বেসরকারি হিসাবে এটা কয়েকগুণ বেশি। সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছুঁই ছুঁই।আর প্রতিদিনই আক্রান্তের সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। বৃহস্পতিবার রাতেও তানিয়া সুলতানা নামে একজন নারী চিকিৎসক মারা গেছেন। এই নিয়ে চলতি মাসেই তিনজন চিকিৎসকের প্রাণ গেল ডেঙ্গুতে। অপরদিকে রোগীর ভিড়ে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সিট না থাকায় অনেক রোগীকে ভর্তি করা যাচ্ছে না। তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
গতকাল সরজমিন দেখা গেছে, ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে একের পর এক ডেঙ্গু রোগী আসছেন। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ৫৫ জন ডেঙ্গু রোগী দেখেছেন চিকিৎসকরা। এর মধ্যে ৩০ জনকে সিট দিতে পেরেছে কতৃপক্ষ। বাকিরা অন্য হাসপাতালে গেছেন। এখানে আসা রোগীদের বেশির ভাগই মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, কামরাঙ্গীরচর, আজিমপুর এলাকার। জরুরি বিভাগে কথা হয় মোহাম্মদপুর থেকে আসা সজিব নামের এক রোগীর সঙ্গে। তিনি বলেন, তার প্রচণ্ড জ্বর। তাই সন্দেহ থেকে তিনি এসেছেন। কামরাঙ্গীরচর থেকে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে এসেছেন মোহাম্মদ ওমর। তার প্রচণ্ড জ্বর ও বমি। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক কোনো রকম একটি সিট ব্যবস্থা করে তাকে ভর্তি দিয়েছেন। হাসপাতালটির দ্বিতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, শুধু ডেঙ্গু রোগীতে ভর্তি। ওয়ার্ডের দায়িত্বরত এক নার্স জানান, শিশু ওয়ার্ডে ২৪টি সিট। এরমধ্যে ১৪জনই ডেঙ্গু রোগী। আরো কয়েক শিশু ডেঙ্গু রোগীকে অন্য ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। ওয়ার্ডে সিট খালি হলেই এখানে আনা হবে। তিনি বলেন, ৬০ শতাংশের মতো শিশু ডেঙ্গু রোগী আসছে তাদের হাসপাতালে। ওয়ার্ডে ৭ নম্বর বেডে মায়ের কোলে বসে প্রজণ্ড জ্বরের কারণে কান্না কাটি করছে শিশু সাফি। তার মা জানান, সাফির জ্বর কখনও ১০২, ১০৩ ওঠা নামা করছে। বমি বমি ভাব রয়েছে। তিন দিন ধরে সে জ্বরে ভুগছে। মোহাম্মদপুরে তাদের বাসা। শিশু ওয়ার্ডের এক নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছিল আলিফ। বয়স ৭ বছর। গত সাত দিন ধরে ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছে সে। তার প্রচণ্ড জ্বর ওঠে। দাঁতের মাড়ি ফুলে গেছে। স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। এই ওয়ার্ডের ডেঙ্গু রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মশারি দিয়েছে। প্রটেকশন আছে। ডেঙ্গু রোগী ব্যতীত অন্য রোগীর স্বজনরা এখন ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে হাসপাতালে। একই তলায় মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, ২১টি সিটের মধ্যে ১০জন রোগীই ডেঙ্গু আক্রান্ত। এই ওয়ার্ডে ১১ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রতিমা সাহা। তিনি মোহাম্মদপুর থেকে এসেছেন। গত ছয় দিন ধরে ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন। তার শুরুতেই প্রচণ্ড জ্বর ও পাতলা পায়খান হয়েছিল। প্লাটিলেট ধীরে ধীরে কমছে। হাসপাতালটির চিকিৎসক ও নার্সরা জানিয়েছেন, তারও ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ব্যাপক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। মহিলা ওয়ার্ডের একজন নার্স প্রশ্ন করে বলেন, কোন দিন কমবে ডেঙ্গু রোগী। ওয়ার্ডে আতঙ্কে থাকি।
সরকারি হিসাবে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৩৯০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি জুলাই মাসেই আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৫১৩ জন। আর এবছর আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৫৭ জন। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মারা যাওয়ার হিসাব আটজন দিলেও বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা অন্তত তিনগুণ ছাড়িয়ে যাবে। আক্রান্ত বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। ঢাকার বাইর থেকেও দিন দিন রোগী বেশি আসছে। ২৪৭ জন আক্রান্তের খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৬১জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে বর্তমানে ১৯০ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৩০ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১৬৯ জন, বারডেম হাসপাতালে ৩০ জন, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগ ১২৩ জন, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ১৮ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১৫৬ জন, বিজিবি হাসপাতালে ১৮ জন, রাজধানীর ধানমন্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৯৬ জন, ইবনে সিনা হাসপাতালে ৫৪ জন, বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে ৯০ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ৪৩ জন, গ্রীন লাইফ হাসপাতালে ১০ জন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কাকরাইলে ৮৮ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৮০ জন, খিদমা হাসপাতালে ৩২ জন, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে ১০০ জন, এ্যাপোলো হাসপাতালে ৪০ জন, আদ্ব-দীন হাসপাতালে ৪৪ জন, সালাউদ্দি হাসপাতালে ৫৫ জন, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৮ জন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৮০ জন, বিআরবি হাসপাতালে ৩০ জন, আজগর আলী হাসপাতালে ৪৯ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
| M | T | W | T | F | S | S |
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 |
| 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 |
| 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 |
| 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 |
| 29 | 30 | 31 | ||||
