দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই জ্ঞান অর্জন করতে হবে। একটা অর্গানাইজেশনের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তার দক্ষ মানবসম্পদ।আবার সেই জ্ঞান চর্চা করা না হলে অর্থাৎ চর্চাটা যদি গতিশীল না থাকে তবে তা এক সময় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে দি ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেনস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত সিপিডি সেমিনার অন ‘নলেজ ম্যানেজমেন্ট – এ স্ট্র্যাটেজিক এ্যান্ড ডায়নামিক টুল ফর সাকসেস’ শীর্ষক সেমিনারে আলোচকবৃন্দ এ অভিমত ব্যক্ত করেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব রক্ষণ বিভাগের প্রফেসর ও রূপালী ব্যাংকের পরিচালক ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদ পত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিএবি ভাইস প্রেসিডেন্ট মোদাচ্ছের আহমেদ সিদ্দিকী। সেশন চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলেন আইসিএবির সাবেক প্রেসিডেন্ট শওকত হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক নিজের কর্মমুখর জীবন ও দৈনিক আজাদীর ৫৮ বছরের পথ চলার দিক উল্লেখ করে বলেন, নলেজ ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে আমি যেটা বুঝি, তা হলো যেকোন কিছুতে লেগে থাকা। স্বপ্নকে সার্থক করে তুলতে এর বিকল্প নেই। মূল প্রবন্ধে রচয়িতা যথার্থই বলেছেন, সত্য বিষয়টি নিজে বিশ্বাস করা এবং তা প্রতিষ্ঠায় অবিচল থাকা। তিনি মিডিয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, মিডিয়া হচ্ছে মাধ্যম। মানুষ যা ঘটাচ্ছে তা নিউজ ও ছবির মাধ্যমে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করাটাই মিডিয়ার কাজ। অনেকে বলেন সংবাদ বস্তুনিষ্ঠ। আমি তা মানি না। সংবাদ হতে হবে সত্য নিষ্ঠ।
আজাদী সম্পাদক বলেন, আমি মিডিয়ার সাথে জড়িত, আবার আজাদীর ম্যানেজমেন্টের সাথেও জড়িত। ম্যানেজমেন্ট নিয়ে এখন অনেক লেখাপড়া করার সুযোগ আছে, প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। আমি সে সুযোগ পাই নি। তবে আমার জীবন এবং আজাদীকে এত দূর নিয়ে আসার অভিজ্ঞতা আমাকে সবকিছু কীভাবে ম্যানেজ করতে হয়, তা শিখিয়েছে। অর্থাৎ বিষয়টা অনেকটা ‘চেয়ার মেকস ম্যান’ এর মত।
এম এ মালেক বলেন, ১৯৬০ সালে আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক সাধারণ মানুষের কথা বলার প্রয়োজনে দৈনিক আজাদী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই অঞ্চলের প্রথম মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তিনি। আজাদী আজ কেবল চট্টগ্রামের প্রাচীন দৈনিকই নয়, তা এ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বৃহত্তর চট্টগ্রামের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, রাজনীতি, আন্দোলন–সংগ্রামসহ সবকিছুকে ধারণ করে দৈনিক আজাদী ৫৮ বছর ঠিকে আছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দৈনিক আজাদী নিজেকে বদলেছে বলেই জনপ্রিয়তায় শীর্ষে আছে এই দৈনিক। তিনি আজাদীর মাধ্যমে চট্টগ্রামকে তুলে ধরতে চেয়েছেন, আজো আজাদী সে চেষ্টায় ব্যস্ত আছে। পত্রিকা প্রকাশের দুই বছরের মাথায় বাবা মৃত্যুবরণ করেন। আমার বয়স তখন ২১ বছর। এই বয়সেই বাবার স্বপ্নকে ধারণ করেছি আমি। পাঠকের প্রত্যাশার পূরণ করতে পেরেছে বলেই আজাদীকে পাঠক আজও খুব ভালোবাসে। পাঠকের প্রত্যাশার কাছাকাছি থাকতে না পারলে পাঠক সরে যাবে।
তিনি বলেন, বাবা কিছু জমি রেখে যান, তা ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখি। কখনো কারও কাছ থেকে ধার করিনি। দৈনিক আজাদী এত বছর টিকে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ম্যানেজমেন্টের উপর কোন লেখাপড়া ছিল না আমার। বাবা একটা কাগজ ও একটা ছাপাখানা রেখে গিয়েছিলেন। কাগজটা তো আমাকে রাখতে হবে। যদি বন্ধ করতাম তাহলে লোকে বলত– আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের ছেলে তার রেখে যাওয়া কাগজটা চালু রাখতে পারেনি। শুধু এজন্য কাজ করে গেছি। ৪০ বছর নিজ হাতে সকালে হকারদের কাগজ দিয়েছি। অনেক সময় প্রুফ রিডারের কাজ করেছি। নিউজ করেছি। ছবি তুলেছি। ছয় দফা আন্দোলনের সময় ছবি তুলতে গেলে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। চট্টগ্রামবাসীর কাছ থেকে ভালোবাসা আর সমর্থন না পেলে আজাদীর পক্ষে এত বছর টিকে থাকা সম্ভব হত না। আজাদী সময়ের সাথে আছে বলেই পাঠক আজাদীর সাথে এখনো আছে।
এম এ মালেক বলেন, নলেজ ম্যানেজমেন্ট ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ভালো দিক যেমন আছে, তেমনি খারাপ দিকও আছে। নোবেল প্রাইজ যার নামে তিনি ডিনামাইট আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু এটি বিষ্ফোরক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তবে প্রযুক্তির সাথে থাকতে হবে, নয়তো পিছিয়ে পড়তে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের প্রধান যে রপ্তানি খাত সে গার্মেন্টস সেক্টরে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। প্রবন্ধকার ২০২৫ সালের প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যে চিত্র তুলে ধরেছেন তাতে মনে হচ্ছে সামনের সে দিনগুলোতে লাখ লাখ শ্রমিকের জায়গা দখল করে নেবে যন্ত্র। তখন বিশাল জনসংখ্যার এ দেশে প্রযুক্তির সেই খারাপ দিকটার ম্যানেজমেন্ট কিভাবে করা যায় সেটা নিয়ে এখন থেকেই ভাবতে হবে।
তিনি আইসিএবি’র কর্মকৎপরতার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, আজাদী আপনাদের সাথে আছে। আজাদীকে যদি আপনাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত করেন, তবে আমরা তা পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। আমরাও আপনাদের থেকে জানতে চাই, মানুষকে জানাতে চাই।
‘নলেজ ম্যানেজমেন্ট – এ স্ট্র্যাটেজিক এ্যান্ড ডায়ানেমিক টুল ফর সাকসেস’ শীর্ষক প্রবন্ধে ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, নলেজ কী আমাদের জানতে হবে। নলেজ ইজ এ পোটেনশিয়াল পাওয়ার। নলেজ লোহার পাতের মতো, যেটি গুদামে দিনের পর দিন রেখে দিলে একসময় মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। তিনি তাঁর গবেষনায় জীবনে সফলতার জন্য জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোকে বিভিন্ন উপায় তুলে ধরেন। যা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারলে সফলতা অর্জনের জন্য নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। অনুষ্ঠানে আইসিএবি’র চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক কামরুল ইসলাম ধন্যবাদ জানান।
