বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিখোঁজের পর যারা ফিরে এসেছেন, তারা সরকারের নির্দেশে মুখ খুলছেন না বলে দাবি করেছেন । তার অভিযোগ, ফিরিয়ে দেয়ার আগে এদের বলে দেয়া হচ্ছে যদি এ বিষয়ে তারা মুখ খোলে, তাহলে পরের বার তারা আর ফিরবে না।
রবিবার রাজধানীতে বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক সমাবেশে এসব কথা বলেন বিএনপি নেত্রী। সমাবেশটি হয় মহানগর নাট্যমঞ্চে।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করতে চাইছে। তাদের অন্যায়-অপকর্মের বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে, তাদের গুম, হত্যা, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’
গত কয়েক বছর ধরেই গুম আর বিভিন্ন ব্যক্তির নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে সমালোচনা আছে। আবার নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর যারা ফিরে এসেছেন, তারা ফিরে এসে কারা নিয়ে গিয়েছিল, সে বিষয়ে কিছু জানাননি।
নিখোঁজ হওয়ার প্রায় আড়াই মাস পর গত নভেম্বরে বাড়ি ফেরা ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়, এবং গত সপ্তাহে ফেরা সাংবাদিক উৎপল দাস এবং শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজারও জানাতে পারেননি কারা তাদের ধরে নিয়েছিল। তিন জনই বলেছেন, যারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল এবং যারা ফিরিয়ে গিয়েছিল তাদের কাউকে চিনতে পারেননি তারা।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘অনেকে ফিরে আসছে। তাদেরকে বলে দেয়া হচ্ছে, এবার তো আসছ, বাড়াবাড়ি করলে ফেরত দেয়া হবে না। এ জন্য যারা আসছে তারা মুখ খুলছে না।’
প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বক্তব্যে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, লুটপাট, গুম-খুন ও নির্যাতনের অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। প্রধান বিচারপতিকে জোর করে অপসারণ করার অভিযোগ করে একে ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ বলে অভিহিত করেন তিনি। এজন্য আওয়ামী লীগের শাস্তি হওয়া উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
বর্তমান সরকারের ‘অত্যাচার, নির্যাতনের’ বিরুদ্ধে সোচ্চার হতেও মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। বলেন, ‘জানি আপনাদের বয়স হয়েছে। কিন্তু আপনাদের অভিজ্ঞতা আছে সেটা কাজে লাগাতে হবে। আর একবার জেগে উঠুন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। অন্য রাজনৈতিক দলকেও বলবো আসুন দেশের জন্য গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ হই।’
এক ব্যক্তির নির্দেশে দেশ চলছে অভিযোগ করে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘তার (শেখ হাসিনা) নির্দেশ সব জায়গায় পৌঁছে দেয়া হয়। এজন্য আওয়ামী লীগের লোকজন অপরাধ করলেও তাদের শাস্তি হয় না। আর বিএনপির লোক অপরাধ না করে ধরে মামলা দেয়া হয়।’
‘নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনেই’
বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে আন্দোলন, সংগ্রামের পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। বলেন, নির্বাচনকালীর নির্দলীয় সরকারের অধীনেই ভোটে যাবেন তারা।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেত্রী বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
বর্তমান সরকারের আমলে দেশে ব্যাপক উন্নয়নের দাবি নিয়েও কথা বলেন খালেদা জিয়া। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অনেক তো উন্নয়ন করেছেন বলছেন। তাহলে জনগণের হাতে ছেড়ে দেই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। বিএনপি নির্বাচনের দল। আমরা নির্বাচন করে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই।’
‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে দায়ী চাঁদাবাজি’
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার জন্য সরকারি দলের লুটপাট ও ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজিকে দায়ী করেন খালেদা জিয়া।
বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘৭০ টাকা চালের কেজি। তারা তো ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে বলছিল। ১২০ টাকা পেঁয়াজের কেজি। মানুষ কয়েকদিন পর পেঁয়াজের নাম ভুলে যাবে। শুধু কয়টা ভাত খেয়ে থাকতে পারলেই হবে। এই হলো অবস্থা।’
‘শীতকালে সবজির দাম কম হওয়ার কথা। কিন্তু ৬০ টাকার নীচে নেই। এর কারণ হলো আওয়ামী লীগের লুটপাট। আর ঘাটে ঘাটে চাঁদা। এজন্য সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। অথচ সরকারের এদিকে কোনো খেয়াল নেই।’
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপি ও সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
