নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে প্রথম অত্যাধুনিক রেলমাউন্টেন্ড ইয়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন উদ্বোধন করলেন । ২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় যন্ত্রটি চীন থেকে সংগ্রহ করা হয়। একইসঙ্গে চীন থেকে আনা ৪টি, আরব আমিরাত থেকে আনা ২টি রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন, জার্মানি থেকে আনা ১টি লগ হ্যান্ডলার, ইতালির ২টি ২০ টনের মোবাইল ক্রেনসহ মোট ৯৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি, রিভারমুরিং জেটি–৩ এবং নিরাপত্তা ভবনও উদ্বোধন করা হয়।
ইক্যুইপমেন্টগুলোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন মন্ত্রী এম শাহাজান খান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর অনেক পিছিয়ে ছিল। আমরা এই বন্দরকে এগিয়ে নিচ্ছি। বিশ্বের একশ’টি কন্টেনার হ্যান্ডলিংকারী পোর্টের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৭১তম। আমরা আরো এগিয়ে আসবো। আমরা ১০ নম্বরে আসতে চাই। মন্ত্রী বলেন, দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোন বন্দরে অত্যাধুনিক এই ইকুইপমেন্ট সংযোজিত হলো। চীন থেকে ২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় যন্ত্রটি সংগ্রহ করা হয়। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) ৫ নম্বর জেটিতে স্থাপিত এই ইকুইপমেন্টটি রেলপথে পরিবহনকৃত কন্টেনার লোডিং আনলোডিং করবে।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজের সভাপতিত্ব নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম, বন্দরের সদস্য মোহাম্মদ জাফর আলম, কমডোর খন্দকার আকতার হোসেন, কমডোর শাহিন রহমান, কামরুল আমিন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তারিকুল ইসলাম, বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক, বিকডার সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান, সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আকতার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বাচ্চু, জুনিয়র চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নিয়াজ মোরশেদ এলিট, সভাপতি গিয়াস উদ্দিন, বন্দর সিবিএ সভাপতি আবুল মনসুর আহমদ, সাধারণ সম্পাদক রফিউদ্দিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রী এম শাহাজান খান বে টার্মিনাল ও পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি) আগামী ২০২০ সালে অপারেশনে যাবে বলে উল্লেখ করে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে আমরা গ্রিন পোর্টে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছি। বায়ু দূষণ ঠেকানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন চলবে বিদ্যুৎ দিয়ে। বন্দরে নোঙর করা জাহাজের ইঞ্জিন চালু রাখতে হয়। বায়ু দূষণ হয়। এখন আমরা জাহাজেও বিদ্যুৎ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। যাতে বায়ু দূষণ বন্ধ করা যায়।
মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট, কন্টেনার জট ও ইক্যুইপমেন্ট সংকট নিয়ে অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সব সংকট কেটে উঠেছি। মন্ত্রী বলেন, আজ আমরা নয়টি ইক্যুইপমেন্ট চালু করেছি। আরো ইক্যুইপমেন্ট আসছে। আসবে। ইক্যুইপমেন্ট সংকটে বন্দরের অপারেশনে কোন সমস্যা হবে না।
নৌ পরিবহন মন্ত্রী বলেন, একটি দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও দেশপ্রেমের ওপর। শেখ হাসিনা এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু একটি মহল দেশের উন্নয়ন ঠেকাতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই।
সাম্প্রতিক কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা কোটা আন্দোলনের নামে ছাত্রদের আন্দোলনে নামিয়ে দিয়েছিল। ‘আমি রাজাকার লিখে’ ঔদ্ধত্য প্রকাশ এবং জনদুর্ভোভোগ সৃষ্টি কোন আন্দোলন নয়। ২০০৪ সালে ছাত্রশিবির কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিল। কোটা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা সাধারণ ছাত্রদের বিভ্রান্ত করছে। কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের পারিবারিক ইতিহাস খুঁজে দেখলে আন্দোলনের প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রী এম শাহাজান খান বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, রাজাকার–আলবদর, স্বাধীনতা বিরোধী তাদের সন্তানেরা সরকারি চাকরি পাবে না। নৌমন্ত্রী শাজাহান খান কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের পরিবার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বলে ইঙ্গিত করে বলেন, সংস্কার আন্দোলনকারীরা জয় বাংলা বলে না এবং বঙ্গবন্ধুর নামে কোন হ্মোগান দেয় না। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধীদের সন্তানরা সরকারি চাকরি পাবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর নতুন মাইলফলক অর্জন করেছে আজ। বন্দর এখন ২৪ লাখ কন্টেনার হ্যান্ডেল করছে। এ বন্দর দেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। বন্দরের চাকা ঘুরলে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরবে।
চেম্বার সভাপতি বলেন, কর্ণফুলী বাঁচলে বন্দর বাঁচবে। অনতিবিলম্বে ড্রেজিং শুরু করতে হবে। আমি একটি মাদার ভ্যাসেল এনেছি। ৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার ডেমারেজ দিতে হচ্ছে। জেটি ও লাইটার জাহাজের সংকট নিরসন করতে হবে। বে টার্মিনালের কাজ শুরু করতে হবে। এটি হলে চট্টগ্রাম বন্দরকে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।
