জাকির হোসেন রোড এবং আশপাশের এলাকা এবং ২ নম্বর গেইটস্থ চশমা গলি এলাকায় দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে ,নগরীর জিইসি মোড়স্থ বাটা গলি এলাকা । এতে এসব এলাকার দোকানদার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভাঙচুর করা হয়েছে চশমার দোকান, ফ্রিজের দোকান, সিলন ব্যাংকের বুথ ও রাস্তায় পার্কিং করা গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বেপরোয়াভাবে। এতে দুইজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ দুইজনকে আটক করার কথাও বলেছে। সর্বশেষ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জিইসির মোড়ে ছাত্রলীগের বিবদমান দুইটি গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। চশমা গলি এলাকায় আকস্মিকভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক। গতকাল বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা এই তাণ্ডব চালায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দু’জনকে আটক করেছে। তাণ্ডবকারীদের দুইজনকে স্থানীয় লোকজন চিনতে পেরেছে উল্লেখ করে বলেন, তারা হলেন জিইসি মোড়ের বাটা গলির টনি এবং আরিফ। এ বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন জানান, জিইসির মোড় এলাকায় আমরা যখন তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে এ ধরনের সংঘর্ষের দৃশ্য দেখতে দেখতে ক্লান্ত। প্রভাব বিস্তার ও গ্রুপিংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র দা, কিরিচ ও অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে দোকানপাট ভাংচুর শুরু করেন তারা কথায় কথায়।

স্থানীয়রা দোকানদাররা জানান, তারা মারামারি করবে। আমাদের দোকানপাটের কি দোষ? পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আচমকা জিইসি মোড়স্থ বাটা গলির মুখে দৌঁড়াদৌঁড়ি শুরু করে একদল যুবক। এরপর শুরু হয় বেপরোয়া ভাংচুর। ভাংচুরের কবলে পড়ে বাটার গলির মুখে অবস্থিত সিলন ব্যাংকের বুথ ও আরো ৩/৪টি দোকানপাট। এসময় আশপাশের ৮/১০টি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ভাংচুরের সময় জয় বাংলা োগানও দেয়া হয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে পুলিশ আসার পর তারা সরে পড়ে। এদিকে বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকেও ২০–৩০ জন ছাত্রলীগ কর্মী লোহার রড ও লাঠিসোঠা নিয়ে আবার ভাংচুর শুরু করে। এমইএস কলেজের সামনে থেকে জাকির হোসেন রোডস্থ মহিলা কলেজের সামনে পর্যন্ত গেলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এর মধ্যে তারা একটি ব্যাংকের বুথ, কমপক্ষে আটটি দোকান ও তিনটি গাড়ি ভাংচুর করে। এরপর তারা চশমা গলির মুখে প্রবেশ করে তাণ্ডব চালায়। ওই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ হাসান খান জানান, অন্তত ৩০ জন সন্ত্রাসী লাঠি–সোটা নিয়ে জড়ো হয়। লোকজন কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা এক ভ্যান গাড়ি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একেক জন চিরুনি, মাস্ক, নেইল কাটার, হাতের চুড়ি ইত্যাদি নিয়ে নেয়। এসময় মামুন নামের ওই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের কাছে টাকা চাইলে সবাই মিলে তাকে বেদম প্রহার করে। ওইসময় তার পাশে থাকা ফুটপাতের কাপড় ব্যবসায়ী মামুনকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও বেদম প্রহার করা হয়। আশপাশের লোকজন ডাকাত বলে চিৎকার করে এগিয়ে এলে তারা প্রধান সড়কে উঠে দুই নম্বর গেটের দিকে এসে জনতার সাথে মিশে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ কমিশনার (ডিসি–উত্তর) মোহাম্মদ আব্দুল ওয়ারিশ খান জানান, বনফুলের একটি শোরুম, একটি ফটোস্ট্যাটের দোকান ও একটি স্টেশনারি দোকানে ভাংচুর করা হয়েছে। তিনটি প্রাইভেট কারও ভাংচুর করা হয়েছে। কি কারণে ভাংচুর করা হল, সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি। তিনি জানান, এ বিষয়ে তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি জানান, আচমকা কারা কেন, এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এখানে ছাত্রলীগের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলেও তিনি দাবি করেন।

ঘটনার ব্যাপারে এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ একাংশের সভাপতি মোহাম্মদ মোহসিন বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে ইউএসটিসির এক ছাত্রের সাথে। তার নাম সাদমান। রাফি নামের আরেক ছাত্রের কথা কাটাকাটির জের ধরে এই ঘটনা ঘটে। রাফি এমইএস কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হলেও ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। ঘটনার বিবরণে আরেকটি সূত্র জানায়, সাদমান ইস্পাহানি স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। গত বুধবার দুপুরে তিনি ওমরগণি এমইএস কলেজের মাঠে কনসার্টের আয়োজন করেন। মহিউদ্দীন চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকাহত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করে কনসার্টটি বন্ধ করে দেয়। এই ঘটনার জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এমইএস কলেজের একদল কর্মীর সঙ্গে সাদমান ও তার অনুসারীদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে রাফির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভাংচুরে জড়িয়ে পড়েন। ভাংচুরের সময় ছাত্রলীগের এক কর্মী আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে আটকের তথ্য দিয়ে ডিসি ওয়ারিশ খান বলেন, ভাঙচুরের কারণ জানতে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তবে আটককৃতদের নাম ঠিকানা জানায়নি পুলিশ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031