নীরবে চলছে মানবপাচার উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সমুদ্র পথে । গত ছয়মাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে যাওয়া প্রায় তিন হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের নিরাপত্তা বাহিনী। এসব কাজে রোহিঙ্গাদের একটি চক্র জড়িত বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ অবৈধভাবে সমুদ্র পথে থাইল্যান্ড হয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের জাল পাসপোর্ট নিয়ে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে পাড়ি জমান। এদের বিশাল অংশ তরুণ-তরুণী। সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ও রাখাইন থেকে কিশোরী-যুবতীদের ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া পাঠাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রোহিঙ্গাদের একটি উগ্রপন্থী গ্রুপের তত্ত্বাবধানে ক্যাম্পগুলো থেকে শত শত রোহিঙ্গা সমুদ্র পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ছাড়ছে। এ গ্রুপের নেতারা ক্যাম্প থেকে যেসব রোহিঙ্গা মালয়েশিয়ার উদ্দেশে বের হবে এবং মালয়েশিয়া যার কাছে যাবে উভয় পক্ষ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে থাকেন। কোন ক্যাম্পের কোন ব্লকে কতটি ঘর আছে এবং কোন ঘরে কতজন লোক আছে তা তাদের লোকজনের নিকট হিসেব থাকে। ক্যাম্পগুলোতে যে সকল মাঝি বা মনোনীত নেতা রয়েছেন তারাই মানবপাচারসহ সব কিছুর তদারকি করেন বলে জানা যায়।
বাংলাদেশ ও রাখাইন থেকে পাচার হয়ে যাওয়াদের স্পন্সর বা গ্রহীতা মালয়েশিয়ায় নির্দিষ্ট দালালের শরণাপন্ন হন। তখন দালাল বা রোহিঙ্গা উগ্রপন্থী লোকদের নিকট তাদের পূর্ব নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করা হলেই থাইল্যান্ডের জঙ্গল থেকে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া বর্ডার পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এক্ষেত্রে পাচারকৃত রোহিঙ্গারা যাচ্ছে স্বেচ্ছায়। এরা মালয়েশিয়ার বিভিন্ন রাবার, পাম্প অয়েল প্লান্টেশন এবং ছোট ও মাঝারি কলকারখানায় কম মজুরিতে কাজ করে।
থাইল্যান্ড পুলিশ সূত্র রয়টার্সকে জানায়, চলতি বছর এ পর্যন্ত থাই উপকূল থেকে ৯৭৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতবছর থাইল্যান্ড উপকূল থেকে উদ্ধার হয়েছিল ৬২২ জন। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ ২০ জুলাই ৬০ জনসহ চলতি বছর এক হাজারের মত রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ড চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত অন্তত সাত শতাধিক মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষকে উদ্ধার করেছে।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম তাদের মে মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানায়, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের এ পর্যন্ত তারা ৪২০টি মানবপাচারের ঘটনা উদঘাটন করেছ। এগুলোর সবই উখিয়া ও টেকনাফে। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একাধিক এনজিও কর্মী জানান, উদঘাটিত ঘটনাগুলোর চেয়ে কয়েকশ’ গুণ বেশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবপাচারের ঘটনা ঘটছে। যেগুলো উদঘাটন করতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা কমিউনিটির তেমন সহযোগিতা পাওয়া যায় না। বরং অনেকক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করে। ফলে অহরহ মানবপাচারের ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। এতে দেখা গেছে, অনেক রোহিঙ্গা কিশোরী, মহিলা জোরপূর্বক পাচারের শিকার হলেও আইনানুগ তেমন কোনো সহায়তা করা যায় না।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031