মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাড়ে নয় বছর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতি মামলাটি তাড়াহুড়ো করে শেষ করার অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগ, সরকার বিএনপি নেত্রীকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চায় বলে দ্রুততার সঙ্গে মামলাটি শেষ করেছে।

শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল কাদের ভুইয়া জুয়েল ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলীর মুক্তির দাবিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা পাঁচটি দুর্নীতি মামলার মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায় ঘোষণা হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি।

২০০৮ সালের জুলাইয়ে মামলা হওয়ার পর অভিযোগ গঠনেই লেগে যায় প্রায় ছয় বছর। আর সাড়ে তিন বছরে মোট ২৩৬ কার্যদিবসে শেষ হয়েছে এই মামলা। খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের পর রাষ্ট্রপক্ষ যেখানে একদিন যুক্তি দিয়েছে, সেখানে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছেন ১০ কার্যদিবস। অন্য দুই আসামির আইনজীবী যুক্তি দিয়েছেন আরও পাঁচ কার্যদিবস। তবে পলাতক তিন আসামির পক্ষে যুক্তি দেয়ার সুযোগ ছিল না। তবে ফখরুল দাবি করেছেন, এই মামলাটি নজিরবিহীন দ্রুততায় শেষ করা হয়েছে।

‘তাড়াহুড়ো করে অতি দ্রুততার সঙ্গে সেই মামলায় রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। এমনকি শেষ দিন আইনজীবী আরও কথা বলতে চাইলেও আদালত সেই সুযোগ দেয়নি।’

‘কেন এই তাড়াহুড়ো? কারণ, সরকার বিএনপিকে, বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়।’

যেনতেন রায় মানবে না জনগণ

মামলার বাদী দুদকের আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দাবি করেছেন। তাদের দাবি, মামলাটি পুরোপুরি প্রমাণ হয়েছে। এই মামলা বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে যাওয়া হলেও সেখানে বিচারক খালেদা জিয়ার আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছেন। কারণ, অভিযোগ সব সত্য।

তবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞ আইনজীবীরা আদালতে চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা শুধু খণ্ডন করেননি, মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। প্রমাণ করেছেন জাল নথি তৈরি করে এই মামলা করা হয়েছে।’

খালেদা জিয়ার সাজা হলে তা মেনে না নেয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘যেনতেন রায় দিলে জনগণ তা মেনে নেবে না। ন্যায়বিচার হতে হবে।’

অবশ্য ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়েও শঙ্কা আছে বিএনপি নেতার মধ্যে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু কার কাছে ন্যায়বিচার আশা করব। কারণ বিচারের বাণী নীরবে কাঁদে।’

‘খালেদা জিয়া উড়ে এসে জুড়ে বসেননি’- এমন মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘তিনি নয় বছর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। তিন বার দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। দেশের ১৬ কোটি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। তার সঙ্গে আপনারা (আওয়ামী লীগ) যে আচরণ করলেন, অসম্মান করলেন এই আচরণের জন্য জনগণ কোনোদিন আপনাদের ক্ষমা করবে না।’

রায় আগেই লেখা না হলে হুমকি কেন?

রায়ের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই বিএনপি নেতারা সরকারকে সতর্ক করে বক্তব্য রাখছেন। রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, খালেদা জিয়াকে জেলে নিলে দেশে আগুন জ্বলবে।

এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি গিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

মন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারি নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা হুংকার দিচ্ছেন, হুমকি দিচ্ছেন, রায়ের পর কিছু হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। কেন এই কথা মাথায় আসল? আমরা তো দেখছি এই মামলায় কিছু নেই। প্রসিকিউশন কোনো রকম অভিযোগ প্রমাণ করতে ফেইল হয়েছে। কেন বলছেন? কারণ, রায় পূর্ব থেকেই নির্ধারণ করা আছে।’

খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে বলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও দলের নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গার বক্তব্য উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘কেউ বলেন, আটদিনের মধ্যে খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে। কেউ বললেন ১৫ দিনের মধ্যে জেলে যেতে হবে। ঠিকই তো এই সময়ের রায় দেয়া হলো। তাহলে বিচারের এই প্রহসন কেন?’।

জনগণকে আন্দোলনের জন্য তৈরি করতে হবে

আন্দোলনের জন্য নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি জনগণকেও প্রস্তুত করার তাগাদা দেন ফখরুল। বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীদের বলবো শুধু তোমাদের প্রস্তুত হলে হবে না। জনগণকে প্রস্তুত করতে হবে। এবং আমাদের উপর চেপে বসা এই দানবকে সরাতে হবে।’

‘কোনদিন বাংলাদেশের মানুষ অন্যায়, স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদকে বরদাশত করেনি। গণঅভুত্থানের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করেছে।’

আওয়ামী লীগ পুরোপুরি মিথ্যার উপর টিকে আছে দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের সোনার ছেলেরা, ছাত্রলীগের ছেলেরা নিজেরা নিজেরা মারামারি করছে। যারা বিরোধিতা করছে তাদের মারধর করছে, মেয়েদের চুল ধরে মারধর করছে।’

‘আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম বলবো না সে বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি ছাত্রদল হামলা করেছে। কি মিথ্যা কথা! অথচ পত্র পত্রিকায় এসেছে ছাত্রলীগের লোকজন কীভাবে মারধর করছে।’

মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা বরকত উল্লাহ বুলু, ফজলুল হক মিলন এবং কাজী আবুল বাশার প্রমুখ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031