চাক্তাইসহ নগরীর বেশ কয়েকটি খাল হয়ে নগরীর বিশাল অংশের আবর্জনা গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলীতে। দখল দূষণে বিপন্ন কর্ণফুলীর বোবা কান্না থামছে না। একদিকে যেমনটি কল-কারখানার ক্যামিকেল বর্জ্য পড়ছে, অন্যদিকে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে কর্ণফুলী।
সরেজমিনে নগরীর চাক্তাই এলাকায় দেখা যায়, ভাটার সময়ে উজান থেকে আসা দূষিত পানি কর্ণফুলীতে গিয়ে মিশছে। ক্যামিকেল বর্জ্যের কারণে খালের পানি কালো রং ধারণ করেছে। পাশাপাশি পলিথিনসহ নানা আবর্জনা ভেসে গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলীতে। বর্তমানে নগরীতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে বেশকিছু খাল খনন করা হচ্ছে। চাক্তাই খালের সম্মুখ অংশও খনন করা হয়েছে ইতোমধ্যে। কিন্তু খালের উজান থেসে আসা বর্জ্য ও পলিথিনের কারণে খালের মুখ পুনরায় ভরাট হয়ে সরু হয়ে যাচ্ছে। চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির সচিব মো. ইউনুচ আজাদীকে বলেন, উজান থেকে বালি ও নানা বর্জ্য এসে খালের খননকৃত স্থানগুলো পুনরায় ভরাট করে ফেলছে। তাছাড়া লোকজন গৃহস্থালী ময়লা-আবর্জনা ফেলছে খালে। ভাটার টানে এসব আবর্জনা নদীতে গিয়ে পড়ছে। পলিথিন ও আবর্জনার কারণে পানির স্রোত বাধাগ্রস্ত হয়ে বিভিন্নস্থানে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদী গবেষকরা বলছেন, মহানগরীর ৬০ লাখ মানুষের পয়ঃবর্জ্য ও গৃহস্থালীর ১৫ থেকে ২০ কোটি লিটার দূষিত পানি পড়ছে কর্ণফুলীতে। বিশেষত নদীর পাড়ের শৌচাগারের মলমূত্র বাদেও পলিথিন এসে মিশছে নদীতে। দূষণের কারণে জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ছে, হারিয়ে গেছে কমপক্ষে ৩০ প্রজাতির মাছ।
তথ্যমতে, কর্ণফুলীকে ঘিরে ১৬ টি শিল্পজোনে ছোট বড় ৮’শ শিল্প কারখানা রয়েছে। চামড়ার আড়ত, টেক্সটাইল কারখানা, ক্যামিকেল কারখানা, মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা, সাবান কারখানা, স্টিল মিল, কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম)সহ কয়েকটি ব্যক্তি মালিকানাধীন পেপার মিল, চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি (সিইউএফএল), ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) কারখানা, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো), কোমল পানীয় কারখানা, পেইন্ট (রং) কারখানা, সিমেন্ট কারখানা সহ প্রায় ৩০০-৩৫০ কারখানা সরাসরি কর্ণফুলীকে দূষিত করছে। এসব কারখানার প্রায় ৯০ শতাংশই তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ইটিপি) ব্যবহার করে না।
তন্মধ্যে কর্ণফুলীর মারাত্মক দূষণের জন্য কেপিএম, সিইউএফএল, ওয়াসার সুয়ারেজ সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে মনে করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া মহানগরীতে ৭০ হাজার স্যানিটারি পায়খানা, ৪০ হাজার খোলা পায়খানা ও ৬’শ কসাইখানা, একহাজারের বেশি বস্তি কর্ণফুলীকে দূষণ করছে। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন আবাদি জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশকের ২৫ শতাংশ ৩০টি শাখা খালের মাধ্যমে কর্ণফুলীতে চলে আসে। সিটি কর্পোরেশনের সলিড ডাম্পিং স্টেশন থেকে বর্জ্যের নির্যাস বর্ষা মৌসুমে কর্ণফুলী নদীতে চলে আসে। তাছাড়া কর্ণফুলী নদীতে চলাচলরত ১২শ’ ছোট জাহাজ, শতাধিক অয়েল ট্যাংকার, ইঞ্জিন চালিত সাড়ে ৩ হাজার নৌকার বর্জ্য প্রতিনিয়ত কর্ণফুলীতে নিঃসৃত হচ্ছে। নদীতে চলাচলরত নৌযানের পোড়া তেল এবং দুই তীরের বিশাল এলাকার প্রায় ৬০ লাখ অধিবাসীর পয়ঃ ও গৃহস্থালির বর্জ্য গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলীতে। এছাড়াও ওয়াসার নিজস্ব সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা না থাকায় নালা ও শাখা খাল দিয়ে নগরের সুয়ারেজের লাইন মিশেছে কর্ণফুলী নদীতে।
| M | T | W | T | F | S | S |
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 |
| 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 |
| 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 |
| 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 |
| 29 | 30 | 31 | ||||
