ভারত-বাংলাদেশ ফাইনাল দেখতে মুম্বাই ইউনিভার্সিটির এক প্রফেসর সস্ত্রীক কলম্বোতে এসেছিলেন । চেক ইন হন আমার পাশের রুমে। জানালেন, তিনি এসেছেন দুটি কারণে। এক. ভারতের জয় মাঠে বসে উপভোগ করতে এবং দুই. বাংলাদেশের উন্নতি খুব কাছ থেকে দেখতে। জানালেন, বাংলাদেশ দ্রুত যেভাবে উপরে উঠেছে, তাতে তিনি হতবাক। বাংলাদেশের প্রতি তার শ্রদ্ধা দেখেছি।

খেলা হলে দুই দলের খেলোয়াড়রা কথা বলেন, তাই হোটেলে ফিরতে প্রায় সাড়ে ১২টা বেজে গেল (বাংলাদেশ সময় একটা)। ফিরে দেখি, ভদ্রলোক, ভদ্রমহিলা আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমি তাদের অভিনন্দন জানানোর আগেই ভদ্রলোক এসে জড়িয়ে ধরে বললেন, বাংলাদেশ গ্রেট টিম। তোমরা জেতনি ঠিকই, কিন্তু পরাজিতও হওনি। বাংলাদেশ গর্ব করার মতো দল।

এই প্রফেসর ও তার বিনয়ী স্ত্রীর মতো ভারতে উদার মানুষ অনেকই আছেন। আবার হরভজনদের মতো বাংলাদেশ বিদ্বেষী উগ্র লোকেরও অভাব নেই। বাংলাদেশ নামটাই যেন তাদের কাছে অপছন্দের! নবজোৎ সিং সিধু তাদেরই একজন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা সময়ে কতো যে বিষোদগার করেছেন এই শিখ ভদ্রলোক! অবাক হতে হয়, যাকে কমেন্ট্রি করতে বাংলাদেশেও আসতে হয়, সেই গ্রেট সুনীল মনোহর গাভাস্কারও বাদ গেলেন না! নো বল ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সাকিব যে শস্তি পেয়েছে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট নন। আইসিসির আরও কড়া শাস্তি আশা করেছিলেন তিনি!

খেলোয়াড়ি জীবনটা যার বিতর্কে ভরপুর সেই ভারতীয় অফ স্পিনার হরভজন সিংহ মাঠের বাইরেও আরেকবার সীমালঙ্ঘন করলেন। নো বল ইস্যুতে আইসিসি যে শাস্তি দিয়েছে তাতে হতাশ হরভজন বলেন, ‘তারা যা করেছে, তা অবশ্যই উচিত হয়নি। তারা এভাবে কোনো কিছু ভাঙতে পারেই না। আম্পায়ারিং ভুল ছিল কিন্তু তা হতেই পারে। এর জন্য মাঠ থেকে দলের খেলোয়াড়দের ডেকে আনতে পারেন না, উদযাপনের জন্য জানালা ভাঙতে পারেন না। ক্রিস ব্রডের উচিত ছিল আরও কঠিন হওয়া। খুব অবাক হয়েছি যে, মাত্র ২৫ শতাংশ ম্যাচ ফি জরিমানা করা হয়েছে। তাদের অন্তত কয়েক ম্যাচ নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল। পুরো দলকেই নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল।’

এত বড় বড় কথা যিনি বললেন তার অতীত কী? খেলোয়াড়ি জীবন শুরু হয়েছিল বিতর্ক দিয়ে। শেষ দিকে এসেও মেজাজ ঠাণ্ডা করতে পারেননি।

আসুন এক নজরে গুণধর হরভজনের কাণ্ডগুলো দেখা নেওয়া যাক

১. ১৯৯৮ সালে অভিষেক ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার সিনিয়র খেলোয়াড় রিকি পন্টিংয়ের সঙ্গে মাঠে বেয়াদবি করার জন্য এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে হয়েছিল তাকে। তখন হরভজনের বয়স মাত্র ১৭।

২. ২০০০ সালে ভারতের এক স্পিন বোলিং ক্যাম্পে তাকে পাঠানো হয়েছিল গ্রেট বোলারদের কাছ থেকে ট্রেনিং নিতে। কিন্তু সেখানে বাজে আচরণের কারণে বহিষ্কার হতে হয়েছিল হরভজনকে।

৩. ২০০২ সালে টিম হোটেলের বাইরে ভারতীয় পুলিশকে আক্রমণ করতে গিয়ে নিজের হাতেই আঘাত পেতে হয়েছিল।

৪. ২০০৫ সালে ভারতীয় কোচ চ্যাপেলের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক কথা বলে পাঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ও ভারতীয় বোর্ডের শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে।

৫. ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়া সফর করে ভারত। ম্যাচ চলার সময় অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে ‘বানর’ বলেছিলেন হরভজন সিং। ক্রিকেটে এটা কুখ্যাত হয়ে আছে ‘মাঙ্কিগেট কেলেঙ্কারি’ নামে। ম্যাচ রেফারি মাইক প্রক্টর বর্ণবাদের দায়ে তিন টেস্টের জন্য বহিষ্কার করেছিলেন হরভজনকে।

৬. ২০০৮ সালে প্রথম আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স বনাম কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের ম্যাচ চলার সময় পেসার শ্রীশান্তকে চড় মেরে বসেন হরভজন সিং। ক্রিকেটে মাঠে যেটা নজিরবিহীন। কেঁদে ফেলেন শ্রীশান্ত। মৌসুমের বাকি আইপিএলে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তাকে। ভারতীয় দলে ৫ ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছিল দেশটির ক্রিকেট। এমন ঘটনা আবার হলে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি মাথায় নিয়েই ক্যারিয়ার শেষ করতে হয়েছিল হরভজনকে।

এই হরভজনের মুখে বড় বড় কথা! মানায় না।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031