আজ নেই বঙ্গবন্ধু । ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে নৃশংসভাবে নিহত হলেন তিনি।আজ ১৭ই মার্চ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। জাতীয় শিশু দিবস। বঙ্গবন্ধু শিশুদের অত্যন্ত বেশি ভালো বাসতেন। তাদের চাওয়া–পাওয়া, আশা–আকাঙক্ষা ও দুরন্তপনার সঙ্গে তিনি খুব পরিচিত ছিলেন। ফলে সময় পেলেই সঙ্গ নিতেন শিশুদের। শিশুদের দরদী বন্ধু রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই এক লেখায় লিখেছেন : বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শিশুদের শেষ সাক্ষাৎ বটে তাঁর সর্বশেষ জন্মদিনে। ১৯৭৫ সালের ১৭ই মার্চ দিনটি। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর জন্যে চারটি সংগঠনের শিশুরা সমবেত হলো শেরে বাংলা নগরে নতুন গণভবন প্রাঙ্গণে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বয় স্কাউটস এবং গার্ল গাইডস, আর জাতীয় প্রতিষ্ঠান কচি কাঁচার মেলা ও খেলাঘর আসরের ছেলেমেয়েরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতীক্ষা করছিল। চারটি সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৮শ’। প্রত্যেকে যার যার প্রতিষ্ঠানের ইউনিফরম পরা। শেরে বাংলা নগরের সেই মনোরম সবুজ চত্বরে শিশুদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা কুড়িয়ে সবার মাঝে ঘুরতে ঘুরতে ওদেরই একজন হয়ে গেলেন তিনি। সারিবদ্ধ ছেলেমেয়েরা ক্ষণিকের জন্যে তাদের প্রিয় মানুষটিকে কাছে পেয়ে উল্লসিত হয়ে উঠলো। শিশুদের মাঝে কোনো প্রটোকলের বালাই নেইণ্ডবারবার এই কথাটিই সেদিন মনে হচ্ছিল বঙ্গবন্ধু আর শিশুদের সেই মহামিলনের দৃশ্যটি দেখে।

সেই দিনেই তাঁর নতুনভাবে জন্ম হয়েছে। মৃত্যুর মাতৃগর্ভ থেকে তাঁর জন্ম। দানবের অস্ত্রাঘাতে তাঁর জন্ম। মুজিব আজ এক মুজিব নয়। নিজের শোনিতধারা থেকে জন্ম নিয়েছে শত মুজিব। সহস্র মুজিব। কোটি মুজিব। যুগে যুগে বঙ্গবন্ধুর জন্ম। কখনো ঈশা খাঁ। কখনো সিরাজ। কখনো তিতুমীর। কখনো সূর্যসেন। কখনো ক্ষদিরাম। মুজিব মানে মুক্তিদাতা পিতা, মুজিব মানে বন্ধু। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারো তুলনা চলে না। তিনি অদ্বিতীয়। ফিদেল কাস্টো বলেছিলেন : আমি হিমালয় দেখি নি, কিন্‌তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। বঙ্গবন্ধুর অবদান অনেক। বাংলাদেশ তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি। আবদুল গাফফার চৌধুরীর ভাষায়, তিনি আবহমান বাংলার চিরকালের প্রাণপ্রবাহ। বাংলার পাখির গানে, নদীর কলতানে, বাতাসের উচ্ছ্বাসে, আকাশের গরিমায়, সূর্যের শৌর্যে, চাঁদের কিরণে, নক্ষত্রের ছায়াপথে, ভোরের শিশিরে, মসজিদের আযানে, মন্দিরের কাঁসরধ্বনিতে, গির্জার ঘণ্টায়, জারি–সারি–ভাটিয়ারী সুরে, বসন্তের উল্লাসে, বর্ষার ক্রন্দনে, শরতের শ্যামলিমায়, বৈশাখের ভৈরবীতে, বাঙালির হাসি–কান্না, প্রেম ভালোবাসা। মিলনে বিরহে তিনি চিরদিনের জন্য, চিরকালের জন্য জাগ্রত, জীবন্ত। তাঁর মৃত্যু হয়নি। তিনি আরো বেশি জীবিত চিরকালের বাঙালির মনে ও মননে।

বঙ্গবন্ধুর আপসহীন নেতৃত্বের জন্যই পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে বাঙালিরা জয়ী হয়েছে। আবার দেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যবহিত পর বঙ্গবন্ধু যদি সদ্যস্বাধীন দেশটিতে ফিরে না আসতে পারতেন, কিংবা পাকিস্তানি কারাগারেই যদি তাঁর মৃত্যু ঘটানো হতো, তাহলে বাংলাদেশে অবস্থানকারী ভারতের মিত্র সৈন্যরা সহসা স্বদেশে ফিরে যেতো কিনা সন্দেহ। –এ কথা কূটনৈতিকদের। আমরা মনে করি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাঙালির বন্ধু ও নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন শোষিত নিপীড়িত সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর। শিক্ষাবিদ ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান একটি মহাকাব্যের নায়ক ছিলেন। এই মহাকাব্য জাতীয়তাবাদের। সবাইকে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন, ছাপিয়ে উঠেছেন। কেন পারলেন? অন্যরা কেন পারলেন না? কেন পিছিয়ে গেল তারা, যারা বৈষয়িকভাবে অধিকতর প্রতিষ্ঠিত ছিল? প্রধান কারণ সাহস। শেখ মুজিবের মতো সাহস আর কারো মধ্যে দেখা যায়নি। ফাঁসির মঞ্চ থেকে তিনি একাধিকবার ফিরে এসেছেন, আপোষ না করে। আজ সেই মহান নেতার জন্মদিনে আমাদের কামনা–যেন বাংলাদেশের সকল নাগরিক তাঁর মতো বিশাল ব্যক্তিত্বের অনুসারী হয়ে ওঠে। কেননা, বঙ্গবন্ধু শুধু একজন ব্যক্তি নন, একটি প্রতিষ্ঠান। একটি বিপ্লব। একটি অভ্যুত্থান। তিনি জাতি নির্মাণের কারিগর। মহাকালের অমর গাথা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031