পদার্থবিজ্ঞানের জিনিয়াস প্রফেসর স্টিফেন হকিং সৃষ্টিজগত বা মহাবিশ্বের সবচেয়ে জটিল সব সমস্যার সমাধান দিয়েছেন। কিন্তু তিনি মানবজীবনের একটি বিষয়ে কোনোই সমাধান দিয়ে যেতে পারেন নি। এমনকি এই রহস্যের মধ্যেই তিনি হাবুডুবু খেয়েছেন। ওই ইস্যুটি হলো নারী। ৭০তম জন্মদিনে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রাত্যহিক জীবনে তিনি সবচেয়ে কোন বিষয়টি নিয়ে বেশি চিন্তা করেন। তার জবাবে স্টিফেন হকিং বলেছিলেন ‘নারী।

তারা সম্পূর্ণ রহস্যময়’। বিখ্যাত নিউ সায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেছিলেন। স্টিফেন হকিং ছিলেন ভীষণ মেধাবী। মরণব্যাধির মুখে দাঁড়িয়েও তিনি দেখিয়েছেন অমিত সাহস। তবে তিনি নিজেই প্রথম স্বীকার করে নেন, অন্য সবার মতোই তিনি একজন সাধারণ মানুষ। তার চোখমুখে এক করুণ অভিব্যক্তি। তার মুখে ভালবাসার এক অন্যরকম গ্লামার। তাই বুঝি তিনি নিজের বাথরুমের দরজায় সেঁটেছিলেন মেরিলিন মনরোর একটি বড় পোস্টার। ১৯৫৫ সালের ছবি ‘দ্য সেভেন ইয়ার ইট্চ’ ছবিতে অভিনয়ের একটি ছবি সেটি। তাতে দেখা যায়, মেরিলিন মনরোর স্কার্টের সঙ্গে বাতাসে দুষ্টুমি করছে। উড়ে উড়ে যাচ্ছে তা। এ ছবিটি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। মেরিলিন মনরো বলতেই যেন এই ছবিটি প্রতীকী হয়ে ধরা দেয় সামনে। নৈশক্লাবের পরিচালক পিটার স্ট্রিংফেলো একদিন তার একটি ভেনুতে দেখতে পান এই সুপার জিনিয়াস হকিংকে। তাকে দেখে এগিয়ে যান পিটার স্ট্রিংফেলো। হকিংকে তিনি বলেন, আমি কি মহাবিশ্ব নিয়ে আপনার সঙ্গে এক মিনিট সময় নষ্ট করতে পারি? অথবা আপনি কি এর চেয়ে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকা পছন্দ করেন? পিটার স্ট্রিংফেলো বলেন, আমার কথা শুনে তিনি কিছু সময় নীরব রইলেন। তারপর উত্তর দিলেন। বললেন, মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকাটাই তিনি পছন্দ করেন।
স্টিফেন হকিংয়ের ৭৬ বছর বয়সে দু’জন নারী এসেছিলেন তার জীবনে। তার প্রথম জন হলেন তার প্রথম স্ত্রী জেন ওয়াইল্ড। তার গর্ভেই জন্ম হয়েছে স্টিফেন হকিংয়ের তিন সন্তান রবার্ট, লুসি ও টিমের। এরপরেই ইলেন ম্যাসন নামের একজন নার্স আসেন হকিংয়ের জীবনে। ইলেনের কারণেই হকিংকে ছেড়ে যান জেন। এরপর ইলেনকে বিয়ে করেন হকিং। তিনিও হকিংকে তালাক দেন ২০০৬ সালে। এরপরও তার সান্নিধ্য পাওয়ংার চেষ্টা করেছিলেন হকিং দু’বার। তবে বুধবার দিনের প্রথম প্রহরে মারা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার পাশে ছিলেন তার সেই সাবেক স্ত্রী ৭৩ বছর বয়সী জেন। তার সাবেক এই স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন ইলেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের প্রিয় স্টিফেনের’ মৃত্যুতে গভীরভাবে আমি শোকাহত। তিনি নিজের বাড়িতে শান্তিতে মারা গেছেন এটা বলতে পেরে আমার ভাল লাগছে। তার জীবন ছিল ব্যতিক্রম ও সাহসী। তার মাধ্যমে তিনি যা অর্জন করেছেন তার জন্যই হয়তো এমনটা শান্তিতে তার মৃত্যু হয়েছে। দীর্ঘদিন তার বেদনা আমরা অনুভব করবো। স্টিফেন হকিং বিশ্বজোড়া মানুষের ভালবাসার নাম। তার বিদায় অপ্রত্যাশিত ছিল না। কারণ, গত বড়দিন থেকেই তিনি বেশ অসুস্থ। কয়েকবার তো মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছেন। তাকে বিয়ের মাত্র ১১ মাস পড়ে ২০০৬ সালে তালাক দেয়া দ্বিতীয় স্ত্রী ইলেনের (৬৮) মনেও তাই ক্ষরণ। তিনি হকিংয়ের মৃত্যুতে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েছিল। গ্লুচেস্টারশায়ারে চিপিং ক্যাম্পডেনে তার বাড়ি থেকে তিনি হকিংয়ের প্রতি তার ভালবাসার প্রকাশ ঘটান এভাবে- হকিং ছিলেন তার জীবনের ভালবাসা। ইলেন বলেন, তিনি এক চমৎকার মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক অনেক বেশি স্পেশাল। আমার চিন্তাচেতনা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আমি হতাশায় ডুবে আছি। তিনি মারা গেছেন, এটা তার জন্যই স্বস্তির বলে আমি মনে করি। তিনি ছিলেন আমার জীবনের ভালবাসা। আমি তার কাছেই যেতে চেয়েছিলাম। ইলেন আরো বলেন, তাদের বিচ্ছেদের পরে দু’বার তাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন হকিং। কারণ, তাদের বিচ্ছেদের কারণ হকিং ছিলেন না। গত বছর জানুয়ারিতে কেমব্রিজে নিজের বাড়িতে ৭৫তম জন্মদিনের অনুষ্ঠান করেন হকিং। সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয় প্রথম স্ত্রী ও তিন সন্তানকে। ওই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তাদের অনেক বন্ধু উপস্থিত ছিলেন। তারা আতশবাজি পুড়িয়েছেন। এখন তারাই তার শবযাত্রার আয়োজন করছে। উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে জেনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন হকিং। তাদের বিচ্ছেদ ঘটে ১৯৯৫ সালে। এর পাঁচ বছর আগে নার্স ইলেনের জন্য তাকে ছেড়ে যান হকিং।
Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031