মাঝ আকাশে প্রায় মুখোমুখি চলে এসেছিল দু’টি যাত্রিবাহী বিমান।কয়েক মুহূর্তের ফারাক।  কিন্তু, একেবারে শেষ মুহূর্তের তৎপরতায় মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। বাঁচানো গিয়েছে কয়েকশো প্রাণ। আর গোটা ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ উঠছে ঢাকার এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর বিরুদ্ধে।

কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রে খবর, বুধবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের আকাশসীমায়। গুয়াহাটি থেকে কলকাতা আসছিল ইন্ডিগোর একটি বিমান। ঢাকা এটিসি থেকে ওই বিমানের পাইলটকে নির্দেশ দেওয়া হয় ৩৬ হাজার ফুট উপর দিয়ে উড়তে। ঠিক একই সময়ে ইন্ডিগোরই অন্য একটি বিমান চেন্নাই থেকে গুয়াহাটি যাচ্ছিল।

ঢাকা এটিসির নির্দেশে সেই বিমানের পাইলট ৩৫ হাজার ফুট উপর দিয়ে উড়ছিলেন। কিন্তু, হঠাৎ করেই ঢাকা এটিসি থেকে কলকাতাগামী বিমানের পাইলটকে ৩৫ হাজার ফুটে নেমে আসতে বলা হয়। সেই মতো ওই বিমানের পাইলট নেমে আসেন ৩৫ হাজার ফুটে।পরিস্থিতি দেখে কলকাতার এটিসি থেকে ওই বিমানের পাইলটকে সতর্ক করা হয়— একই উচ্চতায় আরও একটি বিমান এগিয়ে যাচ্ছে। যে হেতু বাংলাদেশের আকাশপথে ঘটনাটি ঘটছে, তাই কলকাতা থেকে কোনও নির্দেশ দেওয়া সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র সতর্ক করা হয়। কিন্তু, ওই পাইলটও ঢাকা এটিসিকে বিষয়টি জানাননি। ফলে একই উচ্চতায় ক্রমশই কাছাকাছি হতে থাকে ইন্ডিগোর বিমান দু’টি।ঠিক সেই সময় ট্র্যাফিক কলিশন অ্যাভয়ডেন্স সিস্টেম (টিকাস)-এর মাধ্যমে সঙ্কেত যায় দুই বিমানের পাইলটদের ককপিটে। শেষ মুহূর্তে গুয়াহাটিগামী বিমানের পাইলট ১ হাজার ফুট নীচে অর্থাৎ ৩৪ হাজার ফুট উচ্চতায় বিমান নামিয়ে আনেন। দুই বিমানের উচ্চতার ফারাক হয়ে যাওয়ায় মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়েছে।বিমান বিশেষজ্ঞেদের মতে, মাঝ আকাশে দু’টি বিমানের উচ্চতার তফাৎ থাকা উচিত কমপক্ষে ১০০০ মিটার। ওই দিন সেই ফারাক কার্যত শূন্য হয়ে গিয়েছিল। টিকাস শেষ মুহূর্তে বিপদ বার্তা না পাঠালে কী হত, তা ভেবেই শিউরে উঠছেন অনেকে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন বিশ্বের সব দেশের যাত্রিবাহী বিমানেই এই টিকাস ব্যবস্থা থাকে। মাঝ আকাশে কোনও বিমান মুখোমুখি চলে এলে টিকাস সব সময়ই আগেভাগে বার্তা পাঠিয়ে দেয় বিমানে। এমনকী সংঘর্ষ এড়াতে কোন বিমানের পাইলটকে ঠিক কত উচ্চতায় উঠতে বা নামতে হবে, সেটাও টিকাস-ই ঠিক করে দেয়।কলকাতার এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট-এর জেনারেল ম্যানেজার কল্যাণ চৌধুরী জানিয়েছেন, ঢাকা এটিসি-র অধীনে কোনও বিমান থাকলে সাধারণত কলকাতার এটিসি অফিসার সেই বিমানকে কোনও নির্দেশ দিতে পারেন না। এমনকি, ঢাকা এটিসি-কে ফোন করেও সতর্ক করা যায় না। কিন্তু, পরিস্থিতি দেখে নিয়ম ভেঙে কলকাতার অফিসার যোগাযোগ করেন পাইলটদের সঙ্গে। যদিও তাঁর কথা মতো পাইলটেরা ঢাকা এটিসি-র অফিসারকে সতর্ক করার পরেও লাভ হয়নি। ঢাকার সেই অফিসারের কথা মতো গুয়াহাটি-কলকাতা বিমানের পাইলট নেমে আসতে শুরু করেন।

আকাশে উপর-নীচে দু’টি বিমানের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব ১ হাজার ফুট রাখতে হয়। এটা আন্তর্জাতিক নিয়ম। ওই উপর-নীচের দূরত্ব ১ হাজার ফুটের কম হলেই বিমানে সতর্ক বার্তা আসে। একে ‘টিকাস’ (ট্রাফিক কলিশন অ্যাভয়ডিং সিস্টেম) বলে। এমনকি, একটি বিমানের কাছে, পাশাপাশি বা সামনা-সামনি অন্য বিমান চলে এলেও টিকাস-এ সঙ্কেত আসে।

বুধবার গুয়াহাটি-কলকাতা বিমান একটু নেমে আসার পরেই দু’টি বিমানের পাইলটই টিকাসে সতর্ক বার্তা পান। চেন্নাই-গুয়াহাটি বিমানের পাইলট বিমান নিয়ে নেমে যান ৩৪ হাজার ফুটে। কল্যাণবাবুর কথায়, ‘‘এই সময়ে দু’টি বিমানের মধ্যে দূরত্ব ছিল মাত্র দেড় মিনিটের।’’ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের রিজিওনাল এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর সূরজ প্রকাশ যাদব বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আমাদের এখানে এটিসি অফিসারেরা খুব চাপের মুখে কাজ করেন। ভুল হলে তাঁরা সমালোচিত হন। শাস্তির মুখেও পড়েন। কিন্তু, বুধবারের ঘটনায় দুর্ঘটনা এড়াতে এক অফিসার যে কাজ করেছেন, তারও সঠিক মূল্যায়ন হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। ওই অফিসারকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য দিল্লিতে সুপারিশ করা হবে।’’

সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031