গত ৭ ফেব্রুয়ারি ওই কিশোরীকে নির্যাতনের ঘটনাটি মোবাইল ফোনে ধারণ করেন একজন পথচারী। এরপর সেটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন তিনি। মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। আর পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবি জানাতে থাকে মানুষ।
বঙ্গভবনের সামনে এক কিশোরীকে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের পিটুনির ঘটনায় সমালোচনার ঝড় বয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বাহিনীটি। এমনকি সড়কে পেটানো সদস্যদের পক্ষেই কথা বলছেন কর্মকর্তারা।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে এ বিষয়ে আর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
যে স্থানটিতে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি বঙ্গভবনের প্রবেশমুখের পাশে। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম পেরিয়ে সোজা রাস্তাটি শিল্প ব্যাংকের সামনে চলে গেছে, একটি বঙ্গভবনের দিকে গেছে। ঠিক এই টার্ন নেওয়ার জায়গায় এক কিশোরী রাস্তা অতিক্রম করার চেষ্টা করে। তাকে সেখানের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ক্রমাগত শারীরিকভাবে আঘাত করতে থাকে। একসময় কিশোরীটি রাস্তায় পড়ে গেলেও তার ওপর চড়াও হয় পুলিশ সদস্য।
একজন পথচারী ভিডিওটি করছিলেন, পরে পুলিশ সদস্যরা এসে তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তাকে ধমক দিয়ে ওই এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, মেয়েটির হাতে একটি কালো ব্যাগ। সেটি খোলা। ভেতরে কিছু কাপড় আছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা মেয়েটিতে সজোরে চড় মারছেন। সে সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের একজন কনস্টেবল।
মেয়েটিকে সড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর এক পুলিশ সদস্য ভিডিও করা লোকটির দিকে এগিয়ে যান। বলেন, ‘এই মিয়া এই কী করছেন?’ জবাবে ওই ব্যক্তি বলছিলেন, ‘আপনারা মারতেছেন, আমি ভিডিও করছি।’
তখন পুলিশের ওই সদস্য ভিডিও ধারনকারীকে বলছিলেন, ‘পাগল নাকি?’ পরে পুলিশ সদস্য তাকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘যান এখান থেকে, যান’।
এরপর মোবাইল ফোনের ক্যামেরাটি আর পুলিশের দিকে তাক করাতে পারেননি ওই ব্যক্তি।
ভিডিওটি কে করেছেন বা কে প্রথম ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছেন তা এখনও জানা যায়নি। এমনকি কেন মেয়েটিকে মারা হয়েছে সেটাও জানা যায়নি।
ওই ভিডিওতে সাইফুল ইসলাম সাইফ একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এই সব পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত সকল কে জানাই অন্তরের অন্তস্থল থেকে তাদের সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা। দোয়া করি আপনাদের সন্তানদের যেন এইভাবে জানোয়ারের মতো কেউ না মারে!’
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার শিবলী নোমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এটা রাষ্ট্রপতির মুভমেন্টের ফোর্স তাই বিষয়টি ডিসি প্রটেকশন দেখছেন। ’
বঙ্গভবন ও গুলিস্তান এলাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ঢাকা পূর্ব জোনের অনুকূলে। তবে ভিডিওটিতে দেখা গেছে ঘটনার সময় দুদিকের রাস্তার যান চলাচল স্বভাবিক ছিল। লোকজনও চলাচল করছিল।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্তি উপ কমিশনার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে শুনিনি। তবে যেহেতু রাষ্ট্রপতির মুভমেন্টের ফোর্স সেহেতু বিষয়টি ডিসি প্রটেকশন দেখবেন।’
তবে ডিসি প্রটেকশন হামিদা পারভীনের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সেটি রিসিভ করেননি।
নানা অনুষ্ঠানে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বরাবর পুলিশ যে জনগণের বন্ধু সেই বিষয়টি তুলে ধরেন। সদস্যদের আচরণগত পরিবর্তনের তাগাদাও দেন। কিন্তু প্রায়না মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশের বিরুদ্ধে অন্যায্য আচরণের অভিযোগ উঠেছে। বছর দেড়েক আগে চন্দ্রিমা উদ্যানে একটি শিশুকে ঘিরে কয়েকজন পুলিশের মারধরের ছবিও ভাইরাল হয়েছিল। সে নিয়ে তখন ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল, গঠন হয়েছিল তদন্ত কমিটি। তবে শেষ পর্যন্ত কেউ সাজা পেয়েছে, এমন তথ্য নেই।
তবে উল্টো চিত্রও আছে। গত বছর ৭ জুলাই কুমিল্লায় খাদে পড়া বাস থেকে ২০ থেকে ২৫ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে প্রশংসা পেয়েছিলেন কনস্টেবল পারভেজ মিয়া। তাকে এই সাহসিকতার জন্য এবারের পুলিশ সপ্তাহে দেয়া হয় পুলিশ পদক।
আবার চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভুল কেন্দ্রে চলে যাওয়া এক কিশোরীকে মোটরসাইকেলে করে নিজের কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে প্রশংসা কুড়ান পুলিশ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।
