ভারতের ইলিশ মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও দেশটি এর যোগান দিতে পারে না। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদার তুলনায় ইলিশ কম থাকায় অনেকেই ইলিশ মাছ ছুঁয়ে দেখতে পারেন না। এবার সেই ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে ইলিশের মতই স্বাদের মাছ চাষ শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়ায়।

স্বাদে ও গন্ধে অনেকটা ইলিশের মত হওয়ায় দক্ষিণ ভারতে এই মাছ ‘দাক্ষিণাত্যের ইলিশ’ নামে পরিচিত। আর খেতে সুস্বাদু মিল্ক ফিস হলো ফিলিপাইনের জাতীয় মাছ।

বৃহস্পতিবার চেন্নাই থেকে মিল্ক ফিশের পোনা বিমানে করে কলকাতায় আনা হয়। এরপর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে মাছের চারা হলদিয়ায় এনে চাষিদের মধ্যে বিলি করা হয়।

মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, মাছেভাতে অভ্যস্ত বাঙালির কাছে অচিরেই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে মিল্ক ফিশ। কারণ এর স্বাদ ইলিশের মতো হলেও দাম ইলিশের তুলনায় কম। তাদের দাবি, চলতি বছরেই বাজারে আসবে এই মাছ।

হলদিয়ার মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুমনকুমার সাহু বলেন, রাজ্যে প্রথম হলদিয়ায় মিল্ক ফিশ চাষ শুরু করা হচ্ছে। এদিন চারজন চাষির হাতে মাছের পোনা তুলে দেওয়া হয়েছে। এই মাছের বৈশিষ্ট্য, স্বাদ ও গন্ধ ইলিশের মতোই। আশা করছি নতুন এই মাছ বাঙালির খুব পছন্দ হবে। খবর বর্তমানের।

জানা গেছে, এই মিল্ক ফিশ মূলত প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরে দেখা যায়। এরা সর্বাধিক ১৫ বছর বাঁচে। সর্বোচ্চ ওজন হয় ১৪ কেজি। পূর্ণবয়স্ক মাছ এক মিটার থেকে দেড় মিটার দীর্ঘ হয়। এই মাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম চ্যানস চ্যানস।

তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশসহ দক্ষিণ ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় এই মাছ পাওয়া যায়। এই মাছ সমুদ্রে থাকলেও বছরের নির্দিষ্ট সময় ডিম পাড়তে নদী ও খাড়ির মিষ্টি জলে আসে। ডিম পেড়ে ফের নোনা জলে ফিরে যায়।

ভারতীয় কর্মকর্তাদের দাবি, ঝাঁক বেধে ঘোরা এই মাছের স্বাদ ও গন্ধ ইলিশের মতোই। মাছের আঁশও চকচকে ও রূপালি রঙের। সম্প্রতি চেন্নাইয়ে অবস্থিত সিবা-র (সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট অব ব্র্যাকিস ওয়াটার অ্যাকোয়া কালচার) মৎস্যবিজ্ঞানীরা এই মাছের কৃত্রিম প্রজনন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। এই মাছ হালকা নোনা ও মিষ্টি জলে চাষ করা যাবে। পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় এই মাছের চাষ সম্ভব।

পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে আতমা প্রকল্পের আর্থিক সহায়তায় মোট ৮০০০ মাছের পোনা আনা হয়। এরপর মোট চারজন চাষিকে ২০০০ করে মাছের চারা দেওয়া হয়েছে। নোনাজল কিংবা মিষ্টি জলে এই মাছ চাষ করলে পাঁচ থেকে ছ’মাসের মধ্যে ৫০০ গ্রাম ওজনের হয়ে যাবে। মাছের ওজন ৪০০ গ্রাম হলেই খাওয়া যেতে পারে।

মৎস্যচাষিরা ভেনামি, বাগদা ও গলদা চিংড়ির সঙ্গেই এই মাছের চাষ করতে পারবেন। তবে এই মাছ একেবারেই মাংসাসী নয়। এদের পছন্দের খাবার হল শ্যাওলা।

তবে ইলিশ প্রিয় বাঙালিদের মিল্ক ফিশ কতটা তৃপ্ত করতে পারবে সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031