আর্জেন্টিনা দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এই শহরেই বাঁচা মরার লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হয় । মস্কো থেকে চার ঘন্টার ট্রেন ভ্রমনে সবার গন্তব্য নিজনি নভোগরদ। সকাল সোয়া ৭টার হাইস্পিড ট্রেনে ওদের সঙ্গী হয়ে ১২টার মধ্যে চলে আসি স্টেডিয়ামে। উদ্দেশ্য মেসি ম্যাজিক দেখা। মেসি ম্যাজিক আর হলো কই। উল্টো ম্যাচ শেষে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়লেন বিধ্বস্ত লিওনেল মেসি।
স্পেনের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক, মরক্কোর বিপক্ষে গোল। পুরো ফুটবল বিশ্বে এখন কেবলই রোনালদো বন্দনা। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে রোনালদোর এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্সের সময়ে ঠিক উল্টো মেরুতে অবস্থান রোনালদোর চিরপ্রতিদ্বন্ধী লিওনেল মেসির। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জেতাতে পারেননি দলকে। গোল করার সুযোগও পেয়েছিলেন, কিন্তু পেনাল্টি মিস করে উল্টো দুয়োধ্বনি শুনতে হয়েছে। গতকাল নিজেকে প্রমাণের ম্যাচেও মেসিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুরো ম্যাচে দুই-চারবার আক্রমনে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। গোলে শটও নিয়েছেন দুটি। কিন্তু এফসি বার্সেলোনার মেসির মতো আগ্রাসী মনে হয়নি কখনও।
এদিন আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের একাদশে তিনটি পরিবতর্ন আনেন আর্জেন্টিনার কোচ হোসে সাম্পাওলি। অ্যাংগেল ডি মারিয়া, লুকাস বিলিয়া, মার্কোস রোহোর পরিবর্তে দলে সুযোগ পান এনজো পেরেজ, গ্যাব্রিয়েল মার্কাদো ও আকুনিয়া। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় পাওয়া একাদশের একটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে ক্রোয়েশিয়া । ক্রামারিচের বদলে একাদশে সুযোগ নেন ব্রজোভিচ। এদিন ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটেই আর্জেন্টিনাকে গোল হজমের হাত থেকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক কাবায়েরো। ইভান পেরেসিচের শট রুখে দেন তিনি। দশম মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন লিওনেল মেসি। পেরেজের কাটব্যাক অল্পের জন্য কানেক্ট করতে ব্যর্থ হন ফুটবলের এই ওয়ান্ডার বয়। পরের মিনিটে আগুয়েরোর শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার ভিদা।
আর্জেন্টিনার ডিফেন্স নিয়ে ভয় থাকে সব সময়। এ ম্যাচের তার ব্যতিক্রম ছিল না। হঠাৎ করে এলোমেলে হয়ে যেতে যায় আজেন্টিনার ডিফেন্ড লাইন। গোলরক্ষকের মাঝে দেখা দেয় আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি। যা কাটিয়ে উঠতে দায়িত্ব কাধে তুলে নেন ফরোয়ার্ডরা। বিশেষ করে আগুয়েরা, পেরেজ, মেসিকে সহায়তা করলে পরপর বেশ কয়েকটি আক্রমন শানায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ২৯তম মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও বাইরে মারেন পেরেজ। প্রথমার্ধের শেষ দিকে মানজুকিচ ওয়ান-টু-ওয়ান সুযোগ হারালে গোলবঞ্চিত হয় ক্রোয়েশিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে আবারো সেই পুরোনো চেহারায় আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক। নিজেদের অর্ধে বল ঢুকলেই তাকে নার্ভাস লাগছিলো। দর্শকদের গগনবিদারী চিৎকার মনে হয় কাবায়েরো নিতে পারছিলেন না। এতেই ওতামেন্দির ব্যাকপাস ক্লিয়ার করতে গিয়ে তুলে দেন ক্রোয়েশিয়ান ফরোয়ার্ডের পায়ে। এমন ভুল বেশ কয়েকটি করেছেন কাবায়েরো। এক গোলে পিছিয়ে পরে মেসি, আগুয়েরা চেষ্টা করেন সমতা ফেরানোর। কোচ হোসে সাম্পাওলিও হিগুয়েন, পাভন, দিবালাকে নামিয়ে আক্রমনের ধার বাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ান জমাট রক্ষনে ফাটল ধরাতে পারেননি। এ জয়ে ‘ডি’ গ্রুপ থেকে ৬ পয়েন্ট নিয়ে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করলো ক্রোয়েশিয়া।
আর্জেন্টিনা একাদশ
কাবায়েরো, ওতামেন্দি, সালভিও, মার্কাদো, তাগলিয়াফিকো, মাসেরানো, এনজো পেরেজ, আকুনিয়া, মেসি, আগুয়েরো (হিগুয়েন) ও মেজা (পাবন)।
ক্রোয়েশিয়া একাদশ
ড্যানিয়েল সুবাসিচ, ইভান স্ট্রিনিচ, ডোমাগজ ভিদা, সিমে ভ্রাসালকো, ডেজান লভরেন, মারসেলো ব্রজোভিচ, লুকা মদ্রিচ (অধিনায়ক), ইভান রাকিটিচ, আনতে রেবিক, মারিও মানজুকিচ ও ইভান পেরেসিচ।
