অর্ধমাস কারাগারে কেটেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার । চারদিকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কারারক্ষী, পুলিশ ছাড়াও রয়েছেন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা। দোতলার একটি কক্ষে বন্দি খালেদা জিয়া। কারগারে কর্মরত দু’-একজন ছাড়া কারও সঙ্গে নিয়মিত দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ নেই তার। তবে কারাগারে কর্মরত পাঁচজনসহ ছয় নারী রয়েছেন তার সঙ্গেই।

চার দেয়াল ঘেরা কারাগারে কেমন আছেন খালেদা জিয়া?  কিভাবে সময় কাটছে তার? এ রকম নানা কৌতূহল দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে   । প্রতিদিন কারা ফটকে ভিড় করছেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু স্বজন ও আইনজীবী ছাড়া সাক্ষাতের সুযোগ পাননি কেউ।
সূত্রমতে, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকাগুলো খুঁজে নেন খালেদা জিয়া। সংবাদগুলো পড়েই ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা করেন তিনি। তখনও পত্রিকার পাতায় চোখ রাখেন। সংবাদ পড়তে পড়তেই কথা বলেন। খালেদা জিয়ার কথার সঙ্গী হন গৃহকর্মী ফাতেমা ও ডিপ্লোমা নার্স। শুরুতে ডাক্তারকে না ডাকলে কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এখন নিয়মিত খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন কর্তব্যরত ডাক্তার। খালেদা জিয়া ঘুম থেকে উঠার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে যান তিনি। এ সময় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও বাইরের রাজনৈতিক-সামাজিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন। কখনও কখনও প্রশ্ন করেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, কথা কম বলেন তিনি। কারগারে কর্মরতদের প্রতি তার কোনো ক্ষোভ নেই। সূত্র জানায়, ডিভিশন লাভের আগে সাক্ষাৎকালে কারা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তাকে তিনি বলেছেন, ‘আপনারাতো চাকরি করেন। তাই আপনাদের প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করে যান।’
খাবার সম্পর্কে তেমন কোনো আগ্রহ নেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার। তবে পছন্দের মাছ হিসেবে শিং মাছের কথা বলেছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এ পর্যন্ত কয়েক দিন শিং মাছ রান্না করা হয়েছে তার জন্য। এছাড়াও দেশি নানা প্রজাতির ছোট মাছ, রুই মাছ ও শাক-সবজি দেয়া হয়েছে তাকে। চা ও পানি পানের জন্য নিজের মগ-গ্লাস ব্যবহার করছেন খালেদা জিয়া। খাবারের বিষয়ে কর্তব্যরতদের তিনি জানিয়েছেন যা সবাইকে দেয়া হয় তাই খাবেন তিনি। একই খাবার ফাতেমাসহ ডিপ্লোমা নার্স ও চার মহিলা কারারক্ষীকে দিতে বলেছেন তিনি। এমনকি স্বজনদের নেয়া ফল ডিপ্লোমা নার্স ও কারারক্ষীদের খেতে দিয়েছেন তিনি। সূত্রমতে, বাইরে থেকে খালেদা জিয়ার জন্য বিশেষ কোনো খাবার নেয়া হয়নি কারগারে। তবে কয়েকটি ফল নিতে দেখা গেছে। এরমধ্যে ছিলো আপেল, আঙ্গুর ও কমলা। কারা সূত্র জানায়, প্রতিদিনই একাধিকবার দ্বিতীয় তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। সেখানে দাঁড়িয়ে কারাগারের পরিত্যক্ত মহিলা ওয়ার্ডের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ওই বারান্দায় দাঁড়িয়ে কারাগার ছাড়া বাইরের সড়ক ও মানুষের চলাচল দেখার কোনো সুযোগ নেই। আত্মীয়-স্বজন যখনই দেখা করতে গেছেন খালেদা জিয়া নিচতলায় নেমে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। জেল সুপারের পরিত্যক্ত অফিস কক্ষে বসেই তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন খালেদা জিয়া। হাঁটাচলার ক্ষেত্রে তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন তার গৃহকর্মী ফাতেমা।
পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের ওই কারাগার ও অধিদপ্তরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন ১৪৭ কারারক্ষি। কারাগারটি কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর হওয়ার পর কারাগারে তেমন কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো না। খালেদা জিয়াকে ওই কারাগারে রাখার আগের দিনই বদলে যায় পরিবেশ। বাড়ানো হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অস্ত্রধারী পাঁচ জনকে কারা ফটকে পাহারার দায়িত্ব দেয়া হয়। আশপাশে মোতায়েন করা হয় পুলিশ। এমনকি কারাগার সংলগ্ন বিভিন্ন বাসা-বাড়ির ছাদের দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ সদস্যরা। এছাড়াও সাদা পোশাকে রয়েছে গোয়েন্দাদের উপস্থিতি। শুরুতে কারাগারের সামনের সড়কের অবাধ যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়। এখনও ওই সড়কে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত ৮ই ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দণ্ড দেন আদালত। তারপর থেকেই পুরান ঢাকার ওই কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে রয়েছেন তিনি। ১০ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিচতলার জেল সুপারের অফিস কক্ষে রাখা হয়েছিলো খালেদা জিয়াকে। পরবর্তীতে ডিভিশন পেলে তাকে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই কক্ষটি একসময় কারাবন্দি নারীদের শিশুদের ডে-কেয়ার সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এদিকে দুই সপ্তাহের মাথায় তার জামিন আবেদন জমা দেয়া হয়েছে উচ্চ আদালতে। আগামীকাল এ আবেদনের ওপর শুনানি হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031