নারীদের ধর্ষণকারী চক্রের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান পান পুলিশ চট্টগ্রাম নগরীতে পর পর দুটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর । এ চক্রের সাথে বন্দুক যুদ্ধে একজন নিহত হলেও অপরজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ব্যক্তি মালিকানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গাড়ী চালনায় নিয়োজিত চালকদের এ চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে সুযোগ বুঝে কৌশলে ছাত্রী, কর্মজীবি ও সুন্দরী নারীদের গাড়ীতে তুলে নিয়ে চলন্ত গাড়ীতেই ধর্ষণ করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দিত।
গতকাল রাতে নগরীতে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক সন্দেহজনক ধর্ষকের মৃত্যু হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ধর্ষণে অভিযুক্ত আরও একজনকে। পুলিশের দাবি, সোমবার গভীর রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানার মেরিনার্স রোডে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। নিহত শাহাব উদ্দিনসহ তার বন্ধুরা এক মাদরাসা ছাত্রীকে অপহরণ করে গাড়ির মধ্যে ধর্ষণ করে।
নিহত মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন (২৩) কক্সবাজারের কুতুবদিয়া থানার মৌলভী পাড়ার মধ্যম কয়রার বিল এলাকার মৃত মফজল মিয়ার ছেলে। গ্রেফতার শ্যামল দে (৩০) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া কালী পাহাড় এলাকার পশ্চিম করুশিয়া এলাকার মৃত হরি কুমার দে এর ছেলে। তারা দুজনেই পেশায় গাড়ি চালক।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জানান, গত শনিবার দিনের বেলায় নগরীর এস এস খালেদ রোড থেকে এক মাদরাসা ছাত্রীকে কৌশলে প্রাইভেট কারে তুলে নেওয় শাহাবুদ্দিন ও শ্যামল।

এরপর গাড়িটি নগরীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরিয়ে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে দুজন মিলে ধর্ষণ করে। পরে ওই ছাত্রীকে নগরীর গণি বেকারির মোড়ে নামিয়ে দেয়। ওই ছাত্রী কোতোয়ালী থানার ওসিকে এ বিষয়ে অভিযোগ করে। পরে পুলিশ তাদের ধরার জন্য ফাঁদ পাতে। সোমবার দুপুরে নগরীর সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে ওই ছাত্রীকে আবারও প্রাইভেট কারে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে দুজন। এসময় আগে থেকে সেখানে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্যরা তাদের ধাওয়া দেয়। তারা দ্রুতগতিতে প্রাইভেট কার চালিয়ে লালদিঘীর পাড়ে এসে গাড়িটি ফেলে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। তখন পুলিশ ধাওয়া দিয়ে শ্যামলকে ধরে ফেলে। রাতে শাহাবুদ্দিনকে গ্রেফতারের সময় বন্দুকযুদ্ধে তার মৃত্যু হয়।
কোতোয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) কামরুজ্জামান বলেন, শাহাবউদ্দিনের ব্যবহৃত প্রাইভেট কার (চট্টমেট্রো-গ-১৩-৪১৫১) জব্দ করা হয়েছে। ওই গাড়িটি একজন ব্যাংক কর্মকর্তার, সেটি চালাতেন শাহাবউদ্দিন। রাতে চকবাজার ডিসি রোড থেকে শ্যামলকে গ্রেপ্তারের পর ধর্ষণের ঘটনায় ব্যবহৃত অপর প্রাইভেটকারটি আটক করা হয়। ওই প্রাইভেটকারটি একজন চিকিৎসকের।
এদিকে গ্রেফতার শ্যামল পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, ঘটনার দিন সকালে সে তার মালিকের ছেলেকে কলেজে পৌঁছে দেওয়ার পর শাহাবউদ্দিন তাকে ফোন করে জামালখান এলাকায় আসতে বলে। আর আগে থেকেই সেখানে শাহাবউদ্দিন অবস্থান করছিলেন। নিহত শাহাবউদ্দিন সোমবার সন্ধ্যায় অন্য যাকে নিয়ে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তার নামও শাহাবউদ্দিন। পরিদর্শক কামরুজ্জামান জানান, তার ঠিকানাও সংগ্রহ করা হয়েছে। তাকে ধরতে অভিযান চলছে।
শাহাব উদ্দিন ও তার সহযোগীরা এর আগেও প্রাইভেট কারে তুলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানা গেছে। গ্রেফতার শ্যামল দে’র কাছ থেকে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
ওসি (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান আরো জানান, এর আগেও একটি মেয়েকে একই কায়দায় প্রাইভেট কারে তুলে ধর্ষণ করেছে শাহাব উদ্দিন ও তার সহযোগীরা। শ্যামল দে এ তথ্য আমাদের জানালেও ওই ঘটনায় সে সম্পৃক্ত ছিল না দাবি করেছে এবং ওই ঘটনার শিকার মেয়েটির পরিচয় জানেনা বলে জানিয়েছে।
আজ ২৯ জানুয়ারী দুপুর ১২টায় একসংবাদ সম্মেলনে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
