২৭ মে : মাছ চাষ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় পদ্মা নদীর কোলে জমে থাকা পানিতে মাছ চাষ করে স্বচ্ছলতা ফিরছে ৩৫০টি মৎস্যজীবি পরিবারে। এসব জেলে পরিবারগুলো ভরা মৌসুমে পদ্মা নদীতে মাছ ধরেন। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় তারা গত দু’বছর ধরে পদ্মা নদীতে মাছ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ তাদের নানাভাবে সহায়তা করছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে পদ্মা নদী কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। নদীর আসল প্রবাহ চলে যায় ভারতীয় সীমান্তে। আর এ পারে থাকে ধু ধু বালুচর। মাঝে মাঝে গ্রাম ঘেঁষে এ পারে কিছু নিচু জায়গায় আটকে থাকে পানি। আর এ পানিতেই গত বছর থেকে শুরু হয়েছে মাছ চাষ।
উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা নাইমুল হক জানিয়েছেন, উপজেলার নিমতলা, খারিজাগাতি, চকপাড়া, মোল্লাপাড়া, পিরিজপুর ও হরিশংকরপুরসহ ৮টি এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে মাছ চাষ চলছে। মৎস্য বিভাগ জেলেদের সব ধরনের সহযোগিতা করছে। তাদের মাছের পোনা থেকে শুরু করে মাছ ধরার জালও দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। এছাড়া মাছ চাষে তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ।
তিনি আরও জানান, এসব এলাকায় ৫০-৬০ জন করে মৎস্যজীবী ব্যক্তি নিজেদের ভেতর সমবায় সমিতি গড়ে তুলে নদীর কোলে মাছ চাষ করছেন। মৎস্য অধিদপ্তরের ‘উন্মুক্ত জলাশয়ে বিল নার্সারি স্থাপন ও পোনা অবমুক্তকরণ’ প্রকল্পের আওতায় এসব জলাধারে চলতি মৌসুমে ১৬ লাখ টাকার পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। রুই, কাতল ও মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির সেসব পোনার ওজন এখন এক থেকে দেড় কেজি ওজনের মধ্যে। কোথাও কোথাও মাছ গুলো ধরে বিক্রিও শুরু করেছেন মৎস্যচাষিরা। আসছে ভরা মৌসুমের আগেই সব মাছ ধরে বিক্রি করা হবে।
প্রকল্পটির মূল্যায়ন কর্মকর্তা শিরিন শিলা জানান, গোদাগাড়ী অঞ্চলে পদ্মা শুকিয়ে গেলে জেলেরা বিপাকে পড়েন। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন কাটাতে হয় তাদের। তাই শুষ্ক মৌসুমেও যেন তাদের উপার্জনে ভাটা না পড়ে, সে লক্ষ্যে গোদাগাড়ীর ৮টি এলাকার ৩৫০ জন জেলেকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। অনগ্রসর জেলেদের উন্নয়ন ঘটানোই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যে।
তিনি আরও জানান, পদ্মাপাড়ের জেলেদের মাছ চাষে আগ্রহী করে তুলতে গত বছর থেকে এই প্রকল্পটি চালু হয়েছে। ওই বছর থেকেই জেলেদের বিনামূল্যে মাছের পোনা দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শামসুল করিম জানান, প্রকল্পের আওতায় থাকা মাছ চাষিদের নিজস্ব একটি সমবায় সমিতি আছে। সমিতির নামে একটি ব্যাংক হিসাবও খোলা আছে। মাছ বিক্রির পর তারা যে পরিমাণ অর্থ পাবেন, তার ৬০ ভাগ তারা নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নেবেন। আর অবশিষ্ট ৪০ ভাগ জমা রাখা হবে ব্যাংক হিসাবে। আগামীতে সরকারিভাবে বিনামূল্যে পোনা বিতরণ বন্ধ হয়ে পড়লেও তারা যেন তাদের সঞ্চিত টাকায় মাছের পোনা কিনতে পারেন সে জন্য এ ধরনের নিয়ম চালু করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, পদ্মায় পানি শুকিয়ে গেলে এ অঞ্চলের জেলেরা অলস সময় পার করতেন। এখন আর তারা অলস বসে থাকেন না। শুষ্ক মৌসুমে তারা মাছ চাষ করেন। আর ভরা মৌসুমে মাছ ধরেন। ফলে এখন তারা অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।
নিমতলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি দীনবন্ধু মন্ডল জানান, তার সমিতিতে মোট ৬০ জন সদস্য আছেন। মৎস্য অধিদপ্তর তাদের এই জলাশয়ে পোনা অবমুক্ত করার পর মাত্র ৯০ দিনের মধ্যেই তারা মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করতে পারেন। এই সময়ে মাছের খাবার বাবদ তাদের প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও মাছ বিক্রির পর এক এক জন সদস্যই ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা মুনাফা পান।
এই সমিতির সদস্য গোলাম রসুল জানান, এই সমিতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে গত বছর তিনি ৪০ হাজার টাকা মুনাফা পেয়েছেন। মাত্র ৩ মাসেই এই অর্থ আয় করেন তিনি। এবার তার চেয়েও বেশি মুনাফা পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, আগে নদীর পানি শুকিয়ে গেলে তাদের জীবন-জীবিকাও থমকে যেত। কাজ না থাকায় থাকতো না আয়ও। এখন আর তেমন হয় না। এখন শুষ্ক মৌসুমে মাছ চাষ করে সে দিন পাল্টেছে।