হাইকোর্ট শতবর্ষী শ্মশানের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হককে ভর্ৎসনা করেছে । একই সঙ্গে ‘শ্মশানের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ চেষ্টা করে আমি ভুল করেছি’ লেখা ব্যানার টানিয়ে স্থানীয় জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রবিবার অভিযুক্ত আজিজুল হকের উপস্থিতিতে এই আদেশ দেন।
স্থানীয় জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার তথ্য ও ছবি আদালতে জমা দেয়ার পর বিষয়ে আগামী ২৭ মে পরবর্তী আদেশ দেয়ার দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আজিজুল হকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী লায়েকুজ্জামান মোল্লা।
আদালতের আদেশে বলা হয়, স্থানীয় জনগণের কাছে ওই অপকর্মের জন্য আজিজুল হককে শ্মশানে ব্যানার টানিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ব্যানারে লিখতে হবে, ‘শ্মশানের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ চেষ্টা করে আমি ভুল করেছি। এ ধরনের কাজ আর কোনো দিন করব না।’
ব্যানার টানিয়ে ক্ষমা চাওয়ার অনুষ্ঠানে ওই শতবর্ষী শ্মশানের কমিটিকে উপস্থিত রাখার নির্দেশ দিয়ে আদেশে আরও বলা হয়, ওই ক্ষমা চাওয়ার অনুষ্ঠানের ছবি আগামী রবিবারের মধ্যে হাইকোর্টে উপস্থাপন করতে হবে। একই সঙ্গে, আগামী রবিবার দখলচেষ্টা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আদালতে লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে বিষয়টি আদালত দেখবে। যদি অস্বীকার করা হয় তাহলে ওই আভিযোগ তদন্ত ছাড়াই আজিজুল হকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়।
শতবর্ষী শ্মশান দখল করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টার অভিযোগে গত ১৩ মে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হককে আজ (২০ মে) তলব করে আদালত।
আজ আদালতে আজিজুল হকের পক্ষে আইনজীবী লায়েকুজ্জামান মোল্লা বলেন, ওই শ্মশানের জায়গা দখলের চেষ্টা করা হয়েছিল প্রায় দুই বছর আগে। পরে ওই জায়গা স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন সেখানো কোনো সমস্যা নেই। এটি একটি ভুল কাজ ছিল।
শুনানির সময় উপজেলা সভাপতি পদে এখনো কীভাবে বহাল রয়েছেন আজিজুল হক, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত। একপর্যায়ে আজিজুলকে ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে ভর্ৎসনা করা হয়।
‘তার ভয়ে স্থানীয় হিন্দুরা দেশ ছাড়বেন’ বলে সংবাদপত্রে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে সেটিও তুলে ধরে আদালত মন্তব্য করে, এ রকম সাম্প্রদায়িক লোক আওয়ামী লীগের এমন পদে থাকা উচিত নয়।
শুনানির একপর্যায়ে আজিজুলের পক্ষে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হলে আদালত জানায়, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের তদন্তে ঘটনার সত্যতা উঠে এসেছে।
শ্মশান দখল করা নিয়ে ২০১৬ সালের ২৬ জুন একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) একটি রিট করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রিট আবেদনে ওই বছরের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারি করে এবং স্থাপনা নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ অবস্থায় ২০১৬ সালে জারি করা রিটের ওপর শুনানি শুরু হয় হাইকোর্টে। এ রুলের ওপর শুনানির সময় গত ১৩ মে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে তলব করে আদেশ দেয় আদালত।
