পাকিস্তান আমলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষান স্বীকৃতি দেয়ার আন্দোলনের সেনানী আব্দুল মতিন পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন সাড়ে তিন বছর আগে। কিন্তু তার চোখের জ্যোতি এখনও নেভেনি।

২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর মারা যান এই ভাষা সংগ্রামী। তবে তার আগে দান করে গেছেন তার দুটি চোখ। আর একটি কর্নিয়ায় চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন ঢাকার ধামরাই উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম সুয়াপুরের স্বাস্থ্যকর্মী রেশমা নাছরিন। অপর কর্নিয়াটি সংযোজন করা হয়েছে সাতক্ষীরার কলেজ শিক্ষক ইকবাল কবিরের চোখে।

সুয়াপুর ইউনিয়নের সুয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী ৩২ বয়সী রেশমা নাছরিন ঢাকাটাইমসকে জানান, তার বয়স যখন আট, তখন তার বাম চোখে চুলকানি অনুভূত হয়। এক সময় চুলকানির পরিমাণ বেড়ে যায় ও পানি ঝরা শুরু হয়। বিভিন্ন সময় চিকিৎসা নিয়েও অবস্থার অবনতি হচ্ছিল না। ধীরে ধীরে তার বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে আসতে থাকে। ২০১৩ সালে ধামরাই সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে রেশমা মাস্টার্সের জন্য ভর্তি হন মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজে। এ বছরেই তার বাম চোখের জ্যোতি পুরোপুরি নিভে যায়।

তখন ধামরাই উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসক এনামুল কবির রেশমাকে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ঢাকার সেন্ট্রাল চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক দীর্ঘ দিন চিকিৎসা প্রদানের পর তার চোখে সংক্রমণ য়েছে বলে জানিয়ে যত দ্রুত সম্ভব কর্নিয়া পাল্টানোর কথা বলেন।

২০১৩ সালের শেষের দিকে রেশমা কর্নিয়ার জন্য সন্ধানীতে আবেদন করেন। ঐ সময় সেখানকার কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ শীষ রহমানের অধীনেই তার চিকিৎসা চলছিল।

২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর রেশমা টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পারেন ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন মারা গেছেন এবং তার দুটি কর্নিয়া দান করে গেছেন। ওই দিনই সন্ধানীতে যোগাযোগ করলে তাকে পরদিন সেখানে যাওয়ার জন্য বলা হয়।

৯ অক্টোবর বিকেল চারটার দিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে মহান ব্যক্তি ভাষা সৈনিক আবদুল মতিনের চোখের কর্নিয়া রেশমার চোখে স্থানান্তর করা হয়। এতে তার খরচ হয় মাত্র ১৫ হাজার টাকা। যদিও ঐ সময় কর্নিয়া কিনতে দুই লাখ টাকা লাগবে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেকের কন্যা রেশমা বলেন, ভাষা সৈনিকের দেওয়া চোখে আজ পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়ে তিনি গর্বিত। এমন এক মহান ব্যক্তির স্মৃতি ধারণ করতে পেরে তার জীবন সার্থক।

কর্ণিয়া সংযোজনের পর চোখ খুলে একমাত্র মেয়ে ফেরদৌসী মিমকে প্রথম দেখেছিলেন রেশমা। এরপর বিগত চার বছর ধরে স্বাভাবিক কাজকর্ম করে যাচ্ছেন। কর্নিয়া স্থানান্তরিত ওই চোখ দিয়ে সত্তর শতাংশ দেখতে পান তিনি। আর ১০ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত যে কোন ব্যক্তিকে অনায়াসে চিনতে পারেন। শুধু বই পড়তে গেলে চশমা ব্যবহার করতে হয়।

পরিবারের দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে বড় রেশমা একটি বারের জন্য যে মহান ব্যক্তি তাকে কর্নিয়া দান করেছে তার পরিবারের সাথে সাক্ষাতের জন্য ব্যাকুল। অনেক চেষ্টা করেও কোন ঠিকানা পাননি ভাষা সৈনিক আবদুল মতিনের পরিবারের। সন্ধানীতে এ জন্য অনেকবার যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান রেশমা।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031