চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার এলাকার গৃহবধূ তাহমিনা আকতারের ফ্রান্স প্রবাসী স্বপন কুমার দাশের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় । স্বপনের কাছে পরিচয় গোপন রেখে বিধবা সাজেন দুই সন্তানের মা তাহমিনা। অথচ এই গৃহবধুর স্বামী মধ্যপ্রচ্যের দুবাই প্রবাসী।
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে স্বপনের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় ঘটে সুন্দরী তাহমিনার। এরপর ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে পর¯পরের ঘনিষ্টতা বাড়তে থাকে। এক সময় দুজনের মধ্যে গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক।

এক পর্যায়ে বিয়ের প্রস্তাব দিলে রাজি হন তাহমিনা।
সুযোগ পেয়ে জমি কেনাসহ নানা বাহানায় স্বপন কুমারের কাছ থেকে টাকা নিতে থাকেন তিনি। স্বপন কুমারও প্রস্তুতি নিতে থাকেন বিয়ের। তাহমিনাকে বিয়ের জন্য ধর্মান্তরিতও হন স্বপন কুমার। বিয়ের প্রলোভনে স্বপন কুমার মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে দফায় দফায় ৪,৫৬০ ইউরো (বাংলাদেশি টাকায় তিন লাখ ৯৫ হাজার টাকা) পাঠান তাহমিনার কাছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এ টাকা পাঠান তিনি।
একসময় স্বপন জানতে পারেন, তাহমিনা বিধবা নয়, বিবাহিত নারী, দুই সন্তানের জননী। তাহমিনা তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এ ঘটনায় আদালতের আশ্রয় নেন স্বপন। মুহাম্মদ মহসিন নামে এক বন্ধুকে আমমোক্তার নিয়োগ দেন স্বপন কুমার।
গত বছর ১৪ই নভেম্বর মহানগর হাকিম আবু ছালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে স্বপন কুমারের পক্ষে মামলা করেন মহসিন। এতে তাহমিনা আকতার, তার ভাই সেলিম মিয়া ও নবাব মিয়া এবং স্বামী আবদুর রহিমকে আসামি করা হয়।
আদালতের মাধ্যমে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)র চট্টগ্রাম মেট্রো শাখার পরিদর্শক কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। তদন্ত শেষে স্বপনের সঙ্গে গৃহবধূ তাহমিনার প্রতারণার সত্যতা পান পিবিআইর এ কর্মকর্তা।
অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় তাহমিনার দুই ভাই ও স্বামীকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেন পরিদর্শক শহীদুল ইসলাম। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয় গৃহবধু তাহমিনার বিরুদ্ধে।
ফলে গত ২০শে জানুয়ারি রাত দেড়টার দিকে চট্টগ্রামের চকবাজারের বাসা থেকে তাহমিনাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ২১শে জানুয়ারি তাকে আদালত উপস্থাপন করে জামিনের আবেদন জানান তার আইনজীবী। কিন্তু এ নিয়ে বিস্তারিত শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এ প্রসঙ্গে পিবিআইর চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক শহীদুল ইসলাম বলেন, বিধবা সেজে ফ্রান্স প্রবাসী স্বপনের সঙ্গে তাহমিনার প্রতারণার সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। স্বপনের সঙ্গে প্রতারণার কথা স্বীকারও করেছেন তাহমিনা।
তবে তাহমিনা দাবি করেছেন বিয়ের কথা বলে নয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে স্বপনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন তিনি।
পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, তাহমিনার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সামদার পাড়ায়। দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন নগরীর চকবাজার এলাকায়। তার স্বামী আবদুর রহিম মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই প্রবাসী। আর স্বপনের বাড়ি ফরিদপুর জেলায়।
মামলার বাদি মুহাম্মদ মহসিন জানান, জীবিকার সন্ধানে স্বপন কুমার দাশ প্যারিসে যান। ২০০২ সালে লাভ করেন ফ্রান্সের নাগরিকত্ব। এরপর বিয়ে করে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ২০১০ সালে মারা যান তার স্ত্রী মিসিল। এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে পঙ্গুত্ব বরণ করেন স্বপন।
এর মধ্যেই ফেসবুকের মাধ্যমে তাহমিনার সঙ্গে স¤পর্ক গড়ে ওঠে তার। এ সম্পর্কের সূত্র ধরেই এ প্রতারনার ঘটনা সংঘটিত হয়।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031