মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন নাজিম। গতকাল      সকালে রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়াল সড়কে দুই বাসের রেষারেষির কারণে দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি।মাত্র তিনদিন আগে দ্বিতীয় কন্যার পিতা হয়েছেন নাজিম উদ্দিন। স্ত্রী হাসপাতালের শয্যায়। কর্মস্থলে যেতে সকালে বাসা থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফেরা হয়নি তার। তিন দিন আগে যে সন্তানটি ভূমিষ্ট হয়েছে তার আর বাবার মুখ দেখা হবে না কোনো দিন।

ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাজিম মোটরসাইকেলে করে তার কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। ফ্লাইওভারের ওপর দুটি বাসের গতির প্রতিযোগিতায় মধ্যে পড়ে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন নাজিম। পরে একটি বাস তার বুকের ওপর দিয়ে চালিয়ে যায় চালক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঞ্জিল ও শ্রাবণ পরিবহনের দুটি বাসে চলছিল দ্রুত গতির প্রতিযোগিতায়। শ্রাবণ পরিবহনের বাসটি নাজিমের মোটরসাইকেলকে পেছনে থেকে ধাক্কা দিলে ছিটকে পড়ে যান তিনি। তারপর বাসটি চলে যায় তার বুকের ওপর দিয়ে। পেছনে থাকা মাহমুদ, নাঈম ইসলাম ও রাসেলসহ অন্যরা নাজিমকে উদ্ধার করেন। তাৎক্ষণিকভাবে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নাজিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন তাকে। নাজিমের মৃত্যুর খবর শোনে হাসপাতালে জড়ো হন তার স্বজন ও সহকর্মীরা। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। রাজধানীতে একের পর দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা হলেও কার্যত পরিস্থিতির কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। কিছু দিন আগেই এই ফ্লাইওভারেই গ্রিন লাইন পরিবহনের একটি বাসের চালক চাকায় পিষ্ট করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী রাসেল সরকারকে। বাস চাপায় তার একটি পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর আগে কাওরান বাজারে দুই বাসের চাপায় হাত হারানোর পর মারা যান তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেন। তার মৃত্যু নাড়া দেয় দেশজুড়ে। দুই বাসের চাপায় তার শরীর থেকে হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার ছবি দেখে আঁৎকে উঠেছেন অনেকে। এসব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নাজিমের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নাঈম সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার পরপরই গুলিস্তানের সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সে গিয়ে বিষয়টি অবগত করেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে শ্রাবণ পরিবহনের ওই বাসের চালক ওহিদুলকে আটক করেন এসআই সোলায়মান। পরে অপর বাস মঞ্জিল পরিবহনের চালকের সহকারী কামালকেও আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, আটক ওহিদুল ও কামালকে যাত্রাবাড়ী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া বাস দুটিও জব্দ করা হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার এসআই নাজনীন মানবজমিনকে বলেন, গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় নিহত নাজিমের ভায়রাভাই আব্দুল আলীম বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেছেন। নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে প্রথম নামাজে জানাযা শেষে নাজিমের লাশ তার কর্মস্থল ঢাকা ট্রিবিউন অফিসে নেয়া হয়। সেখান থেকে রাজধানীর শ্যামপুরে তার শ্বশুরবাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে ভোলার লালমোহনে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

নাজিমের শ্বশুর আরিফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, মাত্র তিনদিন আগে নাজিমের দ্বিতীয় কন্যা সন্তান ইসরাত জাহান নূরের জন্ম হয়েছে। তিন দিনের নূর কোন দিন তার বাবাকে দেখতে পাবে না। এসময় কান্না ভেঙে পড়েন তিনি। আরিফ হোসেন বলেন, সরকার কেন অদক্ষ এই ড্রাইভারদের মানুষ মারার লাইসেন্স দিচ্ছে। আপনারা সাংবাদিকরা লিখেন, আরও ভালো করে লিখেন। যেন আর কোনো স্ত্রী বা সন্তানকে অভিভাবকহারা না হতে হয়। আমার দুই নাতনী আর কোনো দিনই বাবা বলে ডাকতে পারবে না। আর কত তাজা প্রাণ এভাবে রাস্তায় ঝরে যাবে।

তিনি জানান, নাজিমের স্ত্রী সাবরিনা ইয়াসমিন আইরিন এখনও পোস্তগোলা জুড়াইনের আদ-দ্বীন হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে চিকিৎসাধীন। স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ ভেঙে পড়েছেন তিনি। অতিরিক্ত কান্না কাটি করায় তার পেটে সার্জারির অনেকগুলো সেলাই খুলে গেছে। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে পোস্তগোলায় একটি ফ্ল্যাট বাসায় ভাড়া থাকতেন নাজিম। নিহত নাজিম উদ্দিন ভোলার লালমোহনের আনিসুল হক ও মরিয়ম বেগমের সন্তান। আট ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন নাজিম।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031