রাজনীতিতে নেমেছিলেন  বাবার রক্তে মিশে থাকা রাজনীতির সূত্র ধরেই। ব্রত ছিল জনসেবার। কিন্তু এ পথটি যে বড়ই কণ্টকাকীর্ণ তা খুব অল্পতেই টের পেয়েছিলেন তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। আর তাই তো প্রথমে মন্ত্রিত্ব পরে জনপ্রতিনিধির তালিকা থেকে নাম কাটিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু ঠিক কী কারণে এতো অভিমান জমেছিল তরুণ প্রজন্মের এ নেতার মনে তার কিছুই খোলাসা হয়নি। হাওয়ায় নানা কথা ভেসে বেরিয়েছে।

কেউ বলছেন, নিজের মতো করে কাজ করতে পারছিলেন না বলেই তিনি স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে নির্বাসনে যান।

কেউ বলছেন, সহকর্মীদের কারও কাছ থেকে রুষ্ট আচরণে মনোকষ্ট নিয়ে রাজনীতিতে দূরে সরে যান সোহেল তাজ। অনেক দিন পর্দার আড়ালে থাকা এই নেতার সাম্প্রতিক দুটি ফেসবুক স্ট্যাটাস নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রথম স্ট্যাটাসে নতুন প্রজন্মের জন্য কিছু একটা করার ইচ্ছা পোষণ করার পর থেকে তাতে ব্যাপক লাইক কমেন্ট পড়ে। অনেকে জানতে চান কী নিয়ে আসছেন সোহেল তাজ। তিনি কী ফের রাজনীতিতে ফিরছেন নাকি অন্য কোনো উদ্যোগ নিয়ে তরুণদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন- এমন প্রশ্ন জেগেছে অনেকের মনে। সোহেল তাজের পরের স্ট্যাটাসে নতুন করে প্রশ্ন জেগেছে তার সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে। সেখানে তিনি লেখেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে আওয়ামী লীগের ভেতরে একটি কুচক্রী মহল তাজউদ্দীনের পরিবার ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে আওয়ামী রাজনীতি থেকে তাজউদ্দীন পরিবারকে সরিয়ে ফেলতে চায়। এদের প্রভাব দলের ভেতরে ও প্রশাসনের সর্বস্তরে। আমার প্রিয় কাপাসিয়াবাসীর কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা কাপাসিয়াতে কোনো অপরাজনীতি হতে দেবেন না।’ সোহেল তাজ তার ওই লেখার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দিন আহমেদের একটি ছবি পোস্ট করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাড়ে ৯ হাজার মানুষ পোস্টটিতে রিঅ্যাক্ট করেছেন।

কমেন্ট এসেছে ৮২৩টি আর শেয়ার হয়েছে হাজার বারের বেশি। এর আগে গেল ৩১শে মে আরেকটি পোস্টে সোহেল তাজ লিখেছিলেন, অনেক দিন ধরেই মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্য, বিশেষ করে দেশের যুব সমাজের জন্য ভালো কিছু করার কথা ভাবছি। এই পোস্টটিতে রিঅ?্যাক্ট করেছেন ৪২ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী। এতে মন্তব্য রয়েছে প্রায় সাত হাজার আর শেয়ার হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৩শ’ বারের বেশি। পোস্টে দেয়া মন্তব্যে রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে সোহেল তাজের ফেসবুক ফলোয়াররা তাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এমন কোনো উদ্যোগে তার পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ফেসবুকে দেয়া দুই পোস্টের বিষয়ে সোহেল তাজের সমর্থকরা নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সোহেল তাজ কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর তরুণ প্রজন্মের মাঝে তুমুল জনপ্রিয় এ নেতা রাজনীতিতে ফিরলে প্রবল প্রতাপেই ফিরতে চান। এজন্য আগে থেকেই বার্তা দিয়ে রাখছেন। অনেকে বলছেন- যাদের কারণে হতাশা নিয়ে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে গিয়েছিলেন তাদের উদ্দেশ্যেই হয়তো কোনো বার্তা দিতে চাইছেন সোহেল তাজ।

উল্লেখ্য, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের পুত্র সোহেল তাজ ২০০৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। তবে, মন্ত্রিত্ব পাওয়ার ছ’মাস পরই ৩১শে মে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্রে সোহেল তাজ বলেছিলেন, ‘মন্ত্রীর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে না পারায় আমি স্বজ্ঞানে ও স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি।’ যদিও দীর্ঘদিন তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। পরে তিনি চিঠি দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে তার পদত্যাগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির অনুরোধ করেন। পরে ২০১২ সালের ২৩শে এপ্রিল তিনি সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করেন। এরপর থেকেই রাজনীতি থেকে অনেকটা আড়ালে চলে যান সোহেল তাজ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031