বিচারের ‍মুখোমুখি করতে পারেনি সরকার ভিডিও ফুটেজ দেখে মিছিল থেকে মেয়েদের হয়রানিতে জড়িতদের বিচারের আশ্বাস দিলেও তিন বছর আগে পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন হয়রানিতে জড়িতদের ।

সেই মামলায় পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো-পিবিআই অভিযোগপত্র দিলেও মামলাটির সাক্ষ্য দিতে আসেননি কেউ। এই মামলায় বেশ কয়েকজনের ভিডিও দেখে তাদের ছবি প্রকাশ হলেও শনাক্ত হননি আট জনের সাত জনই।

ছবি প্রকাশ করে এদেরকে ধরিয়ে দিলে এক লক্ষ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণাতেও কাজ হয়নি। পুলিশকে কেউ কোনো তথ্যই দেয়নি।

বাকি একজন কামাল হোসেন। তাকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে পুলিশ। তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন। তবে তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেন।

গত ৭ মার্চ রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সমাবেশমুখী মিছিল থেকে নারীদের হয়রানির প্রমাণ ভিডিও ফুটেজে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এই ফুটেজে দেখে দায়ীদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। আর এ কারণেই তিন বছর আগে পয়লা বৈশাখের জমায়েত থেকে যৌন হয়রানির বিষয়টি আবার সামনে এসেছে।

৭ মার্চের ঘটনায় পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলামোটর এলাকায় একটি ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ পাওয়ার কথা জানান। ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা সেদিন রমনা থানায় মামলাও করেন। শুরু হয় পুলিশের তদন্তও। কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার বা শনাক্ত করার বিষয়টি জানায়নি।

এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় এসেছে তিন বছর আগের ঘটনাটি।

২০১৫ সালের পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কয়েকজন নারী যৌন হয়রানির শিকার হন। তখন ভিডিও ফুটেজ ঘেঁটে পুলিশ আট জনের ছবি প্রকাশ করে। আর এক বছর পর ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক ঢাকা মহানগর মূখ্য হাকিমের (সিএমএম) আদালতে মামলাটিতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি মামলার নথি ঢাকার ৩ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আসে বিচারের জন্য। ওই বছরের ১৯ জুন মামলাটির অভিযোগ গঠন শুরু হয়। তাদের মধ্যে চারটি তারিখ পরলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে পারেনি।

তৃতীয় ধার্য তারিখের সাক্ষীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছিলেন বিচারক। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।

আবার ওই ঘটনায় যে আট জনের ছবি প্রকাশ করা হয় তাদের নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি। এই কারণ দেখিয়ে ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদনও গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল। পরে সেই আট জনের মধ্যে মো. কামাল নামে একজন ধরা পড়েন। আর তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মামলাটি পুনঃতদন্তের আবেদন করা হয়।

২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন।

অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্রে ৩৪ জনকে সাক্ষী করে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলাটি তদন্তকালে একাধিকবার ঘটনাস্থল গিয়ে প্রত্যক্ষ সাক্ষী, ভিকটিমদের সন্ধান এবং আসামিদের সন্ধান ও গ্রেপ্তারের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কামাল ছাড়া অন্য কোনো আসামির সন্ধান পাওয়া যায়নি।

বাকি সাতজনের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকার ৩ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদা আক্তার ঢাকাটাইমসক বলেন, ‘এই মামলার বাদী পুলিশ। কিন্তু তারা কোনো সাক্ষীকে হাজির করতে পারেনি। আমি নতুন ধার্য তারিখে আবারও পুলিশদের ধরবে তাদের কাছে জানতে চাইব তারা সাক্ষী হাজির করছে না কেন।’

পুলিশ কেন সাক্ষী হাজির করছে না, জানতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (প্রসিকিউশন) উপ কমিশনার আনিসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে লাইন কেটে দেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031