোন কোন জায়গায় কি কি সমস্যা ছিল তা নির্বাচন কমিশনও বলতে পারবে না।
কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি দক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন না করে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ তারা মোকাবিলা করুক- সেটাই আমরা চাই। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের যে কর্মতৎপরতা তাতে কিছু কিছু অস্পষ্টতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদের কি দায়িত্ব সেটি তারাই ভালো জানে। সৈয়দ আবুল মকসুদ আরো বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন কী কী পদক্ষেপ নেবে সেটি আমরা তাদের কাছ থেকে জানতে চাই। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছিল। এখন আরেকটি নির্বাচন যাতে অধিকতর বিতর্কিত না হয় সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে আরো দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সুজনের সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031