দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রেমিকের হাত ধরে বাড়ি ছেড়েও ঘর বাধাঁর স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়াসহ চাপ দিয়ে আপোষ নামায় স্বাক্ষরের এক ঘন্টায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহুতি দিয়েছে কলেজ ছাত্রী কণা রাণী (১৯)। কণা রাণী নবাবগঞ্জ উপজেলার ১নং জয়পুর ইউনিয়নের দামোদরপুর কাছদীঘি গ্রামের মংলু চন্দ্র রায়ের মেয়ে এবং ফুলবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের ¯œাতক শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলো।
আপোষ মিমাংসার ঘটনা ঘটেছে গত রবিবার (৬মে) সন্ধ্যা সাতটায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী থানায় এবং তরুণীর আত্মহুতির ঘটনাটি ঘটেছে একই দিন রাত সাড়ে আটটায় নবাবগঞ্জের ১নং জয়পুর ইউনিয়নের দামোদরপুর (বাটদীঘি) গ্রামে।
কণা রাণীর বোন জামাতা দুলাল চন্দ্র ও বেয়াই দিনেশ চন্দ্র রায় বলেন, গত দুই বছর ধরে কণা রাণীর সাথে পার্বতীপুর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের যশাই ইন্দ্রপুর গ্রামের গোপাল চন্দ্র রায়ের ছেলে মিন্টু চন্দ্র রায় বিকাশের প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। গত শনিবার (৫মে) সকাল ১০টায় কণা রাণী বাড়ির কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায়। এরপর ফুলবাড়ীর রাঙ্গামাটি বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় কণা ও তার প্রেমিক বিকাশকে স্থানীয়রা আটক করেছে এমন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে তারা যান। সেখানে কণা ও বিকাশ বিয়ে করতে চাইলে উভয় পক্ষের অভিভাবকদের খবর দেওয়া হয়। মেয়ের পিতা ঘটনাস্থলে আসলেও ছেলে পিতা না এসে তার শ্যালকসহ রাঙ্গামাটি ও বিজিবি ক্যাম্প এলাকার অন্তত ৩০ থেকে ৩৫জন যুবককে পাঠিয়ে বিয়ে ভন্ডুল করার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ উভয়কেই থানায় নিয়ে আসে। ছেলে পক্ষের লোকজন বিয়ের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে আপোষ মিমাংসার জন্য থানাতেই দিবাগত রাত চারটা পর্যন্ত চাপ সৃষ্টি করে। সমাধান না হওয়ায় থানার ওসি মেয়ে ও ছেলেকে পুলিশি হেফাজতে রেখে পরদিন রবিবার (৬মে) সকাল ৯টায় পুনরায় বৈঠকে বসার নির্দেশ দেন। পরদিন রবিবার সকালে উভয় পক্ষ থানায় বৈঠকে বসে বিয়ের আলোচনা করতে গেলে রাঙ্গামাটি ও বিজিবি ক্যাম্প এলাকার মজিদ, বাবু ও ফুলবাড়ীর মোশাররফসহ তাদের লোকজন এক লাখ টাকায় আপোষ করতে হুমকিসহ চাপ দেয়। আপোষ না করলে কণা রাণীকে পতিতা সাজিয়ে জেলহাজতে পাঠানোরও হুমকি দেয়। চাপের মুখে দিন গড়িয়ে সন্ধ্যায় কণা রাণী আপোষ করতে রাজী না হলেও তার পিতাকে আপোষে বাধ্য করা হয়। আপোষ নামায় মিন্টু চন্দ্র রায় বিকাশ স্বাক্ষর করলেও কণা রাণী স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানালে চাপের মুখে কণা রাণী স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হয়। এ সময় ওসি আপোষ নামার এক লাখ টাকা কণা রাণীর পিতার হাতে তুলে দেন। টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় থানার গেটের বাইরে মজিদ, বাবুসহ বেশ কয়েকজন কণার পিতাকে আটক করে তাদের খরচ বাবদ ২০হাজার টাকা জোরপূর্বক নেয়। এতেও ওই ভাড়াটিয়াদের মন না ভরলে বাকী টাকা কেড়ে নেওয়ার জন্য তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে কণা ও তার পিতাকে ধাওয়া করে এবং তাদের বহনকারি দিনেশ চন্দ্রের মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নেয়। কিন্তু স্থানীয় দুইব্যক্তির হস্তক্ষেপে তারা রক্ষা পান। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বাড়িতে ফিরে আসার পর বাড়ির সকলের অজান্তে কণা রাণী তার শোয়ার ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
কণার পিতা মঙ্গলু চন্দ্র রায় বলেন, মেয়েকে আমার আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। মেয়ে আমার আপোষ নামায় স্বাক্ষর দিচ্ছিল না। কিন্তু বিকাশের পিতার ফুলবাড়ীর ভাড়াটিয়ারা আমার মেয়েকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে বিয়ে বন্ধ করে আপোষের কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে। আপোষের টাকার মধ্যে ২০হাজার টাকা থানার গেটের সামনে কেড়ে নিয়েছে বাকি টাকাও কেড়ে নেওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে পিছু ধাওয়া করেছে। আমার মেয়েকে বিকাশসহ ওই ভাড়াটিয়ারাই মরতে বাধ্য করেছে।
এদিকে গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বিকাশের পরিবারে সাথে কথা বলার জন্য তার বাড়িতে গেলে বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশিরা জানান, সকাল থেকেই তারা দিনাজপুর যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে গেছেন। এখনও ফেরেননি।
টাকা কেড়ে নেওয়ার কথা অস্বীকার করে ফুলবাড়ীর বিজিবি ক্যাম্প এলাকার মজিদ তালুকদার বলেন, ছেলে বিকাশ স্থানীয় মঞ্জু রায় চৌধুরীর আত্মীয় হওয়ায় তার সাথে থানায় গিয়েছিলেন। তবে আপোষের জন্য কাউকে চাপ বা হুমকি দেওয়া হয়নি।
নবাবগঞ্জ থানার এসআই হুজ্জাতুল বলেন, কণা আত্মহত্যার বিষয়ে গতকাল সোমবার থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার ইউডি নং ৫। লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে এমন তথ্য সামনে রেখেই তদন্ত কাজ চালানো হচ্ছে।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ নাসিম হাবিব বলেন, শুণেছি কণা নামের মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। থানাতেই উভয় পক্ষ আপোষ করেছিল।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন, শনিবার রাতেই ওসিকে দুই পক্ষের মধ্যে বসে বিয়ের ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু পরের ঘটনা কিছুই জানেন না। তবে মেয়েটির আত্মহত্যার বিষয়টি মেনে নেওয়ার মতো নয়।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031