নারায়ণগঞ্জে তুলকালাম কাণ্ড চলছে নারায়ণগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষকলীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিনের মেয়ে নাজিয়া আক্তার মিতুকে নিয়ে । পরকীয়ার সূত্রধরে দুই সন্তানকে রেখে ঘর ছাড়ে মিতু। পরে প্রেমিককে বিয়ে করে সংসারী হন। কিন্তু এ নিয়ে মিতুর প্রথম স্বামী ও পরকীয়া প্রেমিকের দ্বিতীয় স্ত্রীর পাল্টাপাল্টি মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ এক মাসের মাথায় মিতুকে উদ্ধার করে। পরে আদালতে জবানবন্দি শেষে মিতুকে তার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয় আদালত। কিন্তু মিতুকে নিতে তার স্বামী ও পরকীয়া প্রেমিকের পরিবার উভয়ে আদালত প্রাঙ্গণে হাজির হয়।

এসময় মিতুর দুই সন্তান মাকে তাদের সঙ্গে যেতে কান্নাকাটি শুরু করে। অন্যদিকে মিতু পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে যেতে ইচ্ছা পোষণ করে। সব মিলিয়ে সোমবার বিকালে সিনেমার গল্পকে হার মানানোর মত এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে।

পুলিশ ও আদালত সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিনের মেয়ে নাজিরা আক্তার মিতু তার স্বামী উইসুফ মিয়া ও তাদের দুই সন্তান নিয়ে ফতুল্লার ভূইগড় রূপায়ন টাউনে বসবাস করেন। এরমধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকার মৃত শামসুল হকের ছেলে এক সন্তানের জনক আবুল হোসেন সজিবের সঙ্গে পূর্ব পরিচয়ে মিতুর পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ ঘটনা সজিবের স্ত্রী সায়মা আক্তার জানতে পেরে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর গত বছরের ২৩শে আগস্ট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এতে উভয় পক্ষকে ডেকে শাসিয়ে দেন পুলিশ। এরপর গত ১৮ই এপ্রিল দুই সন্তানকে রেখে রূপায়ণ টাউনের বাসা থেকে নাজিরা আক্তার মিতু পালিয়ে যায়। পরে ২৯শে এপ্রিল ফতুল্লা মডেল থানায় জিডি করেন মিতুর স্বামী ইউসুফ মিয়া। তবে এর আগের দিন সজিবের ভাই সালাউদ্দিনও ২৮শে এপ্রিল একই থানায় আরেকটি জিডি করেন। তার জিডিতে দাবি করা হয়, তাঁর ভাই সজীবকে অপহরণ করা হয়েছে। পরে ২৬শে এপ্রিল মিতুর স্বামী ইউসুফ মিয়া বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন মিতুর পরকীয়া প্রেমিক, তার ভাইসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এই মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ ২০শে মে দুপুরে নাজিরা আক্তার মিতুকে ফতুল্লার সস্তাপুর থেকে উদ্ধার করে। ২১শে মে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রে অশোক কুমারের আদালতে নাজিরা আক্তার মিতুকে হাজির করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। আদালতে মিতু ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। মিতু তার জবানবন্দিতে আদালতকে জানান, ‘তাকে কেউ অপহরণ করেনি। সে স্বেচ্ছায় তার প্রেমিক আবুল হোসেন সজিবের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছেন। আদালতে শুনানি শেষে মিতু সাবালক, স্বাভাবিক বিবেচনায় তাকে তার নিজ জিম্মায় ছাড়া হয়। পরে মিতু আদালত থেকে বেরিয়ে জিআরও সেকশনে যান। সেখানে মিতুকে নিতে একদিকে পরকীয়া প্রেমিকের পরিবার অন্যদিকে তার দুই সন্তনসহ অন্য স্বজনরা অবস্থান নেয়। এমন পরিস্থিতে আদালত চত্বরে যখন কিছুটা জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তখন দায়িত্বরত পুলিশ উভয় পক্ষকে জিআরও সেকশন থেকে বের করে দেন। এবং মিতুকে কিছুটা নিরাপদে বাইরে বের করে দিয়ে যান।
এসময় আদালতের বাইরে মিতুকে বের করে দেয়ার পর এখানেও দু’পক্ষের টানাটানি শুরু হয় মিতুকে নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে মিতু কোন দিকে যাবে নিজেও ঠিক করতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে মিতু তার বর্তমান স্বামী আবুল হোসেন সজিবের বাড়ীতে যাওয়ার কথা বলে। এসময় কৌশলে ফতুল্লা মডেল থানার এস আই গোলাম মোস্তফা মিতুকে তার বাবা সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিনের কালো রঙের নোহা মাইক্রোবাসে একরকম জোর করে তুলে দেন। এরআগে নাজিরা আক্তার মিতু জানায়, সজিব তাকে অপহরণ করেনি। নিজ থেকে সেচ্ছায় সজিবের সঙ্গে এসেছি। সজিবকে আমি বিয়ে করেছি। আমার আগের স্বামীকে পূর্বেই তালাক দিয়েছি। মিতু আরও বলেন, আমাদের মধ্যে সম্পর্ক প্রায় তিন বছর যাবৎ। এ ঘটনা সবাই জানতেন। আমার আগের স্বামী একটা মানসিক রোগী। ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শাহ মঞ্জুর কাদের জানান, ২০শে মে মিতুকে উদ্ধারের পর সোমবার আদালতে হাজির করা হয়। পরে মিতু তার বাবার সঙ্গে বাড়িতে চলে গিয়েছে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031