বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী ফেনীতে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় ফেনীর আওয়ামী লীগ নেতা আজহারুল ইসলাম সত্য প্রকাশ করে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন । এই হামলা ফেনী সদরে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর পরিকল্পনায় হয়েছে-আজহারুলের এমন দাবির প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেছেন, ‘সত্যকে চাপা দিয়ে রাখা যায় না।’

বুধবার নয়াপল্টনে দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা কখনোই সফল হয় না, শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে হাটে হাড়ি ভেঙে দিয়েছেন।’

গত ২৮ অক্টোবর কক্সবাজার অভিমুখে খালেদা জিয়ার বহরে হামলা হয় ফেনীতে। হামলাকারীরা গণমাধ্যম কর্মীদের বহনকারী একাধিক গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেয়। এই ঘটনার জন্য বিএনপি শুরু থেকেই আওয়ামী লীগকে দায়ী করে আসছে।

তবে দুই দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে দুই নেতার টেলিফোনালাপের রেকর্ড প্রকাশের পর আওয়ামী লীগ নেতা সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ‘বড় নিউজ’ তৈরি করতে নিজেরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, যে দুই জনের মধ্যে কথোপকথন প্রকাশ হয়েছে তাদের একজন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন। অন্যজন ফেনী বিএনপির নেতা মোবারক। ওই কথোপকথন অনুযায়ী একজন ফেনীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা অপরজনকে কীভাবে হামলা হবে, তা বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। আর মোবারক নামে ওই ব্যক্তি অপরজনকে আশ্বস্ত করেন, খালেদা জিয়া বা বিএনপি নেতাদের গাড়িতে হামলা হবে না, ভাঙা হবে কেবল গণমাধ্যমের গাড়ি। আর এই ঘটনায় ছাত্রলীগের স্থানীয় কয়েকজনকে ভাড়া করে আনা হবে।

তবে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আজহারুল হক ঘটনার প্রায় এক মাস পর মঙ্গলবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, ফেনী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর পরিকল্পনায় এই হামলা হয়েছে।

আজহারুলের এই বক্তব্য তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ নেতা) বলেছেন সম্প্রতি কক্সবাজার যাওয়ার পথে ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে যে হামলা হয় তার নেপথ্যে ছিল ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী।’

‘বিএএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে যে হামলা চালিয়েছে সেটি আরো উপর অর্থাৎ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়েই যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল সে বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ নাই। থলের বিড়ালকে বেশিদিন আটকিয়ে রাখা যায় না।’

সম্প্রচার আইনতে বাক স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমে স্বাধীনতা বন্ধ করার হাতিয়ার হিসেবেও বর্ণনা করেন রিজভী। বলেন, ‘এই আইনের শিরোনামকে যতই ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরা হোক না কেন, এটি যে বিরোধীদল, বহুমত বিশ্বাসীদের স্বাধীন চিন্তার উপর কুঠারাঘাত করার জন্যই এই আইন পাস করার তোড়জোড় শুরু করেছে সরকার।’

‘সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা বিরোধিতা ও বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচিকে বেপরোয়াভাবে দমন করার জন্যই এই আইন করা হচ্ছে।’

রিজভী বলেন, ‘এই ভোটারবিহীন সরকারের আমলে তাদের সৃষ্ট নানা গণবিরোধী আইনের মধ্যে এই হবে আরেকটি ভয়াবহতম কালো আইন। বাংলাদেশের মানুষ এমন আইন মেনে নেবে না।’

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ‘ভোটারবিহীন’ ‘স্বৈরশাসকদের’ হটাতে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “যতই ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগ করুক না কেন, তাদের শেষ রক্ষা হবে না। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অচিরেই ‘গণতন্ত্র’ পুনরুদ্ধার হবে।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আজিজুল বারী হেলাল, এম এ মালেক, কাজী আবুল বাশার প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031