এখন থেকে আর বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন না কোনো সেমিনার বা ওয়ার্কশপে যোগদানের জন্য এসে কোনো বিদেশি ডাক্তার । পাশাপাশি বিদেশি ডাক্তার/নার্সদের বাংলাদেশে আগমনের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ভাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল)’র নিবন্ধন ছাড়া বিদেশি ডাক্তার/নার্স বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে বিদেশি ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ সংক্রান্ত এক নীতিমালায় এসব নিয়মের কথা বলা হয়। ‘বিদেশি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার/বিশেষায়িত নার্স আগমন সংক্রান্ত নীতিমালা–২০১৮’ শিরোনামে এ নীতিমালাটি গত ৭ আগস্ট জারি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. সাইফুল্লাহিল আজম স্বাক্ষরিত নীতিমালাটি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

‘বেসরকারি হাসপাতালে বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিশেষায়িত নার্স আগমন/নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা–২০০৯’ সংশোধন করে নতুন এ নীতিমালা জারি করলো সরকার। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরিচালিত সকল বেসরকারি হাসপাতালকে আবশ্যিকভাবে এ নীতিমালা মেনে চলতে হবে এবং জারিকৃত নতুন এ নীতিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ/ইনস্টিটিউটের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে না। এছাড়াও বিনামূল্যে অথবা জনহিতকর উদ্দেশে অনূর্ধ্ব তিন মাসের জন্য কোনো সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে আগত বিদেশি চিকিৎসক/নার্সের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে না বলেও উল্লেখ করা হয় নীতিমালায়।

বেসরকারি হাসপাতালে বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক/বিশেষায়িত নার্স আগমন/নিয়োগের বিষয়ে দিক নির্দেশনা প্রদানপূর্বক নিয়োগ নিয়মতান্ত্রিক করার উদ্দেশ্যেই মূলত এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. সাইফুল্লাহিল আজম। এছাড়া বিদেশি প্রযুক্তি, জ্ঞান ইত্যাদি হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশিয় সেবা খাতের উন্নয়ন করা, দেশের জনসাধারণের কাছে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়া এবং সহজলভ্য ও মানসম্মত করা এবং বেসরকারি হাসপাতালে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি চিকিৎসক/নার্স নিয়োগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করাও এ নীতিমালার অন্যতম উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি। এই নীতিমালার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবার বিষয়টি শৃঙ্খলায় আসবে বলেও মনে করেন এ কর্মকর্তা।

নীতিমালার প্রযোজ্য ক্ষেত্রসমূহের অংশে বলা হয়, বেসরকারি হাসপাতালে বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক/নার্স নিয়োগ ও নিয়োগের বিষয়ে অনাপত্তি প্রদান, বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক/বিশেষায়িত নার্সদের বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এবং বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল (বিএনসি) কর্তৃক অস্থায়ী নিবন্ধন এবং বেসরকারি হাসপাতালে বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিশেষায়িত নার্সগণ কর্তৃক সেবা প্রদান তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য।

বেসরকারি হাসপাতালে বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক/নার্স নিয়োগদানের পদ্ধতি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের কোন বিষয়ে কোন পর্যায়ের বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক/বিশেষায়িত নার্স প্রয়োজন সে সংক্রান্ত তালিকা প্রণয়নপূর্বক নিয়োগের পূর্বে অনাপত্তির জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে আবেদন করবেন। আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজসমূহ ও ডকুমেন্ট সংযুক্ত করতে হবে।

বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক/নার্স নিয়োগের নিমিত্ত দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় (বাংলা ও ইংরেজি) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে হবে। যার কপি ও নিয়োগপত্র আবেদনের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। তবে তিনমাসের কম সময়ের জন্য অনুমতির ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত বিধিবিধান কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে নীতিমালায়।

বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক/নার্স নিবন্ধনের জন্য আবেদনের পদ্ধতি অংশে বলা হয়, নিয়োগ প্রদানকারী বেসরকারি হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নির্ধারিত ফরম পূরণ পূবর্ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জন্য বিএমডিসি এবং বিশেষায়িত নার্সের জন্য বিএনসিতে আবেদন করবেন। আবেদন ফরমের সাথে প্রয়োজনীয় অন্যান্য ডকুমেন্টসহ প্রার্থীর নিজ দেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল ও নার্সিং কাউন্সিল কর্তৃক ইস্যুকৃত সু–প্রতিষ্ঠা সার্টিফিকেট (গুড স্ট্যান্ডিং সার্টিফিকেট) সংযুক্ত করতে হবে।

নিয়োগের শর্তাবলিতে বলা হয়, বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক/বিশেষায়িত নার্স নিয়োগের পূর্বে সংশ্লিষ্ট পদে বাংলাদেশি চিকিৎসক/নার্স নিয়োগের নিমিত্ত দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় (বাংলা ও ইংরেজি) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে হবে।

বিদেশি ডাক্তার/নার্সদের বাংলাদেশে আগমনের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ভাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। তিনমাসের অধিক সময়ের জন্য নিয়োগকৃত বিদেশি চিকিৎসক/নার্সদের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি/ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। তিনমাস বা তার কম সময়ের জন্য নিযোগকৃত বিদেশি চিকিৎসক/নার্সগণের বাংলাদেশে অবস্থানের জন্য নিরাপত্তা ছাড়পত্র ব্যতীত একবার অনুমতি নেওয়ার পর একই ধারাবাহিকতায় পুনরায় তিনমাস বা তার কম মেয়াদের জন্য নিয়োগের আবেদন করা যাবে না।

কোনো সেমিনার বা ওয়ার্কশপে যোগদানের জন্য বাংলাদেশে অবস্থানকালে কোনো বিদেশি ডাক্তার/নার্সগণ কোনো চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারবেন না। এছাড়াও বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল)’র নিবন্ধন ছাড়া কোনো বিদেশি ডাক্তার/নার্স বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারবেন না।

অস্থায়ী নিবন্ধনের মেয়াদ বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়, আবেদনের প্রেক্ষিতে বিদেশি চিকিৎসক/নার্সকে অস্থায়ী ভাবে ২ বছরের জন্য (সব শর্ত পূরণ সাপেক্ষে) নিবন্ধন দেয়া হবে। আবার মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক/নার্সের দক্ষতা সম্পর্কে বিএমডিসি/বিএনসির সুপারিশ সাপেক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ উক্ত চিকিৎসক/নার্সের বাংলাদেশে অবস্থানের মেয়াদ নীতিমালা অনুযায়ী বৃদ্ধি করবে।

কোনো বিদেশি চিকিৎসক/নার্সের বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তার সংক্রান্ত প্রশ্ন দেখা দিলে অথবা জনস্বাস্থ্য, নৈতিকতা বা জনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে তার নিবন্ধন বাতিল করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়।

Share Now
November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930