১২ বোতল ফেনসিডিল ও নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার ‘অবৈধ’ টাকাসহ আটক করেছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জেলার) সোহেল রানা বিশ্বাসকে রেলওয়ে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম থেকে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তল্লাশি চালিয়ে ভৈরব রেলওয়ে পুলিশ তাকে আটক করে।
জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক ও তার স্ত্রীর নামে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর সংক্রান্ত নথি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে সোহেল রানা বলেন, তার বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের আর কে মিশন রোড। বাবার নাম জিন্নাত আলী বিশ্বাস। চাকরির বয়স প্রায় ১৮ বছর। নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে বদলি হয়ে ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার হিসেবে যোগ দেন তিনি।
ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মজিদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি, চট্টগ্রাম থেকে একজন মাদক ব্যবসায়ী বিজয় এক্সপ্রেসে উঠেছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ ভৈরব স্টেশনে অবস্থান নেয়। বিজয় এক্সপ্রেস ১২টা ৪০ মিনিটে স্টেশনে যাত্রাবিরতি নেয়। জেলার সোহেল রানা ট্রেনের কেবিনে ছিলেন। সেখানে তল্লাশির এক পর্যায়ে তার দুটি ব্যাগ থেকে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপট (এফডিআর), ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক, বিভিন্ন ব্যাংকের ৫টি চেক বই, একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ১২ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। পরে সোহেল রানাকে আটক করে ভৈরব রেলওয়ে থানায় আনা হয়।
ওসি আরো বলেন, আটকের পর আমাদের কাছে তিনি পরিচয় দেন চট্টগ্রামের জেলার। পরবর্তীতে তার পরিচয় নিশ্চিত করে জানতে পারি উনার নাম সোহেল রানা বিশ্বাস। তিনি চট্টগ্রাম জেলা কারাগারের জেলার। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও মানিলন্ডারিং আইনে পৃথক দুটি মামলা হচ্ছে। তিনি টাকা নিয়ে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। টাকার উৎস ও গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সোহেল রানা পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পুরো টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় পাওয়া। ওই টাকার মধ্যে ৫ লাখ ছিল তার। বন্দীদের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একজন ঠিকাদার ট্রেনে ওঠার আগে তাকে দিয়ে যান। বাকি টাকা চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি পার্থ কুমার বণিক ও চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিকের।
সোহেল রানা আরো জানান, ঢাকার কাশিমপুর কারাগারে ১ নভেম্বর জেলারদের নিয়ে সম্মেলন হবে। ওই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে তিনি তিন দিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। ওই দুই কর্মকর্তা চট্টগ্রামেই থাকেন। কিন্তু গত দুই মাসের মাসোহারা তার কাছ থেকে চট্টগ্রামে গ্রহণ না করে ঢাকায় নিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। সেখানেই তার কাছ থেকে টাকা বুঝে নেবেন ওই দুই সিনিয়র কর্মকর্তা।
ভৈরব রেলওয়ে থানা পুলিশ জানায়, জেলার সোহেল রানার কাছে থাকা কর্মস্থলের পরিচয়পত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। বিষয়টি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাকে থানা হাজতে রাখা হয়েছিল। অসুস্থ বোধ করায় ভৈরব স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে তার মতো একজন সিনিয়র কর্মকর্তা প্লেনে না গিয়ে কেন ট্রেনে যাচ্ছিলেন, কেনই বা তিনি এত টাকা বহন করছিলেন, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ মানুষও বিষয়টি নিয়ে কৌতূহলী।
জেলার সোহেল রানা অভিযোগ করেছেন, তাকে ধরিয়ে দেওয়ার পেছনে চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি পার্থ কুমার বণিক ও চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিকের হাত রয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি ঘুষের টাকার লেনদেন নিয়ে কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না।
ব্যাগে পাওয়া মাদকদ্রব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্ভবত সেই ঠিকাদার টাকার সঙ্গে ব্যাগে ফেনসিডিল ঢুকিয়ে রেখে যান। ষড়যন্ত্রে ওই ঠিকাদারও অংশীদার থাকতে পারেন বলে তার ধারণা।
ওসি মজিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এর মধ্যে ১ কোটি টাকা সোহেল রানার নামে। ১ কোটি আছে স্ত্রী হুসনে আরা পপির নামে। বাকি ৫০ লাখ করা আছে শ্যালক রাকিবুল হাসানের নামে প্রিমিয়ার ব্যাংকে। চেকে দেওয়া ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ছিল সোহেল রানার নামে। চেকের টাকা উত্তোলনের তারিখ চলতি মাসের ২৮ তারিখ। জব্দ চেক বইগুলো সোনালী, প্রিমিয়ার, সাউথইস্ট, মার্কেন্টাইল ও ব্র্যাক ব্যাংকের।
এদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার প্রশান্ত কুমার জানিয়েছেন, সোহেল রানা নামের একজনের আটকের খবর পেয়েছেন তিনি। এই সোহেল রানা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার হলে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031