একটি প্রতারক চক্র পদ্মা সেতুর উন্নয়নের নামে এখনো চাঁদাবাজি করছে । সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে এ চাঁদাবাজি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জানাজানির পর কিছুদিন এটি বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি আবার সেই চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পদ্মা সেতুর নামে কোনো ধরনের চাঁদা না দেয়ার জন্য সবাইকে সতর্ক করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এই চক্রকে আইন আইনের আওতায় আনার জন্য অনুরোধ করেন।
এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এসএম ওয়াহিদুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, এ প্রতারক চক্র পদ্মা সেতু উন্নয়নের নামে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাঁদা উঠাচ্ছে।

 সরকারের স্পষ্ট নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে পদ্মা সেতুর নামে কোনো টাকা উঠানো যাবে না। তারপরও অনেক শিক্ষক অসাবধানতাবশত এ প্রতারক চত্রুকে টাকা দিচ্ছেন। এটা না দেয়ার জন্য আমরা সবাইকে সতর্ক করেছি।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশের আইজি, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সব জেলা প্রশাসক, শিক্ষা অফিস, শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, মাদ্‌রাসা শিক্ষা বোর্ড, দেশের সব আঞ্চলিক উপ-পরিচালক, সব জেলা শিক্ষা অফিসের নামে চিঠি ইস্যু করে ৫ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সেখানে মাউশি, আঞ্চলিক অফিস এবং জেলা অফিসের নাম স্বাক্ষর নকল করে তারা চিঠি ইস্যু করছে। চিঠিতে পদ্মা সেতু’র উন্নয়নে প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পাঁচ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে ৩০শে অক্টোবরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বরাবর ডাচ্‌-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব নম্বর ঝঐঅঐ অখঅগ: ৭০১৭০১৫০৫৩০-এর অনুকূলে পাঠাতে বলা হয়।
জানা গেছে, সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে কয়েকটি জেলায় প্রতারক চক্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের চিঠি ডাকযোগে পাঠায়। চিঠি পাঠানোর পর কয়েকজন ব্যক্তি স্কুলের শিক্ষকদের ফোন ও মেসেজ দিয়ে জানায়, আপনার স্কুলের কতজন, শিক্ষার্থী, কত টাকা উত্তোলন হয়েছে ব্যাংকে পাঠানোর পর নির্ধারিত কয়েকটি নম্বরে এসএমএস করে জানানোর কথা বলেন। গাইবান্ধায় এ ধরনের চিঠি বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসের নজরে আসে। এরপর তা আঞ্চলিক অফিসে জানানোর পর মাউশি’র নজরে আসে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি দিয়ে সবাইকে এ ধরনের প্রতারক চক্রকে টাকা না দেয়ার কথা জানান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের কোনো চিঠি কখনই ইস্যু হয়নি। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই জালিয়াত চক্র এ ধরনের পত্র জারি করেছে। জনস্বার্থে এ ধরনের জালিয়াত চক্রকে আইনের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ করেন।
এর আগে, গত ২৫শে সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে সতর্ক করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। ওই গণবিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়েছিল, জাল করে পত্র জারি করেছে একটি জালিয়াত চক্র। পদ্মা সেতুর নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের চাঁদা আদায় না করতে বলা হয় গণবিজ্ঞপ্তিতে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ধরনের কোনো নির্দেশনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়নি। কোনো কুচক্রী মহল নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এ হীন কার্যক্রম শুরু করেছে। এই পত্রটি সম্পূর্ণ জাল-জালিয়াতি করে করা হয়েছে। এ অবস্থায় ওই পত্রের বিষয়ে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানায় মন্ত্রণালয়।
Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031