সোমবার ভোরে সাভারের আশুলিয়ায় নরসিংহপুর বাংলাবাজার এলাকায় নূর মোহাম্মদ পালোয়ানের বাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। একে এলাকাবাসী ও নিহতের প্রতিবেশীরা বলছেন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। দিনভর গার্মেন্টে খাটুনির পর রাতের বেলা দুমুঠো খেয়ে ছোট্ট কক্ষে গাঁদাগাদি করে ঘুমিয়েছিলেন মা সেলিনা বেগম, তার ভাই টুটুল মিয়া, শিশু ছেলে সিয়াম ও সেলিম। কক্ষের পাশেই বাড়ির মালিকের পানির ট্যাংকি রাতের আঁধারে ভেঙে পড়ে তাদের ওপর। আর এর নিচে চাপা পড়েই না ফেরার দেশে চলে গেলেন মা সেলিনা ও তার সাত বছরের শিশু সিয়াম। আহত হন অপর শিশু সেলিম ও তার মামা টুটুল।

তাদের ভাষ্য, বাড়ির মালিক অধিক মুনাফার জন্য কক্ষের পাশে টয়লেটের উপর ঝুঁকিপূর্ণভাবে পানির ট্যাংক নির্মাণ করেছেন। আর কিছু দিন পূর্বে সেলিনা ও তার পরিবার ভাড়া কক্ষটি ছেড়ে দিতে চাইলেও বাড়ির ম্যানেজার সালাম অন্যায়ভাবে তিন মাসের ভাড়া দাবি করেন। আর তাই বাধ্য হয়েই তাদের ওই কক্ষেই থাকতে হয়েছিল। অথচ বাড়ির মালিক বলছে, পানির ট্যাংক ধসে মারা গেছে, কিসের অভিযোগ?

একই এলাকায় বসবাসরত অসহায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের অভিযোগ, এ ধরণের অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ পানি ও টয়লেটের ট্যাংকি নির্মাণ করে রেখেছেন এখানকার অনেক বাড়ির মালিক। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ছেন নিম্নআয়ের গার্মেন্ট শ্রমিকরা।

তারা আরও জানায়, বাড়ির মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় অসহায় ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করতে ভয় পান। এমনকি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এসব ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে চালাতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। তাদের হুমকিতে ক্ষতিগ্রস্ত  পরিবারগুলো থানায় কোনো অভিযোগ দিতে ভয় পান।

ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসরা হুমায়ন কবির জানান, টিনশেড আঁধাপাকা কক্ষের সঙ্গে কোন নিয়ম না মেনেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে ওই পানির ট্যাংকি নির্মাণ করা হয়েছিল। ইট, বালি ও সিমেন্টের অবকাঠামোটিতে অনেকদিন পানি ধরে রাখার কারণে এর গাঁথুনি দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে হঠাৎ আজ ভোরে ধসে পড়ে  নিচে চাপা পড়েন একই পরিবারের চার জন।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ধসে পড়া স্তুপের নিচ থেকে সেলিনা ও শিশু সিয়ামের লাশ উদ্ধার করা হয়। আর আহত অবস্থায় নিহতের মামা টুটুল ও শিশু সেলিমকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক জাবেদ মাসুদ (তদন্ত) জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া না গেলে এ ঘটনায় কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়। তবে হুমকির ব্যাপারে তাদের কাছে অভিযোগ আসলে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুলিশ সার্বিক সহযোগিতা দেবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031