টানা সপ্তম দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে তৈরি পোশাক শ্রমিকরা সাভারের আশুলিয়ায়। আজ সকালে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানার তৈরি পোশাক শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করলেও কাজ না করে কার্ড পাঞ্চ করে বের হয়ে যায়। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বাইপাইল আবদুল্লাহপুর মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এসময় পুলিশ সদস্যরা শ্রমিকদেরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট টিয়ারশেল ও জলকামান ব্যবহার করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কের বিভিন্ন শাখা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ২০ শ্রমিক আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হলে শ্রমিকরা ধীরে ধীরে চলে যায়

আশুলিয়ার  বেরন এলাকার শারমিন গ্রুপের এম ডিজাইন কারখানার এইচ আর এডমিন ম্যানেজার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের কারখানার কোন শ্রমিক বিক্ষোভ করেনি। সকালে কারখানার শ্রমিকরা শান্তভাবে ভেতরে প্রবেশ করে কাজে যোগ দেয়। কিছুক্ষণ পর বহিরাগত একটি গ্রুপ এসে আমাদের কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর চালায়। এ সময় আমরা বাধ্য হয়ে কারখানাটি ছুটি দিলে শ্রমিকরা বের হয়ে চলে যায়।

তৈরি পোশাক কারখানার এই কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, আমাদের কারখানার শ্রমিকরা শান্তি মতো কাজ করে আসছে। কিন্তু তারা দুপুরে খাবারের সময় বা কোন প্রয়োজনীয় কাজে বাইরে গেলে একটি অপরিচিত গ্রুপের লোকজন তাদের কে বিভিন্নভাবে মারধর করে এবং কারখানায় কাজ করতে নিষেধ করে। তিনি বলেন কিছু কিছু ভুঁইফোড় শ্রমিক সংগঠনের নামে একটি গ্রুপ দেশের পোশাকশিল্প কে অস্থিতিশীল করার লক্ষে পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। আমরা প্রতিদিনই শ্রমিকদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু এই সব শ্রমিকরা কারখানার বাইরে গেলে ওই সব শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে ভুল বুঝিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ এর দিকে নিয়ে যায়। যার ফলে আমরা বোঝানো সত্ত্বেও তা কোন কাজে আসছে না। এ বিষয়ে তিনি সরকার ও প্রশাসনের কাছে বিষয়টি সঠিক ভাবে অনুসন্ধান করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। তা না হলে ভবিষ্যতে তৈরি পোশাকশিল্পকে এই দেশে টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়বে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক কারখানা মালিকদের এমন অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে পোশাক শ্রমিকরা জানান, আমরা কারো প্ররোচনায় নয়, নিজেদের স্বার্থে যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছি।  সোলাইমান নামে একজন পোশাক শ্রমিক জানান, নতুন ঘোষিত মজুরি কাঠামোতে আমার বেতন বেড়েছে এক হাজার টাকার মতো এর বিপরীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে ৫০০ টাকা। অন্যদিকে একজন হেলপারের মজুরি বেড়েছে তিন হাজার টাকা। তাহলে যে শ্রমিক টি কালকে গ্রাম থেকে এসে কাজে যোগদান করেই আট হাজার টাকা মজুরি পাবে আর আমরা পাঁচ বছর ধরে কাজ করে বেতন পাচ্ছি দশ হাজার টাকা। তাই অবিলম্বে তিনি এই মজুরি বৈষম্য সংশোধনের দাবি জানান।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শেখ রেজাউল হক দিপু বলেন,  শ্রমিকরা সকালে কারখানা থেকে একযোগে বের হয়ে বাইপাইল আবদুল্লাহপুর সড়ক জিরাবো বিশ মাইল সড়কসহ বিভিন্ন শাখা সড়কে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ভাঙচুরের চেষ্টা করলে আমরা তাদেরকে প্রতিহত করি। এসময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের কিছুটা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষ থেকে টিয়ার শেল জলকামান ব্যবহার করে তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয়। এরপর তারা বিভিন্ন শাখা সড়কে অবস্থান নিলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তারা  চলে যায়। বর্তমানে শিল্প এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় অর্ধশতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিল্প এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031